মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

কার্যাদেশ দেয়ার এক বছর পরেও বিদ্যালয়ের কাজ শুরু করেননি ঠিকাদার

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১০:০৬ পিএম, ৩ জুলাই ২০২২ রোববার

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সুপারিশে চার তলা ভবন নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে। যথারীতি দরপত্র আহ্বান করে আনুষ্ঠানিক সকল কাজ শেষ করে কার্য্যাদেশও দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করছেন না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। 

 

এতে ক্লাস রুম সংকটের কারণে নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। কক্ষ সংকটের কারণে বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরী, ওয়াশরুমসহ প্রয়োজনীয় ক্লাস করতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমন দূর্ভোগের চিত্র সিদ্ধিরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের। 

 

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তাগাদা দেয়ার পরও সংশ্লিষ্ট ঠিকদার কাজ শুরু করছেন না। এতে বরাদ্দ চলে যাওয়ার এবং এ ভবন নির্মাণ না হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীরা। বিদ্যালয়ের ভবনটি দ্রুত কাজ শুরু করার দাবি জানান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

 

১৯৯৯ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আটি ওয়াপদা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় প্রতিষ্ঠা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা এ স্কুলে। বর্তমানে ১২৯ জন ছাত্র ও ১৬২ জন ছাত্রী শিক্ষাগ্রহণ করছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাঠদান হলেও বিদ্যালয়টিতে নেই কোন বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরী ও ওয়াশরুম প্রয়োজনীয় কক্ষ। 

 

সেই প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রতি তলায় ৩ টি ক্লাস রুম সম্বলিত ৪ তলা ভবন নির্মাণের জন্য ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।এ ভবন নির্মাণার্থে যথারীতি দরপত্র আহ্বান শেষে সকল প্রক্রীয়া শেষ করে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর কার্যাদেশ দেয়া হয় মেসার্স রোবেল এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। 

 

কিন্তু কার্যাদেশ দেয়ার এক বছর মাস পরও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেননি। ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক, স্কুল ম্যনেজিং কমিটি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও আশানুরূপ কোন সাড়া পায়নি ঠিকাদারের কাছ থেকে। 

 

পরবর্তীতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চলতি সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন করেন। তবুও কাজ শুরু করেননি ঠিকাদার। এতে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীসহ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। তারা বলছেন, বরাদ্দ চলে গেলে আমাদের স্কুল ভবন নির্মিত না হলে পাঠদানে আমাদের দূর্ভোগে পড়তে হবে।

 

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রহমত উল্লাহ খান জানায়, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আমাদের স্কুলে ৪ তলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০২০-২১ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু এই কাজটা এখনো পর্যন্ত ঠিকাদার শুরু করছেন না। নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও কেন কাজ হচ্ছে না। 

 

আমি অভিযোগ দেয়ার পর নির্বাহী প্রকৌশলী এসে স্কুল পরিদর্শন করে গেছেন। ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ করার জন্য বলে গেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কংক্রিট এবং বালু রেখে গেছে। কিন্তু আর কোন কাজের অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়ার কষ্ট হচ্ছে শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে। আমাদের সিস্টেম ব্যাহত হচ্ছে।

 

স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ১০ শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা জানায়, আমি একজন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। হাতে-কলমে শেখার জন্য যে গবেষণাগার থাকার কথা, তা যথাযথ না থাকার কারণে আমরা ভাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। 

 

এছাড়া শ্রেণীকক্ষে আমাদের বসতে খুব কষ্ট হয়, পর্যাপ্ত সিট না পাওয়ার কারণে। স্কুলের বাণিজ্য বিভাগের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ জীবন জানায়, আমাদের স্কুলে ৪ তলা ভবন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভবনটা হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের লেখাপড়ার অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের স্কুলে ভবন খুব ছোট, যার কারণে শ্রেণীকক্ষ খুব কম। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রেণীকক্ষ প্রয়োজন।

 

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোবেল এন্টারপ্রাইজের মালিক ঠিকাদার মোস্তফা কামাল বলেন, কার্যাদেশে পেয়েছি এক বছর আগে। নির্মাণস্থলে একটি মিম্বরসহ কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে পারিনি। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।এসএম/জেসি