বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সমর্থন পাচ্ছে বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:৩১ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার


# যুবদল-ছাত্রদল-তাঁতীদল-শ্রমিকদলের মতো বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের সমর্থন পাচ্ছেন
 

নানা জটিলতার অবসান কাটিয়ে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির কমিটি। এড.সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপুুকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, নারায়ণগঞ্জে বিএনপিতে চারদশকের যে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিল সেটি  এই আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে ভেঙে দিয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। এই কমিটির মাধ্যমে শহরে বিএনপির নেতৃত্ব বিকাশে নতুনভাবে প্রাণ পাবে।

 

 

সূত্র বলছে, মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি দেয়ার পরপরই যতখানি প্রতিবাদ এসেছে তা কেবল শুধু সাবেক সাংসদ আবুল কালামের পরিবারের পক্ষ থেকে। সাবেক সাংসদ আবুল কালামের ভাই আতাউর রহমান মুকুল এবং সাবেক সাংসদ কালামের ছেলে আবুল কাউসার আশা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

 

কালাম পরিবার ঘনিষ্ঠ আরো কয়েকজন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও তা তারা করেননি। সাবেক সাংসদ কালামের ঘনিষ্ট অনেক নেতাই দাবি করেছে, বিএনপির নয়া আহবায়ক কমিটি অত্যন্ত ভালো হয়েছে।  মূলত নেতৃত্বের বাহিরে যাওয়াটাকেই তারা ইতিবাচকভাবে দেখতে পারছেননা।

 

 

তাছাড়া কমিটি নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে তা মিডিয়ায় পদত্যাগ না করে বিএনপির ফোরামে গিয়ে কাগজ কলমে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। এদিকে চলতি বছর বিএনপির নির্দেশনার বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জেলা বিএনপির আহবায়ক এমনকি বিএনপির সদস্যপদও হারান এড. তৈমূর আলম খন্দকার।

 

তাকে সহায়তা করতে গিয়ে মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ  সম্পাদক এটিএম কামালেরও একই পরিণতি হয়।  এড. তৈমূর আলম খন্দকারের ভাই নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সম্প্রতি ধর্ষণ মামলায় জামিনে বের হয়েছেন।

এরআগে মহানগর বিএনপির কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক করা হলেও সেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করে সরে যান তিনি।এরপর ধর্ষণ মামলাসহ নানা বিতর্কে খোরশেদকে যুবদলের কমিটি থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়।

 

 

তৈমূর, এটিএম কামাল, খোরশেদ বিএনপি থেকে মাইনাস হওয়ার কারণে স্বভাবতই তাদের আকড়ে ধরে বিএনপির রাজনীতি করা নেতৃবৃন্দও ব্যাকফুটে চলে যান। তবে যারা ব্যক্তি পূজা না করে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে গিয়েছেন তাদের অনেকেই এবার মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে পুরষ্কৃত হয়েছেন।



বিএনপির শক্তিশালী বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক সাংসদ আবুল কালাম পরিবারের বিএনপির রাজনীতির অতীত জৌলস এমনিতেই ক্ষয়িষ্ণু। মরহুম হাজী জালালউদ্দিনের পর আবুল কালাম যেভাবে মূল্যায়িত হয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। পরবর্তীতে সেটি উদাসীনতায় অনেকটাই মিলিয়ে গেছে।

 

 

সূত্র বলছে, মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে সাবেক সাংসদ এড. আবুল কালামকে দায়িত্ব দেয়ার আগে থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। দীর্ঘদিন তার সার্ভিস পায়নি তৃণমূল। ফলে সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও সুযোগ পেয়েছে কম।

 

তাছাড়া মহানগর বিএনপির সেই কমিটিত শীর্ষস্থানীয় অনেক ত্যাগী বিএনপি নেতাই বয়সের কারণেই হোক আর কালাম নির্ভরতার কারণে তারাও স্থবির হয়ে রয়েছিলেন। যার কারণে নেতৃত্ব দেয়ার মতো বিএনপি নেতার সংকটও দীর্ঘসময় অনুভব করেছে কেন্দ্র।

 

 

বিএনপির সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার থেকেই মহানগর বিএনপিতে এড.সাখাওয়াত হোসেন খানের নিজদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বেড়েছে। সাত খুন মামলার আইনজীবী হিসেবে দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়ানো সাখাওয়াতকে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি করা হলেও কালাম এবং এটিএম কামাল অনুসারীরা তাকে কোনঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে।

 

তবে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতকর্মীদেও নিয়ে ঠিকই সাখাওয়াত হোসেন খান তার নেতৃত্বগুন বিকশিত করেছেন। বর্তমানে কারাগারে বন্দি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের অনুসারীদের নিয়ে মহানগর বিএনপিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তিনি তৈরি করেছেন।

 

অন্যদিকে আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া আবু আল ইউসুফ খান টিপু মহানগর বিএনপির যতখানি কর্মসূচি হয়েছে তার অগ্রভাবে ছিলেন। তৃণমূলকে সংগঠিত করতে মহানগর বিএনপির হয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন টিপু। যার কারণে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে জায়গা পাওয়া সাবেক সাংসদ কালাম, তৈমূর আলম খন্দকার, এটিএম কামালের অনুসারী হলেও অনেক নেতাই এই আহবায়ক কমিটি শক্তিশালী হয়েছে বলে একবাক্যে স্বীকার করেন।

 

 

এদিকে এই আহবায়ক কমিটিকে একচ্ছত্র সমর্থন দিয়েছে মহানগর যুবদল, মহানগর ছাত্রদল, কৃষকদল, তাঁতীদল, শ্রমিকদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ। তারাও এই আহবায়ক কমিটি দিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে বিএনপি যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, আদতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি নিয়ে যারাই সমালোচনা করছেন সময়ের ব্যবধানে তা স্তিমিত হবে।

 

এছাড়া মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে পদ পাওয়া আতাউর রহমান মুকল পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন এবং বিএনপির মহানগর কমিটিতে সহসভাপতি থাকাকালীন সময়ে সরকারদলীয় নেতৃবৃন্দের ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ার অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে।

 

 


সূত্র বলছে, একসময়ে সাবেক সাংসদ কালামের ঘনিষ্টভাজন যারা এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তন্মধ্যে-

সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুগ্ম আহবায়ক এড.জাকির হোসেন, সদস্য বিএনপি নেতা হাসান আহম্মেদ, যুগ্ম আহবায়ক এড.সরকার হুমায়ুন কবির, আবদুস সবুর সেন্টু, এম.এইচ মামুন, মনির হোসেন খান, সদস্য এড.রফিক আহম্মেদ, মাকিদ মোস্তাকিম শিপলূ, রাশিদা জামাল, এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, এড. বিল্লাল হোসেন,  এড. আনিসুর রহমান মোল্লা, শহিদুল ইসলাম রিপন, এড. শরিফুল ইসলাম শিপলু, শাখাওয়াতুল ইসলাম রানা, শাহিন আহম্মেদ প্রত্যোকেই দাবি করেছেন, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে একটি গঠনমূলক এবং সুদূর প্রসারী চিন্তা নিয়েই এই আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে।

 

 

 

গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী গত একদশকের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম মহানগরে কোন কর্মসূচি সফল করা হল। আর এতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতৃবৃন্দই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 


 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,  মহানগর বিএনপির এই আহবায়ক কমিটির মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জে তৃণমূলে প্রাণ ফিরে আসতে পারে। এতোদিন আদালত অঙ্গনে সীমাবদ্ধ মহানগর বিএনপির কর্মসূচি এখন মহানগরের সম্পূর্ণ এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সমর্থ্য হবে। এন.এইচ/জেসি