শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

নারায়ণগঞ্জে একের পর এক খুন: ভীত ও সন্ত্রস্ত জনপদের বাসিন্দারা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৩৩ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

 

# আজ শীতলক্ষ্যায় পাওয়া গেলো বুয়েট ছাত্র ফারদিনের মরদেহ
 
# অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো স্বোচ্চার হওয়ার দাবি


নারায়ণগঞ্জে একই দিনে তিনটি পৃথক স্থানে তিনজন খুন হয়েছে। গতকাল সোমবার জেলার বন্দর উপজেলায় দুটি এবং রূপগঞ্জ উপজেলায় একটি খুনের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলায় ছিনতাইকারীদের হাতে এক তেল ব্যবসায়ী, বন্দর উপজেলার মুসাপুর ইউনিয়নে মানসিক ভারসাম্য ছেলের হাতে মা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর বন্দর এলাকার ২২নং ওয়ার্ডের খানবাড়ি এলাকার ভ্যান গাড়ি চালক খুন হয়েছে বলে জানা গেছে।

 


 
রূপগঞ্জে রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে রাশেদ (২৫) নামে এক চোরাই তেল ব্যবসায়ী খুন হয়। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে রাশেদের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে বিষয়টি পারিবারিকও হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও সন্দেহ করছে পুলিশ।

 

 

নিহত রাশেদ ভোলার লালমোহন উপজেলার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। রাশেদ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আধুরীয়া স্ট্যান্ডের পাশেই চোরাই তেলের ব্যবসা করতেন বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাৎক্ষনিক আটককৃতদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

 

 

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার মধ্য রাতে একদল ছিনতাইকারী রাশেদের দোকানে এসে টাকা চাইলে রাশেদ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে রূপগঞ্জের ডিকেএমসি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকা কলেজ মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) মো. আবির হোসেন জানান, গত রাতে ৪/৫ জল ব্যক্তি তার দোকানে তেল কিনতে আসে। তেল দেয়ার পর দাম নিয়ে রাশেদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পির্যায়ে তাদের মধ্যে কেউ সাথে থাকা ছুরি দিয়ে রাশেদকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।


 

 

একইদিনে বন্দর উপজেলায় মাদকাসক্ত মানসিক ভারসাম্য ছেলের ছুড়িকাঘাতে নিহত হয়েছেন মা আয়েশা বেগম (৪৫)। সোমবার গভীর রাতে ইউনিয়নের জহরপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত আয়েশা মুছাপুর ইউনিয়ন জহরপুর এলাকার রফিক মিয়ার স্ত্রী। এই ঘটনার পর পলাতক আছে খুনী সজিব।
 

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় আয়েশা বেগমের সাথে প্রায় সময়ই মাদকাসক্ত ছেলে সজিবের টাকা পয়সা নিয়ে কথা কাটাকাটি হত। সোমবার রাতে আয়েশা বেগম রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে।  তার পর ঘুমের মধ্যে তার নেশাগ্রস্ত ছেলে সজিব মা আয়েশা বেগমকে বালিশে মুখ চাপা দিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুখে ও গলায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে।

 

 

আয়েশা আক্তারের আত্মচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে ঘরে ঢুকে আয়েশা আক্তারকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। এদিকে ঘাতক সজিব মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে পাশের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ এসে মৃত আয়েশা আক্তারকে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করে।
 

 

অন্যদিকে একই উপজেলায় নিখোঁজের তিনদিন পর গতকাল সেমাবার সকালে ভ্যান চালক মাসুমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উপজেলার গণপাড়া এলাকার একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। মাসুম খুলনা জেলার সিকান্দার মিয়া ছেলে ও বন্দর আনোয়ার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া।

 

 

গত কয়েকদিন ধরে তার সৎ ভাই আসলামের সাথে মাসুমের পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল বলে পরিবারিক সূত্রে জানা যায়। বৃহস্পতিবার রাতে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরেনি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়। আজ সকালে ডোবায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে দুই জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

এই দুটি খুনের ঘটনায় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, নিহত দুইজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আয়েশা বেগম হত্যায় ধারণা করা হচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেই হত্যাকান্ডটি ঘটাতে পারে তবে ভ্যান চালক হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করে; এর সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

 



এদিকে গত একমাসে নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে চিন্তার ভাঁজ বিশিষ্টজনদের মধ্যে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সজাগ দৃষ্টি রেখে নিয়মিত অপরাধীদের; বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এন.এইচ/জেসি