বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১   ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কুতুবপুরে অপকর্মে দাবড়ে বেড়ানো মীরু উধাও

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:৫৭ পিএম, ১১ মার্চ ২০২৩ শনিবার


# এলাকার রাজনৈতিক ,সামাজিক সংগঠনগুলোও বয়কট করেছে মীরুকে
# মাদকব্যবসায়ীদের তৎপরতা অনেকটাই কমে এসেছে

 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুরে নানান অপকর্মে দাবড়ে বেড়ানো মীরু এখন অনেকটাই উধাও। আর এই মীরুর উধাও হওয়ার বেশ কিছু কারনও রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে মীরুকে আস্তে আস্তে মানুষ বয়কট করা শুরু করে দিয়েছে।

 

 

রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন সমাজের প্রোগ্রমে মীরুকে আর দেখা যায়না অমনকি বিভিন্ন পঞ্চায়েতের নেতৃবৃন্দ আগে যাদের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো তারাও মীরুর কাছ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন এবং এলাকায় মধ্যে মীরু রাজত্ব এখন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে।

 

 

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়ন একটি বৃহৎ ইউনিয়ন। শুধুমাত্র এই ইউনিয়নটিতেই ২ লক্ষাধীক এর বেশি মানুষের বসবাস। গার্মেন্ট ,মেইল ফেক্ট্ররী, সহ নানান কলকারখানা থাকার কারনে এই এলাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে এই এলাকাতে মানুষ কাজের তাগিদে এসে বসমবাস করে।

 

 

এই এলাকাটি ঢাকা নারায়ণগঞ্জের একেবারে বার্ডার সাইড হওয়াও কারনে অপরাধীরা খুব সহজেই নানান অপরাধ করে খুব সহজেই স্থান ত্যাগ করে থাকে।তবে এই এলাকাটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবথেকে ভয়ংকর অপরাধ সম্রাজ্যের এলাকা হিসেবে পরিচিত ।আর এই এলাকাতে যুগে যুগে বিভিন্ন সন্ত্রাস রাজত্ব করলেও তা স্থায়ী হতে পারেনি সকলকেই প্রশাসনের হাতে জব্দ হয়েছিলো।

 

 

কিন্ত সকলকে ছাড়িয়ে হত্যা, মাদক, সন্ত্রাস, চাদাঁবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ সকল অপরাধের মূলে প্রথমে নাম আসবে এই নামধারী সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লেংড়া মিরু।এই কুখ্যাত মীরুর বিরুদ্ধে ৪ টি হত্যা সহ মোট ১৯ টি মামলা রয়েছে।এলাকাতে তার রয়েছে বিশাল বাহিনী।

 

 

তার এই বাহিনী তার নির্দেশনায় একের পর এক অপকর্ম করে যায় এবং সে হুইল চেয়ারে বসে সকল অপকর্মের কলকাঠি নারতে থাকে তার বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করবে তার সাথেই চলবে অত্যাচার তাই তার বিরুদ্ধে কথা বলতেও কেউ সাহস করে না । কুতুবপুরের মানুষ তার কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে রয়েছে।

 

 

নিজেকে সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত করার জন্য কয়েকটা রাস্তা মেরামত করার পরপরই চেয়ারম্যান হওয়ার খায়েস হয়েছিল এই কুখ্যাত মীরুর। কিন্ত সব ভেস্তে যায় যখন মনিরুল আলম সেন্টুকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়। নিজে না পেরে মিরুর বউকে মহিলা মেম্মার হিসেবে দার করিয়ে দেয় কিন্ত যে যাত্রাও তার ব্যর্থ হতে হয় এবং বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়ার স্বাদ গ্রহন করে মীরু।

 

 

আর এই সকল কিছুর পরপরই একে বারে যেন হারিয়েই গিয়েছিলো এই সন্ত্রাসী মীরু। তবে না মীরু থামেনি আর থামবেন না এমন ওয়াদা করেই জোরেসরে নেমেছেন সকল অপকর্মের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যেই কথা সেই কাজ শুরু হয়ে গেল মীরুর।এলাকার ডিসের ব্যবসা ,নেটের ব্যবসা ,ইট ,বালু ,সিমেন্টের ব্যবসা ,জুট নামানো এই সকল কিছু তার একারই নিয়ন্ত্রনে যা তার বাহীনিরা নিয়ন্ত্রন করে।

 

 

আবার তার কিছু বাহীনি আছে যারা শুধু মাদক, চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মের টাকা সংগ্রহ করে তার হাতে দিয়ে আসে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় কুতুবপুরের মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেই শুরু হয়ে যায় তার তদবির।এবারো তার কোন ধরনের ব্যতিক্রম ঘটেনি।

 

 

গত ২৮ শে ডিসেম্বর রসুলপুর এলাকা থেকে রবিন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী তার স্ত্রী করা নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ তবে তার গ্রেফতারের ঘন্টা পার হতে না হতেই এই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড়াতে থানায় উপস্থিত হনতার সাথে ছিলো।

 

 

কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী জসিম উদ্দিন কিন্ত ব্যর্থ হয়ে ছিরেছেন কুতুবপুরকে ধ্বংস করা এই দুই নেতা।কুতুবপুরে এখন মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিনত হয়েছে এই মীরু। শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফাজ্জলের হাত ধরেই মুলত মীরু সন্ত্রাসী জগতে আগমন।

 

 

তাদের মূলত কাজ ছিল মানুষ খুন করা। এছাড়া চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি। ২০০৯ সালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দল নেতা তোফাজ্জল খুন হওয়ার পর তার শুন্যস্থান দখলে নেয় মীরু। মীরু নিজে একটি প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন। অতি সম্প্রতি এই বাহিনীর এক কিশোর সদস্য অস্ত্রের ট্রেনিং নিচ্ছে, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

 

 

ফতুল্লা পুলিশের সন্ত্রাসী তালিকায় সে ১০ নং আসামী। তবে চলাফেরায় সমস্যা হওয়ার কারণে পুলিশও তাকে প্রথমে গ্রেফতার করতে ইতদস্থ করতো। কিন্তু মীরু অপরাধ কর্মকান্ড থেমে থাকতো না। নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের মাননীয় সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের
স্থানীয় লোকজন জানান, মীরু রয়েছে একটি প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী বাহিনী।

 

 

এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে থেকে শুরু করে ভূমিদস্যুতা ও মাদক ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণকর্তা সে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা হিসেবেই পরিচিত মীর হোসেন মীরু তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। এরমধ্যে হত্যা, বিস্ফোরক, চাঁদাবাজি, মারামারি, মাদক মামলা অন্যতম।

 

 

২০০৯ সালে সন্ত্রাসী তোফাজ্জলের মৃত্যুর পর এলাকার আধিপত্য বজায় রাখতে মুখোমুখি মীরু ও সজল বাবুর্চি বাহিনী। চলে তুমুল গোলাগুলি। এই গোলাগুলি চলাকালে একটা সময় বাবুর্চি বাহিনীর আক্রমণে পিছু হটতে শুরু করে মীরু বাহিনী। দলবল নিয়ে গুলি করতে করতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিজ পিস্তলের গুলিতেই সে আহত হয়ে পরে পুঙ্গত্ববরণ করে।

 

 

সে ঘটনার পর থেকে সজল বাবুর্চির আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার আগে মীর হোসেন মীরুকে ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর গ্রেফতার করেছিলো ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। ওই বছর ৭ অক্টোবর রাতে পাগলা রেলস্টেশন এলাকায় ৪ যুবককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত ও গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার ঘটনায় দায়ের করা মামলা তাকে গ্রেফতার করা হয়।

 

 

একই বছরের ৩ মার্চে মীরুকে বাহিনীর এক সদস্য হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার করে বিপাকে পড়েছিলো ফতুল্লা থানা পুলিশ। এদিন মীরু বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে সেই সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। একইবছর ১০ ফেব্রুয়ারি শাহী বাজার এলাকায় ডিস ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ হলে ডিস ক্যাবল কর্মচারী শাজাহান নামে একজনকে প্রকাশ্যেই কুপিয়ে হত্যা করে মীরু বাহিনী।

 

 

এ সংঘর্ষে আরও ৬ জনকে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরতর আহতও করে তারা। এ ঘটনায় মীরুকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। একই বছর ৫ জানুয়ারি মীরু বাহিনীর ৩ সন্ত্রাসীকে অস্ত্র, গুলি ও এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

 

এ ঘটনা পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানা অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি এবং সালাউদ্দিন হাওলাদার নামে এক ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে আরও একটি মামলা করে। ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর রাতে নিজ বাসা থেকে মীরু এবং তার সহযোগী ইকবালকে ৫ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি পিস্তল ও ১৩ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১০।

 

 

এঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মীরুর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা হয়। ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর এলাকায় প্রভাব বিস্তা কে কেন্দ্র করে মীরু ও তার ক্যাডাররা ভাঙ্গাপুল এলাকায় গিয়ে জাকের পার্টি নেতা হোসেনের বাড়ির সামনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

 

 

২০১৪ সালে মীরুর বিরুদ্ধে মিছিলে অংশ নেয়ার অপরাধে এই বছরের ২৮ এপ্রিল রাতে স্থানীয় দুই সহোদর আব্দুর রহমান ও সজলকে শাহী বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায় মীরু বাহিনী। পরে তাদের এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়।

 

 

এঘটনায় মামলা হলে মামলাটি তুলে নিতে মীরু তার শ্যালক আরিফ, শরিফ ও রিয়াজ, রাজিবসহ ১৫-২০ জনের একটি দল ওই বছরের ১২ মে রাত ১২টায় আব্দুর রহমান ও সজলদের বাড়িতে বোমা হামলা চালায় এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় আরও একটি মামলা দায়ের হয় মীরু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

 

 

২০১৫ সালের ১০ জুন নূরুল হককে নামে এক ব্যবসায়ীকে তার মায়ের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। ফতুল্লা মডেল থানায় মীরুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়। একই বছরের ১৯ মার্চ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর অভিযোগে এক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী মীরু সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

 

 

এর দু’দিন আগে এক এএসসি পরীক্ষার্থীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসীর উপর হামলা চালায় মীরু বাহিনী। এ হামলায় ২০ জন নিরীহ এলাকাবাসী আহত হয়।   এন.হুসেইন/ জেসি