শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

মেসির জয়ে চাষাঢ়া যেন এক টুকরো আর্জেন্টিনা

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:০৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

 

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ফাইনাল খেলা শেষে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে হাজার হাজার আর্জেন্টিনার সমর্থকদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সকলের হাতে আর্জেন্টিনার পতাকা, গায়ে সাদা-নীল রং এর জার্সি দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন বাংলাদেশের ভেতর এক টুকরো আর্জেন্টিনা।

 

 

শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরেই নয় শহরের বাইরেও বিভিন্ন অলিগলিতে সারা রাত অবধি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব পালন করতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। পুরো নারায়ণগঞ্জ শহর ১৮ তারিখের ফাইনাল খেলা শেষ থেকে শুরু করে সারা রাত উদযাপন করেছে এবারের শিরোপাজয়ী মেসিদের জয়।

 

 

রোববার রাতে কাতারের রাজধানী দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ইতিহাসের অন্যতম রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বসেরার মুকুট জিতেছে আলবিসেলেস্তারা।

 

 

রোমাঞ্চেভরা ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও হয়নি। হয়নি অতিরিক্ত সময়ে এগিয়েও। মেসির জোড়া গোলে লিড ধরে রাখতে পারেনি আর্জেন্টিনা। কিলিয়ান এমবাপের হ্যাটট্রিকে বারবার লড়াইয়ে ফিরে আসে ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হয় ম্যাচের ভাগ্য।

 

 

যেখানে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের দুর্দান্ত গোলকিপিংয়ে সেই রোমাঞ্চ জিতে অবশেষে শিরোপায় চুমু দেন মেসি। এরপর থেকেই চলছে সোস্যাল মিডিয়ায় নেটিজনদের অভিনন্দনের বার্তা। যারা অন্য দল করেছেন তারাও আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন দিতে ভুল করেননি। এমনকি সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিবীদ কেউ বাদ পড়েননি এ অভিনন্দন দিতে।

 

 

রোববার চাষাঢ়ায় আর্জেন্টিনার সমর্থক আসিফ নামের একজন যুগের চিন্তাকে বলেন, আবারো প্রমাণিত হয়ে গেলো মেসিই সেরা। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। হাসান নামের একজন বলেছিলেন, অভিনন্দন মেসি। আজ মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশ জিতে গেছে। ফুটবল ফিরে পেলো তার আসল সৌন্দর্য। একজন লিজেন্ড পেল তার যোগ্য সম্মান। অনেক দিন পরে বাংলাদেশের মানুষ মন খুলে হাসছে।

 

 

ব্রাজিল সমর্থক সাঈদ বলেছেন, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলেও একটি অসাধারণ ফাইনাল ম্যাচ উপহার দেয়ার জন্য ফ্রান্সকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ দিতে চাই কিলিয়ান এমবাপেকে, একজন খেলোয়াড়কে তার দেশের জন্য যা কিছু করা সম্ভব তার পুরোটাই তিনি করেছেন।

 

 

অভিনন্দন আর্জেন্টিনা, অভিনন্দন মেসি। সফিকুল নামের একজন বলেন, সর্বকালের সর্ব সেরা খেলোয়াড় মেসি। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। শিহাব নামের আরেকজন বলেন, ছত্রিশের মেসির হাত ধরে আটত্রিশের অপেক্ষার রূপকথা লিখলো আর্জেন্টিনা। অভিনন্দন প্রিয় দল আর্জেন্টিনা।

 

 

পঞ্চবটী মোড়ে সাকিব নামের একজন বলেন, ফুটবল জগতের সম্রাট লিওনেল মেসি, ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে তুমি। অভিনন্দন প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। বিসিক শিল্পাঞ্চলের তামিম বলেন, সৌদির কাছে হোচট খাওয়া মেসি এখন বিশ্ব সেরাদের একজন, এটাই মেসির জাদু। অভিনন্দন মেসি, অভিনন্দন আর্জেন্টিনা।

 

 

গার্মেন্টস শ্রমিক মাহাথির বলেন, বিশ্বসেরা আর্জেন্টিনা গোল-কিপার মার্টিনেজ। তুমিও মেসির মতোই বেঁচে থাকবে বিশ্বভক্ত ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে। মেসির কোনো তুলনা নাই । অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। শিউলি নামের আরেকজন আর্জেন্টিনার সমর্থক বলেন, হারলেও আর্জেন্টিনা, জিতলেও আর্জেন্টিনা। অভিনন্দন মেসি।

 



৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। এদিকে চারটি বিশ্বকাপ খেলেও দেশকে শিরোপা জেতাতে পারেননি দলটির সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি। এমন পরিসংখ্যান নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন মেসি।

 

 

মরুর বুকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অঘটনের হারের পরও ফাইনালে উঠে আর্জেন্টিনা। যেখানে তারা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত করে সব আক্ষেপ পূরণ করলেন মেসি ও আর্জেন্টিনা দল। লিওনেল মেসির হাতে ওঠেছে পরম আরাধ্য সোনালি ট্রফিটা।

 

 

আকাশী-সাদা জার্সিতে বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে নিজেকেও আত্মতৃপ্তি দিয়েছেন মেসি। ডিয়েগো ম্যারাডোনা ৩৬ বছর আগে আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। সঙ্গে ছিলেন হোর্হে বুরুচাগা, অস্কার রুগেরি, সের্হিও বাতিস্তা, হোর্হে ভালদানো, নেরি পম্পিডুরা।

 

 

সেই বিশ্বকাপের পর ম্যারাডোনার সঙ্গে আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন ক্লদিও ক্যানিজিয়া, সের্হিও গয়কোচিয়া, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, দিয়েগো সিমেওনেরা। এরপর এসেছেন আরিয়েল ওর্তেগা, ডিয়েগো সিমিওনে, হার্নান ক্রেসপো, ক্লদিও লোপেজ, রবার্তো আয়ালা, হাভিয়ের জেনেত্তি, রবার্তো সেনসিনি, হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন, মার্সেলো গায়ার্দো, পাবলো আইমার, হুয়ান পাবলো সোরিনরা।

 

 

কিন্তু ম্যারাডোনার কীর্তির আর পুনরাবৃত্তি হয়নি। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের পর কেটে গেছে ৩৬ বছর। বাতিস্তুতা, ক্রেসপো, ভেরন, আইমার, সিমিওনে, সোরিন, ওর্তেগারা খেলেছেন বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপ। প্রতিবারই শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে আর্জেন্টিনা, কিন্তু সফল হয়নি।

 

 

এমনকি লিওনেল মেসিও এক এক করে চারটি বিশ্বকাপ খেলেও ব্যর্থ। বিশ্বকাপটা যেন অভিশপ্ত এক বিষয়েই পরিণত হয়েছিল আর্জেন্টিনার জন্য। কত পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর চেষ্টা নিমেষেই পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। সেই বিশ্বকাপটাই অবশেষে মেসির হাত দিয়ে আর্জেন্টিনা পেল তিন যুগ পেরিয়ে।

 

 

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও মেসি ও নেইমারের মধ্যে বন্ধুত্ব খুবই ভালো। ক্লাব ক্যারিয়ারে একসাথে খেলার কারণে তাদের মধ্যে সখ্যতাও অনেক। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে দুজনে মিলে জিতেছেন অনেক শিরোপা। এরপর এখন ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজির হয়ে দুজনে মিলে জুটি গড়ে মাঠ মাতাচ্ছেন তারা।

 

 

তাদের বন্ধুত্বের আরও সুন্দর দিকটি দেখতে পাওয়া যায় গত কোপা আমেরিকার ফাইনালে। সেবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ব্রাজিলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনা। কিন্তু হেরেও কান্না বিজড়িত চেহারায় মেসিকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন নেইমার। যা তাদের ভক্ত সমর্থকদের মনে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছিল।

 

 

এবারও বন্ধু নেইমারের কাছ থেকে অভিনন্দন পেলেন মেসি। ফলে নিশ্চয়ই মেসি ক্লাবে ফিরে নেইমারের এই অভিনন্দনের ধন্যবাদ জানাবেন। এখন অন্তত শিরোপা জয়ের উৎসব করুক সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার।