ফেন্সি রাজুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ কাশিপুরবাসী
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৫:৪১ পিএম, ৭ আগস্ট ২০২২ রোববার
# মেহেদি হত্যাকাণ্ডের পেছনেও তার হাত
# তার বিরুদ্ধে হত্যা-অস্ত্র-মাদকের ১৪ মামলা
সম্প্রতি কাশিপুর এলকায় মেহেদি হত্যকাণ্ডের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড ওমর ফারুককে শেল্টার দেন কাশিপুরের শীর্ষ মাদক কারবারি রাজু-সাজু বলে অভিযোগ উঠেছে। এই রাজু-সাজুর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের দায়ে ফতুল্লা থানায় মামলা রয়েছে। এই রাজু-সাজু চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারিসহ নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করিয়ে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
মেহেদি হত্যার আসামীদের গ্রেপ্তার না করার জন্য পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে রাজু দৌড়ঝাঁপ করছে। টাকার বিনিময়ে তারা এর আগেও হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যান তিনি । পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও লাখ লাখ টাকার মিশন নিয়ে নিজেদের রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছে।
তাই নিহত মেহেদির পরিবার থেকে অভিযোগ উঠেছে পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে অনীহা প্রকাশ করছে। আসামীরা এলাকায় দিব্বি ঘুরা-ফেরা করছে অথচ পুলিশ বলছে আসামীরা পলাতক রয়েছে কিন্তু পুলিশ চাইলে আসামীদের গ্রেপ্তার করা কোন বিষয় না। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা না হলে এখানে আরও হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানান এলাকাবাসী। সেই গ্রেপ্তার থেকে বাচঁতে আসামীরা টাকার ছড়াছড়ি করছে।
সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দেওভোগ শেষ মাথার নুর মসজিদ এলাকায় ডজন মামলার আসামি রাজু প্রধান ওরফে ফেন্সি রাজুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ফেন্সি রাজু পশ্চিম দেওভোগ প্রধান বাড়ির রিয়াজ চৌধুরীর ছেলে। হত্যা, অস্ত্র ও মাদক মামলা সহ রাজুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় রয়েছে মোট ১৪টি মামলা। তবুও রাজু পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
পশ্চিম দেওভোগ শেষ মাথা এলাকা থেকে শুরু করে বাঁশমুলি-নুর মসজিদ এলাকা পযর্ন্ত রাজুর রয়েছে বিশাল মাদকের ডিলার। রাজু ইট-বালুর ব্যবসার পাশা-পাশি চালায় বিশাল কিশোর গ্যাং বাহিনী। এলাকার কেউ রাজুর কাছ থেকে ইট-বালু না নিলে তার বাহিনী নিয়ে তাদের বাড়ি ঘরে বাধা ও হামলা দেন।
এমন কি ঐ এলাকার কেউ বাড়ি-ঘর তৈরী করলেও বাড়ির মালিকদের কাছে চাঁদা দাবী করেন রাজু প্রধান। ফেন্সি রাজু প্রধানবাড়ির ছেলে বলে এলাকার মানুষ তাকে কিছু বলতে সাহস পায়না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার উপর হামলা চালায় ফেন্সিরাজু বাহিনী।
রাজুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় যে ১৪টি মামলা রয়েছে তা হলো, ১/ ১৪ মে ২০১৭ সালের ১৯(১) ধারায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা , ২/ ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সালের ১৯(১) ধারায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা, ৩/ ১৬ নভেম্বর ২০১৬ সালের ১৯(১) ধারায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা, ৪/ ২৭ নভেম্বর ২০১৫ সালে ৪(১) ধারা দ্রুত বিচার আইনে মামলা, ৫/ ২২মার্চ ২০১৪ সালের ৩০২/৩৪ ধারা আইনে মামলা, ৬/ ১৭ অক্টোবর ২০০৮ সালের ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ ধারা আইনের মামলা, ৭/ বন্দর থানায় ৮ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে ১৯ (১) ধারায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা। এছাড়াও হাতে-নাতে মাদকসহ তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
সূত্র জানায়, মেহেদি হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় বোন মৌসুমী (২৯) বাদী হয়ে রোববার (৩১ জুলাই) আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। এই হত্যায় জড়িত সোহগকে ধরে স্থানীয় মানুষ জন পুলিশে সোপর্দ করে। গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ ফতুল্লা মডেল থানার দেওভোগ শেষ মাথার দুলাল খাঁর পুত্র ও স্থানীয় হোসিয়ারি কারখানার শ্রমিক। জানা যায়, মেহেদী হাসান ২০২১ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম দেওভোগস্থ নিহত ইমন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ও চার্জশিটভুক্ত আসামী।
মামলার সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান (২১) পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথা মিয়া পাড়াস্থ একটি হোসিয়ারী কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত ৩০ জুলাই প্রতিদিনের ন্যায় হোসিয়ারী কারখানায় কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথা মিয়া পাড়াস্থ রাকিব এর চায়ের দোকানের সামনে পৌছালে ওমর ফারুক কিশোরগ্যাং গ্রুপ তুলে নিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মেহেদী হাসানকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) নারায়ণগঞ্জ এর জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে ৩০ জুলাই জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার মেহেদী হাসানকে মৃত ঘোষণা করে।
এই ঘটনায় মেহেদির বোন মৌসুমি বাদী ফতুল্লা মডল থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে হত্যা মামলা করেন। মেহেদী হত্যাকান্ড মামলায় আসামী হলেন, ওমর ফারুক (২৭), সবুজ (৩০), আরেক আসামী রাসেল ওরফে ভাগিনা রাসেল (২১), মাইকেল (২১), সীমান্ত (২২), শান্ত ওরফে কসাই শান্ত (২১), জুব্বা (২৩), সঞ্চয় (২১) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন। আসামীদের মধ্যে সবুজ ইমন হত্যা মামলার বাদী ছিল।
ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছি। হত্যা মামলায় আসমীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে পশ্চিম দেওভোগ এলাকাবাসী জানান, দিন দিন এই এলাকায় মাদকের স্পট বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি দিন রাতে রাজু এই এলাকায় মাদক বিক্রি করে।
তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় এতোগুলো মামলা থাকার পরও কেন পুলিশ নিরব ভুমিকা পালন করছে তা আমরা বুঝতে পারছিনা। জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আমাদের দাবি অতি তাড়তাড়ি ফেন্সি রাজুকে আইনের আওতায় আনা হউক। এন.এইচ/জেসি