মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

যানজটে নাকাল অবস্থা থেকে উদ্ধারের দাবি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:৪০ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার



# একে অপরের কাঁধে দায় চাপাচ্ছে : রফিউর রাব্বি

# মীরজুমলা দখলের দায় কার : হাজী নুরউদ্দিন

# প্রশাসনের আইন প্রয়োগ করতে হবে : এড. আওলাদ

# সকলেই ভাতা পাচ্ছেন, জনগণের কথা মনে নেই : তরিকুল সুজন



যানজট নিরসনে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে আজ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহর এখন বসবাসের অনুপযোগী এক নগর। অসহনীয় যানজটে নগরিক জীবন অতিষ্ঠ।

 

 

অপরিকল্পিত নগরায়ন, গণপরিবহন ও হকারদের সেচ্ছাচারিতা আজকের এই দূরবস্থার কারণ। মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন, যত্রতত্র এসবের পার্কিং, রাস্তার অর্ধেক হকাররা দখলে রেখে প্রতিদিন এই দুর্ভোগ তৈরী করলেও এসবের কোন প্রতিকার নেই।

 

 

জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ, সিটি কর্পোরেশন কেউই এই দুঃসহ অপরাধের দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু এরা সকলেই এই ভয়াবহ জনদুর্ভোগের দায় একে অপরের কাঁধে চাপিয়ে নিজেরা রক্ষা পেতে চাইছে।’

 

 

আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন মিয়া বলেন, “নারায়ণগঞ্জ এই শহরটি অত্যন্ত ছোট হলেও এখানে অধিক সংখ্যার জনবসতির কারণে এবং অধিক যানবাহনের কারণে আমরা প্রতিনিয়তই যানযটে আবদ্ধ হয়ে আমরা নিষ্পেষিত হচ্ছি। বন্ধুগণ আপনারা জানেন এই বঙ্গবন্ধু সড়কটি আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছে। 

 

 

৭০ বছর পূর্বে যে জনসংখ্যা ছিল নারায়ণগঞ্জে আজকে তা বেড়ে প্রায় দুইশত শতাংশ জনসংখ্যা বেড়েছে। পঞ্চাশ বছর পূর্বে স্বাধীনতার পরে এই নারায়ণগঞ্জে যেই জনসংখ্যা ছিল যেই গাড়ি ঘোড়া ছিল, আজকে তার থেকে শতভাগেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রাস্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় নাই।

 

 

আপনারা জানেন মীরজুমলা রোড বেশ কিছুদিন আন্দোলন করার পরে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন করার পরে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এটা উন্মুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার এটি যেই সেই হয়েছে। একটি গাড়িও সেখান দিয়ে চলতে পারে না দুইদিকেই সমস্ত তরকারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু পেয়াজের দোকান।

 

 

আজকে আপনার মীরজুমলা রোড এবং এই শায়েস্তা খাঁন সড়কের দুই দিকে পণ্য বসিয়ে আজকে ব্যবসা করছে। কিন্তু এখান থেকে মানুষ এবং যান চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে দেখার জন্য কেউ নাই। ১ নং রেলগেট থেকে নিউ মেট্রো সিনেমা হল পর্যন্ত সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কটি আজকে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে হকাররা বসে।

 

 

মানুষ সাধারণ যানবাহন এমনকি সাধারণ পথিকও সেখানে চলাচল করতে পারে না। সেখানে দুইটি বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, অপরটি নারায়ণগঞ্জ কলেজ। অথচ কর্তৃপক্ষ অনেকে বলেছেন, আমাদের নির্বাচিত মেয়র আছেন, নির্বাচিত এমপি আছেন, আমাদের এসপি আছেন, আমাদের  জেলা প্রশাসক আছেন।

 

 

আমি মনে করি উনারা থাকতেও কেউ নেই বলে আমি মনে করি। কারণ হচ্ছে যদি এসপি হারুনুর রশীদ সাহেব রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে পারেন। তাহলে আপনি যিনি নতুন এসপি হয়ে এসেছেন, আপনি কেন পারছেন না?”

 



তিনি আরো বলেন, যদি হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন বেশ ভালো কথা, কিন্তু রাস্তা উন্মুক্ত করতে হবে। মন্ডলপাড়ার পুল পাড় হলে ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে রাস্তাগুলি দখল করে, কারা যানজটের সৃষ্টি করেছে, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিন। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠকের পক্ষ থেকে প্রশাসক এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং ঊধ্বর্তন মহলে আমরা দাবী জানিয়েছি।

 


ন্যাপ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন বলেন, “রাউন্ড টেবিল মিটিং দিয়ে এই যানজট নিরসন হবে না। এখানে সম্বনয় হবে না। শীতল বাসের মালিক এমপি, মৌমিতা বাসের মালিক পুলিশের স্ত্রী। এসপি সাহেব সেখানে জিম্মি। মাঝ পথ অনেকে চাঁদাবাজি করে। সোজা আঙ্গুলে এখানে ঘি উঠবে না। এই যানজটের নিরসনের জন্য এসপি একাই যথেষ্ট।

 

 

চাষাঢ়া রাস্তার উপরে ৪টি অবৈধ বাস স্ট্যান্ড। কোন ট্রাফিক আইনে আছে কিনা এসপি সাহেব খুব ভালো করে জানে। এসপি সাহেব না দেখার ভান করে; পুলিশ পাহাড়ায় উনি চাষাঢ়া দিয়ে বেড়িয়ে যায়। জনপ্রতিনিধিরা বাসের ব্যবসা করে। এখানে এসপি একাই যথেষ্ট উনাকে বাধ্য করার জন্য যে কর্মসূচি দেওয়া দরকার সেই কর্মসূচি দিতে হবে।” 

 

 

“এসপি সাহেব যদি আইন মানেন উনি যদি অঙ্গিকারবদ্ধ হন দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যতটুকু দায়িত্ব আছে ততটুকু পালন করুন।”

 



গণসংহতি আন্দোলনের নারাযণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, “যে নগরে আমরা বসবাস করি সেই নগরে নাগরিকের মর্যাদা কী। কোন মর্যাদা নাই যদি নাগরীকের মর্যাদা না থাকে তাহলে সেই নগর কি করে নাগরিকের হয়ে উঠবে। যতগুলো বিল্ডিং তৈরি হলো তার কোনটাতে তারা পাকিংয়ের স্পেস রেখেছে? 

 

 

প্রশাসন প্রায় বলেন যে পাকিং করা যাবে না রাস্তার দুপাশ ধরে অযশ্য গাড়ি পাকিং করা আছে। এমনকি মানুষজন সেই ফুটপাত দিয়ে হাঁটবে। সেখানে আমরা দেখি হুন্ডা পার্কিং করা থাকে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোড়ে মোড়ে আমরা দেখি স্ট্যান্ড করে রাখা হয়েছে। টাকা উঠাচ্ছেন নানান জায়গা থেকে টাকা খাচ্ছেন; বকরা খাচ্ছেন, চাঁদা খাচ্ছেন, সকলেই ভাতা পাচ্ছেন।”

 

 

“কিন্তু নাগরিকের সুযোগ সুবিধার দিকে কারো নজর নেই। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, “শহরের মোড়ে মোড়ে বাস কাউন্টার স্ট্যান্ড এগুলো বন্ধ করতে হবে। চাষাঢ়া গোলচত্ত্বরের আশে পাশে যারা স্ট্যান্ড করে আছে কিংবা এখানটাই বাস থামিয়ে যত্রতত্র জায়গা থেকে লোক উঠাচ্ছে। যারা চাঁদা খেয়ে বকরা খেয়ে নারায়ণগঞ্জ স্ট্যান্ড দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

যেই সমস্ত পরিবহনের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিআরটিএ যেখান থেকে লাইসেন্স দেয় তারাও দুই নাম্বারী করে। যোগসাজশ করে তারা অবৈধ লাইসেন্স বা লাইসেন্স বিহীন গাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরে চলছে। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গাকে দখল করে সেখানে বাসের ডিপো খুলেন; প্রশাসন ব্যাবস্থা নেয় না কেন।

 

আমরা প্রায় সময় দেখি নারায়ণগঞ্জে ফুটপাত থেকে পুলিশ চাঁদা উঠায়। আমরা মনে করি যে সমস্ত কৃতপক্ষ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কিনা। তারা যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতো তাহলে আর নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজটে নাকাল হয়ে থাকতো না।”

 

 

সংগঠনের সভাপতি এড. এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি মোঃ নূরুদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড আওলাদ হোসেন, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, খেলাঘর জেলা সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ মহসিন ও সামাজিক আন্দোলন জেলা সংগঠন সেলিম ভূইয়া।  এন.এইচ/জেসি