বুধবার   ০১ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জমজমাট বাণিজ্য মেলা; নানাভাবে লাভবান স্থানীয়রা

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:৫৫ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার



বিগত দিনে শীতের আবহ আর যানজটের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২৩ জানুয়ারি সোমবার দিনভর মেলায় ছিলো পর্যাপ্ত দর্শনার্থীদের আনাগোনা। তবে রাজধানী থেকে আসা বাণিজ্য মেলার দর্শনার্থীদের পরিবহনের যান বিআরটিসি ও স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা ওয়ালাদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ ।

 

 

এদিকে মেলার আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষের সরাসরি মেলা থেকে নানাভাবে লাভবান হয়েছেন।  কেউ ঘর ভাড়া দিয়ে,কেউ পরিবহণ থেকে, আবার কেউ কেউ সরাসরি ব্যবসা বাণিজ্যে। শুধু তাই নয়, এবার মেলার প্রবেশদ্বার ইজারাদার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রূপগঞ্জের আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ। পাশাপাশি মেলার দায়িত্ব পালন করে ১৭৫জন স্বেচ্ছাসেবী।

 

 

যারা তরুণ বয়সে কর্ম পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।  ২৩ জানুয়ারি সোমবার দিনব্যাপি বেচাকেনাও হয়েছে বেশি। মেলার অভ্যন্তরীণ প্যাভিলিয়ন ও সল্টগুলো ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। ব্লেজার বিক্রেতারা তাদের ব্লেজারে সর্বনিম্ন মুল্য নির্ধারণ করেছেন। এতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে ক্রেতারা।

 

 

তাছাড়া শীতের কাপড়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়। ফলে বেড়েছে বেচাকেনা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। সূত্র জানায়, শেরে বাংলা নগরের পর স্থায়ী প্যাভিলিয়নে ২য় বারের এ আসরেও রূপগঞ্জ উপজেলার লোকজন বেশি সুবিধা ভোগ করছেন।  

 

 

মেলায় আয়োজকদের সব রকম সহায়তা দিতে এ প্যাভিলিয়ন নির্মাণ সময় থেকে প্রথমে শ্রমিক হয়ে, পড়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অংশীদার হয়ে সরাসরি সুবিধা পেয়েছেন স্থানীয়রা। সূত্র জানায়, মেলায় ৩ শতাধিক স্টল আর এসব স্টলের ১০ হাজার ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা প্রতিদিন কাজ করছেন।

 

 

তাদের কাজের প্রয়োজনে আবাসিক ব্যবস্থা নিতে আশপাশের ১০ গ্রামে ঘর ভাড়া নেন। এতে স্থানীয় বাড়ি মালিকরা ঘর ভাড়া পেয়ে কিছুটা আয় করতে পারছেন। অন্যদিকে তাদের খাবার ব্যবস্থায় নতুন করে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আবার পরিবহন ক্ষেত্রে স্থানীয় সিএনজি, অটো রিকশা ও রিকশা চালকরাও পরিবহন থেকে আয় করেছেন অর্থ।

 

 

মেলায় কাচামালা, কাচা বাজারসহ নানা পন্য সরবরাহ করেও অনেকে আয় করেছেন অর্থ। মেলার এবার প্রথমবারের মতো আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রবেশদ্বার ইজারাদা পান। ওই কাজে ১৭৫ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে আয় করেন টাকা। পাশাপাশি মেলার বিভিন্ন স্টলে বিক্রয় কর্মী হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন স্থানীয় তরুণ তরুনীরা।

 

 

মেলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তরুন আজমীর হোসেন বলেন, যদিও একমাসের মেলা। এখান থেকে লাখো লোকের সঙ্গে পরিচয়, তাদের সহায়তা কাজে যুক্ত থাকার মতো সফল অভিজ্ঞতা আগামী দিনে কর্মস্থলে কাজে লাগবে। মেলার সেভয় আইসক্রিম বিক্রয় কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারিয়া তাবাসসুম বলেন, আমি কমার্সের ছাত্রী।

 

 

হাতে কলমে ব্যবসা শিখার জন্য ইচ্ছে করেই বিক্রয়কর্মী হয়েছি। যা শিখছি তা আগামীতে কাজে লাগবে।  মেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা রিপন প্রধান বলেন, এবার মেলা থেকে বড় অংকের রপ্তানি আদেশ পাবে আশা। আর মেলার অবস্থান রূপগঞ্জে হওয়াতে আশপাশের গ্রামের লোকজন সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন। তারা তাদের নিত্য পন্য ক্রয় করে রেখেছেন।

 

 

এমনকি শীতের পোষাকও ক্রয় করে রাখেন। আর অনেকে কাজ করে টাকা আয় করছেন। সব মিলিয়ে এ মেলা উৎসবে রূপ নিয়েছে। মেলার পরিচালক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচীব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়  প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরও ১০টি পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন।

 

 

মেলায় স্থানীয়দের সরাসরি অংশ গ্রহণ মেলাকে প্রানবন্ত করে তুলেছে৷ স্থানীয়দের দায়িত্বশীল ভুমিকাকে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধতন মহল প্রশংসা করেছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, সামনের বছরের মেলার আগেই ঢাকা বাইপাসের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আর যাতায়াত ভোগান্তি থাকবে না। পরবর্তীতে আরও ভালো জমবে। তাই পরিসরকে আরও বিস্তৃত করাও প্রয়োজন।  

 

 

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী দাউদপুরের গৃহীনি সুমাইয়া আক্তার শিমু বলেন, এতোদিন শীত আর নানা সংকটে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলোও শেষ সময়ে প্রচুর ভীর দেখলাম। ব্যবসায়ীদের ছাড় দেয়া শুরু থেকে দিলে মেলা পুরো মাস জমজমাট হতো।  

 

 

সূত্র জানায়, ইজতেমার আসর ও ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য যানজট সমস্যায় মেলায় ব্যবসায়ীরা তেমন সন্তুষ্ট নয়। তবে মেলার ভেতরের কিছু পন্যের দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে। ক্রয় করতেও বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। এতে সাধারণ ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

 

 

এছাড়াও মেলায় দায়িত্বরত আইন শৃঙ্খলা বাহীনি ছাড়াও রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদের নেতৃত্বে অতিরিক্ত সদস্যরা কাজ করছেন। এখানে ৭৪১ জন পোষাকে ও সাদা পোষাকে দায়িত্বরত রয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন,স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছাড়াও বেসরকারি হাসাপাতালে লোকজন সেবা দিয়েছেন।

 

 

জাহাঙ্গীরের বাসিন্দা ও মেলায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় মিয়া বলেন, মেলায় আজ রেকর্ড সংখ্যক লোক হয়েছে। বেচাকেনা বেড়েছে। বিকালে প্রচুর দর্শনার্থী পেয়েছি। তাই মেলার অন্য ব্যবসায়ীরাও ছাড় দেয়া শুরু করেছে। এবার আসরটি পুরোপুরি জমজমাট হবে।  

 

 

মি. বাইট নামীয় খাবার হোটেলের পরিচালক আব্দুল আজিজ বলেন, বাণিজ্য মেলার আসর রূপগঞ্জে হওয়াতে স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এবার গতবারের তুলনায় দর্শনার্থী হচ্ছে বহুগুন বেশি। তিনি আরও বলেন, মেলার শুরু থেকে স্কুলে ভর্তি নিয়ে ব্যস্ততা আর শীত বেশি থাকায় লোকজন প্রথমে আসেনি। এখন সময় পেয়ে সবাই আসা শুরু করেছে।

 

 

মধুখালী এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী ইমলা মুহান্না বলেন, পূর্বাচলে দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যমেলায় শিশুপার্ক রাখায় আমাদের ভালো লেগেছে। তবে মেলার খেলনা পণ্যে আর শিশুপার্ক খুব ভালো লেগেছে। সূত্র জানায়, এবার মেলায় সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে।

 

 

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৩৩ টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি। দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে।

 

 

এছাড়া গতবার শিশুপার্ক ছিল না, এবার মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। যদিও এটি বেসরকারি উদ্যোগে। আবার দর্শনার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য ৫০টি শাটল বাস চালু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন। বাসের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করলে যাত্রীরা ৫০ শতাংশ ছাড়ও পাবেন।

 

 

এবার মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি। মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।    এন.এইচ/জেসি