মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

 দুই ঘাটে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:১০ পিএম, ১৭ মে ২০২৩ বুধবার


# জনগণের দুর্ভোগ, বেকায়দায় বিআইডব্লিউটিএ
# সাংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, ফায়দা লুটছে সুবিধাভোগীরা


সেন্ট্রাল ফেরী ঘাট এবং হাজীগঞ্জ ফেরীঘাট নিয়ে সেলিম ওসমানের ভাবমূর্তি হচ্ছে। বিশেষ করে আদালতের অন্তর্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিআইডব্লিউটিএ যেখানে ঘাট দুটির ইজারা দিতে পারছেনা অপরদিকে মামলার কারণে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি এবং তাদের কর্মচারীদের মাধ্যমে ঘাট পরিচালনা করায় নানা অনিয়মে সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে।

 

 

সাংসদের ঘনিষ্টজনদের মাধ্যমে মামলা দায়ের এবং মামলায় অন্তর্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞায় সেলিম ওসমানের ঘনিষ্টজনদের মাধ্যমে ঘাট পরিচালনা করায় সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে সেলিম ওসমানের উপর।

 


সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই ঘাট দুটি নিয়ে মামলা দায়েরের আগে শহর-বন্দরের বাসিন্দাদের জন্য সেন্ট্রাল ফেরী ঘাট এবং হাজীগঞ্জ ফেরীঘাট জনগণের জন্য বিনা পয়সায় পারাপারের সুবিধা করে দেন সেলিম ওসমান। কিন্তু সেটি কিছুদিন অব্যাহত থাকার পরপরই আবার বন্ধ হয়ে যায়।

 

 

আর এরপর থেকে ঘাট পরিচালনা করা ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের উপর নানাভাবে অত্যাচার এবং মনমাফিক টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠে। মামলার বিবাদী বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার দরুণ তাদেরও হাত-পা বাধা। যার দরুণ একদিকে জনদুর্ভোগ চরমে উঠলে সেব্যাপারে তারা কিছু করতে পারছেনা।

 

 

এদিকে ঘাট দুটির ইজারা দেয়ার দায়িত্ব বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেটি করতে না পারায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে অনেক টাকার রাজস্ব। ফায়দা লুটছে সুবিধাভোগীরা। ইমেজ সংকটে সেলিম ওসমান। বিআইডব্লিটিএ’র হাত-পা বাধা সাথে জনগণের ক্ষোভও তাদের উপর। তাহলে আদতে ইজারা দেয়ার সুযোগ না থাকায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ রয়েছে বেকায়দায়। চলমান মামলার দরুণ এব্যাপারে কোন সুরাহাও কেউ করতে পারছেনা।

 


সেলিম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত বর্তমান ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম  আদালতে জনগণের স্বার্থে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তার প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞার বলেই চলছে এই দুই ঘাট।

 

 

বর্তমানে এখানে ইজারাদার না থাকলেও সেলিম ওসমানের আরেক ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনুর ঘনিষ্টজন সাইফুল হাসান রিয়েলসহ বেশ কয়েকজন নিয়ন্ত্রণ করেন সেন্ট্রাল ঘাট বলে জানা গেছে। অবস্থা এমন জায়গায় রয়েছে সেলিম ওসমানের নাম তাদের মুখে মুখে সামনে আসায় ভয়েও এই মামলা মোকাবেলা কিংবা ইজারা সংক্রান্ত বিষয়ে নাক গলাতে সাহস করছেনা কেউ।

 

 

আর যার ফলে ঘাটে  জনগণের দুর্ভোগ কয়েকগুন বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এসব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ গিয়ে পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে। কামরুল হাসান মুন্নার সেই মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান, বিআইডব্লিউটি’এ বন্দর, মেঘনা ঘাটের উপ-পরিচালক এবং নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের বন্দর কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) কে।

 


সূত্র জানিয়েছে, সেখানে মামলার বাদী  কামরুল হাসান মুন্না অভিযোগ করেন ঘাট দুটি থেকে অবৈধ সুবিধা লাভের আশায় দীর্ঘদিন যাবৎ বিবাদী অর্থাৎ বিআইডব্লিউটি’এ সংশ্লিষ্টরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পায়তারা করছে। এই অবস্থায় গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ বাংলাদেশ নৌ পরিবহন বরাবরে একটি চিঠি প্রেরণ করেন।

 

 

যাতে খেয়া ঘাট দুটি ২০২২/২০২৩ অর্থবছরের জন্য বাদী মুন্নার বরাবর নবায়ন করেন। এবং ঘাট দুটি লিজ যাতে না দেয়া হয়, এটা করলে জনগণের ঘাট পারাপারে ভোগান্তির শিকার হবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ এসব আমলে না নিয়ে গত ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল ঘাট দুটি ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়।

 

 

এই বিজ্ঞপ্তি দেখেই কামরুল হাসান মুন্না দুই ঘাট নিয়ে বিআইডব্লিউটি’এ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। এবং এই স্বত্ব ঘোষণামূলক মামলাতেই আদালত অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা দেয়। এবং তার প্রেক্ষিতেই ইজারা ছাড়াই বর্তমানে সাইফুল হাসান রিয়েলের লোকজন সেন্ট্রাল ঘাট এবং সাজনুর লোকজন হাজীগঞ্জ ঘাট চলছেন।

 

 

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এসব ঘাট দিয়ে চলাচলরত জনগণই সেলিম ওসমানের সেই বিনামূল্যে পারাপারের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টি তো টেরই পাননা উল্টো দুই পাড়ের লোকজনের ক্ষোভের অন্ত নেই।  নালিশা জমা দেয়া  দুই ঘাট যাতে অন্যত্র লীজ দিতে না পারে কিংবা বাদীর মুন্নার শান্তিপূর্ণভাবে ঘাট পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে তৎমর্মে বিবাদীগণকে (বিআইডব্লিউটি’এ) কর্তৃপক্ষকে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।  আর এই সুযোগটিই নেন বর্তমানে ঘাট পরিচালনাকারীরা।  এন.হুসেইন রনী /জেসি