মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

সোনারগাঁয়ের সাদিপুরে র‌্যাবের গুলিতে নিহত ১, আহত ১

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:১২ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৩ রোববার


# খেলার মাঠ থেকে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আসামি ধরতে গেলে এই ঘটনা ঘটে

 

সোনারগাঁয়ে খেলার মাঠ থেকে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল রাতে সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামে সন্দেহভাজন আসামী ধরতে শুক্রবার মধ্যরাতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এই হত্যাকাণ্ডের আসামিকে গ্রেফতার করতে গেলে র‌্যাবের উপর হামলা হয়েছে দাবি করেছে র‌্যাব।

 

 

এ ঘটনায় আব্দুল কাশেম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তার স্ত্রী রমিজা বেগম অভিযোগ করে জানিয়েছেন সিভিল পোশাকে একদল অস্ত্রধারী নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। শুক্রবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টায় উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে আরো এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

 

 

নিহত আবুল কাশেম ওই এলাকার প্রয়াত কদম আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন বাঁশ বেতের হস্তশিল্পী। তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত হুমায়ুন কবির সহ আহত র‌্যাব সদস্যদের পরিচয় জানা যায়নি। এদিকে নিহতের ছেলে সাইফুল ইসলাম দাবি করেছেন, তাদের গ্রামের ২৫ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে র‌্যাব। 

 

 

র‌্যাব জানায়, এক হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেফতার করতে এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এসময় আসামি ছিনিয়ে নিতে তাদের উপর হামলা হলে তারাও পাল্টা উত্তর দেয়। তবে নিহত কিভাবে মারা গেছে সেটি সম্পর্কে কোন কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

 

নিহতের ছেলে দ্বীন ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত দেড়টার সময় একই গ্রামের আমির আলীর ছেলে সেলিমকে কে বা কারা গ্রেফতার করে মারধর করছিলেন। এ সময় দ্বীন ইসলামের পিতা আবুল কাশেম জানতে চান, কেন তাকে মারধর করা হচ্ছে। তারা আইনের লোক পরিচয় দিলে তাদের পোশাক নেই কেন জানতে চান আবুল কাশেম।

 

 

এ কথা বলতেই প্রথমে তার বাম পায়ে আঘাত করা হয়। এ সময় আবুল কাশেম চিৎকার করলে তাকে পেটে গুলি করা হয়। গুলির আওয়াজ শুনে গ্রামবাসী বেরিয়ে আসলে তারা গুলি করতে করতে একটি মোটরসাইকেল ফেলে রেখে এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় হুমায়ন কবির নামে আরেকজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। 

 

 

নিহত আবুল কাশেমের আরেক ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় তার বাবাকে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত ২টার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরো জানান, রাত আড়াইটার সময় রেখে যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে তারা আবার গ্রামে আসেন।

 

 

পরে ওই মোটরসাইকেলসহ গ্রামের আরো ২৫ জন লোককে আটক করে নিয়ে যায় সিভিল পোশাকধারীরা। তবে এলাকাবাসীর ধারণা, তারা প্রশাসনের লোক। তাদের পোশাক না থাকায় কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত আবুল কাশেমের লাশ এখনো সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

 

 

নিহতের স্ত্রী রমিজা বেগম বলেন, শনিবার রাত দেড়টার দিকে তিনি ও তার স্বামী শৌচাগারে যেতে বের হন। এসময় বাড়ির পাশেই চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনতে পান। তারা সেখানে এগিয়ে গিয়ে দেখেন শার্ট ও গেঞ্জিগায়ে একদল লোক তাদের পূর্বপরিচিত সেলিম নামের এক তৈরি পোশাক কারখানার ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেলিম কান্নাকাটি করছে।

 

 

এসময় ওই লোকদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। মারধরের পর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার চেচামেচি করেন এবং সাদা পোশাকধারীদের গালাগাল দেন। এসময় সাদা পোশাকধারীদের একজন নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তার পেটে গুলি করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। 

 

 

এদিকে স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাবার পর এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা আসে। তখন স্থানীয় লোকজন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলে ওই সাদা পোশাকধারীরা তাদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন। এসময় হুমায়ুন কবীরের পায়ে গুলি লাগে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।  

 

 

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সিজান বলেন, রাত ৩ টা ১০ মিনিটে মো. দ্বীন ইসলাম নামক এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে জানা যায় হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তার নাভির উপরে একটি বুলেটের চিহ্ন আছে। হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় দ্বীন ইসলাম নিজেকে বৃদ্ধের ছেলে পরিচয় দিয়েছেন। 

 

 

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, সোনারগাঁয়ে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে শুক্রবার। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র‌্যাবের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে র‌্যাব বাধা দেয়।

 

 

এসময় তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসামিকে আটক করে আমরা নিয়ে আসি। শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে আমরা জানতে পারি একজন মারা গেছে। তবে সে কিভাবে মারা গেছে তা আমরা নিশ্চিত না। এ ঘটনায় আমাদের ৪ জন র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। 

 

 

সোনারগাঁ থাকার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ বলেন, হাসপাতালে একটি গুলিবিদ্ধ লাশ আছে। কিন্তু কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এখনো জানা যায়নি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।  এন.হুসেইন/জেসি