শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

গাবতলীতে দুই যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:২২ পিএম, ২৩ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার


#নয়ন ও জুবায়েদ মাদক ব্যবসায় রাজী না হওয়ায় হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছে
#গোটা গাবতলী ও টাগারের পার এলাকা জুড়ে চলছে মধ্যযুগীয় তাণ্ডব


ফতুল্লা থানার গাবতলী এলাকায় মধ্যযুগীয় কায়দায় দুই যুবকের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। যুবকদ্বয়কে বাঁচাতে ফতুল্লা থানায় বার বার টেলিফোন করা সত্বেও তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। সন্ত্রাসীরা এই দুই যুবকের উপর কেবল অত্যাচার করেই ক্ষান্ত হয় নাই বরং তাদেরকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয় যুবকদের একজন ফতুল্লা থানায় সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করলেও সেই অভিযোগও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। তাই এলাকাবাসী জানিয়েছে ওই এলাকার মানুষ এখন একেবারে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ জুন রবিবার।

 
নির্মম নির্যাতনের শিকার নয়ন (২৭) অজ্ঞাত স্থান থেকে তার মোবাইল নাম্বার ০১৯১৬৭৫৭৮৪২ থেকে জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীর মনিরের সেলুনে চুলকাটার কাজ করে আসছে। কিন্তু রবিবার ওই এলাকার ডেকোরেটর মজিবরের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী শান্ত নয়নকে মাদক ব্যবসায় জরানোর কথা বলে। মাদক ব্যবসায়ী নয় তাকে বলেন তার সেলুনে রেখে ইয়াবা বিক্রি করতে হবে। এতে তাকে প্রতিদিনই বিক্রি অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ টাকার ভাগ দেয়া হবে। কিন্তু নয়ন কিছুতেই মাদক ব্যবসা করতে রাজী হন নাই।

 

নয়নের সাথে একই প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো নয়নের বন্ধু জুবায়েদ (২৭) কে। কিন্তু জুবায়েদও এই ব্যাবসায় জড়াতে রাজী হন নাই। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসায়ী শান্ত তার সাথে আরো ১০/১২ জন সন্ত্রাসীকে নিয়ে এসে তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। এবং সেলুনে তালা মেরে চাবি নিয়ে যায়। তাদেরকে একটি নির্জন ঘরে নিয়ে হাত পা বেধে নির্মমভাবে পিটানো হয়। দফায় দফায় পিটিয়ে তাদেরকে রক্তাক্ত জখম করা হয়। সন্ত্রাসীরা এ সময় দম্ভোক্তি করে এটা ফুটবলার মনিরের এলাকা। এই এলাকা তার নির্দেশে চলে। মনির হাজী সাহেবের লোক। তাই তাদের কথায় রাজী না হওয়ায় তাদেরকে মেরে ফেলার অর্ডার হয়েছে। এভাবে দফায় দফায় পিটিয়ে ওদের হাত পা বাধা অবস্থায় রেখে সন্ত্রাসীরা বাহিরে গেলে নয়ন তার প্যান্টের পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটি বের করে তার বড় বোন মরিয়মকে ফোন দিয়ে জানায়।

 

এ সময় অন্যস্থানে অবস্থানরত মরিয়ম পুলিশের জরুরী বিভাগে ৯৯৯ এ টেলিফোন করেন। এতে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে উল্টো মাদক ব্যবসায় সন্ত্রাসীরা এ দুই নিরীহ যুবককে মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে আখ্যায়িত করে। পুলিশ তাদের কথা শুনে দুই যুবককে উদ্ধার না করেই চলে যায়। পরে নয়ন আবারও তার বোনকে জানালে তার বোন আবারও ৯৯৯ এ ফোন করে বিস্তারিত জানায়। তখন ৯৯৯ থেকে ফতুল্লা থানাকে নির্দেশ দেয়া হয় অবিলম্বে দুই যুবককে যেনো উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ আবার গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে এবং খানপুর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে তাদেরকে থানায় নিয়ে একটি অভিযোগ লিখে তাদেরকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়।

 

পরে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে তার নিজেরে বাসায় ফিরলে আবারও মাদক ব্যবসায়ীরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে তাদের কাছে গিয়ে অভিযোগ না তুললে একেবারে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন তার বলে ফতুল্লা থানা পুলিশ নাকি তাদের পকেটে। পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই নাকি তারা মাদক ব্যবসা করে। তাই বাঁচতে চাইলে এখনই থানায় গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তখন অসহায় নয়ন থানায় গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন করে গাবতলী এলাকা ছেড়ে তাদের গ্রামের বাড়ি চলে যায়।


এদিকে এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় বাড়িওয়ালা শহীদের দোকান ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ বহুদিন ধরে সেলুনের ব্যবসা করে আসছে মনির। আর এই মনিরের সেলুনের কর্মচারী ছিলো নয়ন। কেবল মাত্র মাদক ব্যবসা করতে রাজী না হওয়ায় এমন অমানুষ্কি নির্যাতনের শিকার হলো নীরহ দুই যুবক। ফলে এই ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

 

প্রসঙ্গত সম্প্রতি গাবতলী এলাকায় নতুন করে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। হাজী সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর এমন নির্মম নির্যাতন চালানো হলেও হাজী সাহেব এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানেন না বলে জানা গেছে। আরো আগে থেকেই হাজী সাহেব বার বার বলে আসছেন আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কোনো এলাকায় কেউ যদি কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তাহলে তাদেরকে পুলিশে দিন। কিন্তু সন্ত্রাসীদের ভয়ঙ্কর আচরণে কেউ থানায় পর্যন্ত যেতে সাহস পাচ্ছে না। আর কেউ থানায় গেলেও কোনো ফল লাভ হয় না, বরং উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাই এখনই এ বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে পুলিশ সুপার ও র‌্যাব কর্মকর্তারা ব্যাবস্থা না নিলে ওই এলাকায় আবারও যেকোনো সময় খুনের মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এমই/জেসি