শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

মানুষ অসহায়

লিমন দেওয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৪:৩৯ পিএম, ৯ আগস্ট ২০২২ মঙ্গলবার

জীবন-যাপনের সব ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজকে অসহায় হয়ে পড়েছে। অভাব ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্র্ণ। মানুষের উপর আবার বেড়ে চলেছে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির চাপ। বিদ্যুৎ, অকটেন, ডিজেল, চাল, ডাল, আটা, বাসের ভাড়া সহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলভাবে বেড়েই চলেছে। ফলে সাধারণ মানুষের চালাচলে বিগ্ন ঘটছে। এই তেলের দাম বাড়ার পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুন। আর সেই আগুনে পুড়ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ তাদের এই যাত্রায় জীবনযাবন করতে অনেক কষ্টের সম্মূখীন হতে হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ এখন আর তাদের মন মতো ভালোভাবে জীবনযাবন করতে পারছে না।


এ বিষয়ে দিগুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স দয়াময় স্টোরের ম্যানেজার প্রকাশ জানান, এখন আমাদের বিক্রি অনেক কম। বাজারে ক্রেতার সংকট এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে মালামাল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আসলে ও অনেক কম আসে। এই তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম ও বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ির ভাড়া বাড়ছে তাই মালামাল আনতে পারছে না গাড়ি চালক। এখন সবারই টাকার সমস্যা তার মধ্যে আবার দাম বৃদ্ধি যারা চাকরিজীবি তাদের বেতন কিন্তু বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আমরা আশঙ্কা করছি দেশে সামনে আরো সমস্যার সম্মূখিন হতে হবে।  

 

এক গার্মেন্টর্সকর্মী রিয়াদ জানান, আমাদের বেতন অনেক কম। মাসে আট হাজার টাকা বেতন পাই যার কারণে সংসার চালাতে আমাদের হিমশিমের মুখে পরতে হচ্ছে। তার মধ্যে আবার নিত্যপূন্যের দাম বৃদ্ধি। আমাদের কি হবে এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে না। মাসে ইনকাম কম ফ্যামিলিতে লোক চারজন দুই ছেলে স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের স্কুলের বেতন ও দিতে হয়। সংসার ও চালাতে হয়। যে পরিস্থিতিতে আছি তা মুখে বলে বুঝানো অসম্ভব।

 

রিক্সা চালক হযরত জানান, খুবই কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন চলছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ইনকাম করি তা থেকে ৩০০ টাকা গাড়ি জমা দেওয়া লাগে। নিজের খরচ আছে ১০০ টাকা। বাকি থাকে ২০০ এটা দিয়ে কি বাজার করবো। আমারতো দিন আনি দিন খাই। আমাদেরতো আয় উন্নতি করার মতো কোনো দিক নাই। ২ দিন যাবৎ বেশি যাত্রী পাচ্ছি না। সব কিছুর মূল্যে কিন্তু বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু আমাদেরতো ভাড়াবৃদ্ধি পাচ্ছে না।  পাঁচ বছর যাবৎ একই ভাড়া বেশিতো চাইতে পারবো না। চাইলে মারতে চায় এখন আর ভালো ভাবে চলাচল করা সম্ভব হবে না। এখন আমাদের কি হবে এটা আল্লাহ জানেন।

 

এক মোটরসাইকেল চালক ইফতি জানান, আমি দুই লিটার করে তেল বড়ি। ১৮০ টাকা দিয়ে কিন্তু আজ দুই লিটার তেল ২৭০ টাকা দিয়ে যা কিনা তিন লিটার তেলের টাকার সমান। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমার মাসে মোটরসাইকেলে ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা খরচ রেড়েছে। কিন্তু আমার বেতনতো এখনো বাড়েনি। এই বাড়তি টাকা এখন আমি পাবো কোথায়। তার পাশাপাশি তেলে দাম বৃদ্ধি কারণে নিত্যপূন্যের দাম ও আজ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমি অপেক্ষায় আছি আমার বেতন করে বৃদ্ধি পাবে।

 

এ বিষয়ে এক ব্যবসায়ী মাহাবুব রহমান জানান,  তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এই সপ্তাহে এখনো কোনো জেলায় মালামাল বিক্রি করতে পারিনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মালবাহি ট্রাকের ভাড়া এখনো নিধার্রিত করা হয় নাই। আশা করছি দুই একদিনে মধ্যে নতুন ভাড়া নির্ধারিত করা হবে। ভাড়া অনুযায়ী মালামালে বস্তাপতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

টানবাজারের এক বোঝাই শ্রমিক জসিম জানান, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ইনকাম করি। মাঝে মাঝে পাইয়ো না। এখন আবার দ্রব্যমূল্যের যে দাম বৃদ্ধি পাইছে এটা আমাদরেন আওতার বাইরে। আমরা এটার জন্য আশাবাদি ছিলাম না। আমাদের অনেক সমস্যা হয়ে যাচ্ছে এক দিন খেয়ে একদিন না খেয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের জীবন অনেক কষ্টের হয়ে গেছে।টা

 

নবাজারের এক পিঠাওয়ালা হোসনে আরা বেগম জানান, প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি করি। আগে চাল আনতাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি এখন চাল আনা লাগে ৫০ টাকা কেজি। আমাদের ফ্যামিলি অনেক বড় আটজন আমর ছেলে মেয়েরা এখনো ছোট তারা কোনো কাজ করে না পড়াশোনা করে আবার আমার স্বামী পঙ্গু তাই। সংসারের পুরো খরচ আমারই বহন করা লাগে। জিনিসপত্রের অনেক দাম একটা আনলে আরকেটা আনতে পারি না। তেলের দাম, লারকির দাম , চালের দাম বাড়ছে আমরা অনেক সমস্যা আছি। সরকারের এইভাবে দাম বৃদ্ধি করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

 

নিতাইগঞ্জ পরশ মনির রাইস এজেন্সীর ম্যানেজার জানান, দিন যাচ্ছে চালের দাম অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোকামের থেকে আমরা খবর পেলাম তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এক সপ্তাহের মধ্যে মিনিকেট চাউল বস্তা প্রতি চার হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হবে। বেচাকেনা নাই এখন পুরো বাজার মন্দা আগে আমার ২ টা ঘর মিলিয়ে ৩৫০০ বস্তা চাউল বিক্রি করতাম এখন ১২০০ থেকে ১৩০০ বস্তা বিক্রি করতে হিমসিম খাচ্ছি আমরা। সামনে মূল্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আকাঙ্কা দেখা যাচ্ছে। আজকে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বস্তা প্রতি ৩০ টাকা আর পোলার চাউল বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০০ টাকা বস্তা প্রতি। এখন এই তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে গাড়ি আর আগের মতো চলে আনে মাল ও আনো না। মোকাম আমাদের ও মাল দিচ্ছে না। সামনে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাব দিকে যেতে পারে।

 

বন্ধন বাসের এক যাত্রী নিলয় জানান, আমি ঢাকা গুলিস্তানে একটি মার্কেটে কাজ করি নিয়মিত আমি এই বাস দিয়ে গুলিস্তান যাই ৪৫ টাকা দিয়ে আজকে সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি এই ভাড়া আরো ২০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। এখনতো আমাদের অনেক সমস্যা সম্মূখিন হতে হবে।  আসা যাওয়া ভাড়াইতো মাসে তিন হাজার নয়শত টাকা। বেতন পাই ১৫০০০ হাজার টাকা। আবার তার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি এখন কি করে যে সংসার চালাবো তা আমার বুঝে আসছে না। অনেক খারাপ পরিস্থিতি আছি সরকারের কাছে একটাই চওয়া আমাদের বেতন বাড়িয়ে যেন সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি করা হয় তা না হলে আমরা অসহায় হয়ে পরবো।

 

এ বিষয়ে এক ভ্যান চালক কাকন মণ্ডল জানান, এখন কাজ কাম নাই আবার তার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। দেশের পরিস্থিতি বেশি ভালো না। চালের দাম ৮০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বস্তা প্রতি , তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু কি হয়েছে আমাদের মজুরী আর কাজতো বাড়ে নাই। আগে নিয়মিত পাঁচটা টিপ মারতে পারতাম এখন একটা মারি অনেক সময় টিপ ও পাই না। আগে যদি নিয়মিত কামাইতাম ১০০০ টাকা এখন কমাই ৩০০ টাকা। পুরো ফ্যামিলিটাকে আমার একা চালাতে হয়। এখন আবার বড় ছেলে কয়টা টিউশনি করে তাই একটু চলতে পারতেছি। তা না হলে আমাদের কি হতো এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। আর আমাদের মনে কি ব্যাথা এটা যদি দেখাতে পারতাম তাহলে তো হতো। অনেক কষ্ট নিয়ে ডাল ভাত খেয়ে জীবন কটাচ্ছি। শুধু একটাই চিন্তা দেশের যে পরিস্থিতি ভাবিষ্যতে কি এই ডাল ভাত খেয়ে বেচে থাকতে পারবো