শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

দায়িত্ব নিয়েই গিয়াসউদ্দিন-খোকনের চমক

রাকিবুল ইসলাম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২২ বুধবার


# ১০ ডিসেম্বর দেশ রক্ষার সমাবেশ: খোকন


কথায় আছে জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক রাকিবুল ইসলাম ভালো। অর্থাৎ একজন মানুষের জন্ম যে কোন স্থানে বা যে কোন জায়গায় কিংবা পরিবারে হতে পারে। কিন্তু সেই মানুষটি তার কর্মের মাধ্যমে; পরিচিত হয়ে উঠে। 

 

জেলা বিএনপিতে এর আগে অনেকে দায়িত্ব পেয়েছে, কিন্তু তারা সঠিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে না পারায়; ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের সরে যেতে হয়। তাদের নেতৃত্বের প্রতিফলন রাজনৈতিক ময়দানে ঘটাতে না পারায়; সময়ের পথ পরিক্রমায় দেখা যায়, তারা দলের পদে থাকলেও নেতৃত্বে নেই।

 

 

তবে এবার জেলা বিএনপি নতুন কমিটিতে যোগ্য কান্ডারীর হাতে দায়িত্ব পড়ায়; জেলা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিষশ্লেকরা। সেই সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও তাদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।

 

 

ক্ষমতাসীন দলও তাদের প্রতিহত করার হুঙ্কার দিচ্ছে। বিএনপি হামলা মামলায় এমনিতেই র্জজরিত হয়ে তাতে আর তারা কর্ণপাত করছে না।  

 

 

এদিকে দেশে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী দল নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব পদে দায়িত্বে এসেছেন গোলাম ফারুক খোকন।

 

 

তার দুজনেই দক্ষ সংগঠক হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত। এর আগে সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ক্ষমতাসীন দলের দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। 

 

 

২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়ে বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। ২০০১ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধরগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

 

এমন একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের সাথে তার প্রধান সহযোগি হিসেবে রয়েছেন; জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকন। তিনিও তার দক্ষ নেতৃত্বে কারণে অল্প সময়ে জেলার সদস্য সচিব পদে চলে এসেছেন।

 

 

তবে সবচেয় চমকে দেয়ার বিষয় হলো, তারা দায়িত্ব পাওয়ার ১৫ দিন পার না হতেই নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেস ক্লাবের সামনে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে শহরের রাজপথ সরগরম করেছেন। সেই সাথে শহরর রাস্তা ঘাটও মিছিলের মাধ্যমে জনসমাগম ঘটিয়ে জেলা বিএনপির দখলে রেখেছেন। 

 

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুপর ৩ টার পর থেকে জেলার বিভিন্ন থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল আসতে থাকে চাষাঢ়া বালুর মাঠে। মিছিলে মিছিলে ভরপুর হয়ে উঠে চাষাঢ়ার আশ পাশের রাস্তা। লোকে লোকরন্য চারিদিক।

 

 

এতো লোকের সমাগম দেখে রাজনৈতিক বোদ্ধমহলের মাঝে ব্যপক আলোচনা তৈরী হয়। আবার কেউ কেউ বলেন গিয়াস-খোকন জেলা বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পরেই প্রথম সভা করছে শহরের কেন্দ্রস্থল নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে।

 

 

তবে তাদের নেতৃত্বে এর আগে সভা হলেও তখন তারা জেলা বিএনপির দায়িত্বে ছিলেন না। গতকাল ব্রাক্ষনবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছাত্র দলের সহ-সভাপতি নয়ণ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সভা ও মিছিল করেন।

 

 

নেতা-কর্মীদের ভাষ্যমতে এই সভা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গিয়াস-খোকন যে দক্ষ নেতৃত্ব দিতে পারে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তাদের সাথে সহযোগী সংগঠন গুলোও প্রতিবাদ সভায় বাস্তবায়নে ব্যপক ভূমিকা পালন করেছে।  

 

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান বিরোধীদল বিএনপির এই বছরের শুরু থেকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সহ নারায়ণগঞ্জের শাওন হত্যা নিয়ে শহরের চাষাঢ়ায় একাধিক সভা হয় ফলে দিন দিন সাংগঠনিক ভাবেও শক্তিশালী হচ্ছে বিএনপি।

 

 

সূত্র জানায়, সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর একটি ছক এঁকেছে বিএনপি এবং সেই ছককে সামনে রেখে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে বিএনপি।

 

 

অবশ্য, সরকারও এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হুঙ্কার দিচ্ছে। সেই সাথে খালেদা জিয়াকে পুনরায় জেলে পাঠানোর হুমকিও দেয়া হচ্ছে।

 

 

কিন্তু সরকারের এই কৌশলটা অনেক পুরানো মনে করছেন। পুরানো কৌশল আদৌ এবার আর তেমন একটা কাজে দেবে বলে মনে করছেন না, রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, বিএনপি এখন অনেক কৌশলী।

 

 

দীর্ঘদিন থেকেই তারা চূড়ান্ত একটি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সেই প্রস্তুতি এবার চূড়ান্ত হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী রূপ নিয়ে মাঠে নেমছে।

 

 

ঢাকা বিভাগীয় মহা সমাবেশে সকল জেলার থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি লোকের সমাগম দেখাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নেতা কর্মীরা। তারই কিছু প্রতফিলন ঘটেছে গতকালকের প্রতিবাদ সভায়।

 

 

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বসে নেই। তারাও বিএনপিকে প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে; সেই সাথে বিএনপিকে হুঙ্কার দিচ্ছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল বন্দরের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, “আমেরিকার প্রতিবেদন প্রমাণ করেছে তারেক জিয়া অর্থ পাচারকারী। তাছাড়া শান্তিপ্রিয় নারায়ণগঞ্জকে যারা অশান্ত করতে চায় তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না; তাদের আমরা শক্ত হাতে দমন করবো।

 

 

কাঁচপুরে কারা বিশৃংখলা করেছে আমরা জানি। এরা জামাত বিএনপির চ্যালা চামুন্ডা। আগামীতে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবে।”

 

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দিন বলেন, “দেশের ক্রান্তিকালে দেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান। গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছে তারই পুত্র তারেক রহমান।

 

 

আমরা বিশ্বাস করি তিনি বীরের বেশে দেশে ফিরে আসবেন। আজকে বিএনপি মানুষের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। মানুষের কল্যাণে কাজ করার যে অনুপ্রেরনা দিয়ে গেছে তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

 

 

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সুষ্ঠ ধারার মাধ্যমে শান্তিপুর্ণ পরিবেশে রাজনীতি করতে। আমি সকল দলকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আসুন আমরা অতীতকে ভুলে গিয়ে গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করি। হুমকি ধমকি দিয়ে কখনো মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না।

 

 

জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হলে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। আমরা নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠ ধারার রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্ঠি করতে চাই। ক্ষমতাসীন দল রাজনীতির মাঠে আমাদের মোকাবেলা করতে না পেরে তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করছে।

 

 

বিএনপি নেতা কর্মীদের মামলা হামলা দিয়ে তারা টিকে থাকতে চায়। রাজনীতিকে আপনারা রাজনীতির মাঠে নেমে প্রতিহত করুন। প্রশসনের যারা আছেন তারা মনে রাখবেন আপনারা জনগণের প্রশাসন। কোন ব্যক্তি বিশেষ বা দলের নয়। কোন শাসক গোষ্ঠির হুকুমের হয়ে কাজ করবেন না।

 

 

সরকারি দপ্তরগুলোকে রাজনৈতিক প্রচার কেন্দ্র বানাবেন না। আমরা ত্যাগী নেতৃবৃন্দকে মুল্যায়ন করে কমিটিতে পদায়ন করবো। যারা চেয়ার দখল করে আছেন তারা চেয়ার ছেড়ে দিবেন। ছবি তোলা নিয়ে কোন ধাক্কা ধাক্কি বা মারা মারি করা যাবে না।

 

 

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহা সমাবেশকে বাঞ্চাল করার জন্য নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা ঢাকার মহাসমাবেশকে সফল করবো।”

 

 

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমি নিজেকে এখনো শহীদ জিয়ার আদর্শের কর্মী মনে করি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে যোগ্য মনে করে দলে দায়িত্ব দিয়েছেন। জেলা বিএনপিতে নতুন কমিটি পেয়ে নেতা কর্মীরাও উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। আমাদের সাথে যারা আছে তারাও পরিশ্রমী।

 

 

ইতোমধ্যে জেলা বিএনপিতে শৃংখলা ফিরে এসেছে। তার  প্রমাণ পেয়েছেন গতকালের প্রতিবাদ সভায়। এখানে ছবি তোলা নিয়ে কোন পারাপারি হয় নাই। আমরা চাচ্ছি দলের মাঝে সু-শিক্ষিত কর্মী গড়ে তুলতে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহা সমাবেশ দেশ রক্ষার সমাবেশ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সমাবেশ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ।

 

 

এই মহা সমাবেশকে সফল করার জন্য জনগণও নিজ উদ্যোগে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাই আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তত্তাবধায়ক সরকারে অধীনে হলে; এই ফাসিবাদী সরকার টিকে থাকতে পারবে না।”

 

 

সব কিছু মিলিয়ে সচেতন মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল মনে করেন, বিএনপির জাগরণ দেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অনেকটা হতবাক হয়ে আছে। কেননা বিএনপি যে দিকেই সমাবেশ করছে সেদিকেই মানুষের ঢল নামছে।

 

 

কোন বাধা দিয়ে মানুষকে আটকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তবে ১০ ডিসেম্বরের পর কি হবে তা নিয়ে রাজনীতি অঙ্গনে জল্পনা কল্পনা চলছে। সেই দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুক্তিকামী, গণতন্ত্রকামী মানুষ। এন.এইচ/জেসি