শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

রূপগঞ্জে বাম্পার ফলনেও শ্রমিক সংকট,বেশি মজুরিতে স্লান কৃষকের খুশি

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৩৬ পিএম, ২১ মে ২০২৩ রোববার

 

রূপগঞ্জে চলতি মৌসুমে কৃষি বান্ধব আবহাওয়া থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন ধান ঘরে তুলতে কৃষক কৃষানিরা ব্যাস্ত সময় পার করছে। বোরো ধানের ভালো ফলন হলেও শ্রমিক সংকট ও অধিক মজুরির কারণে ধান তোলা নিয়ে বিপাকে পরেছেন চাষীরা। অতিরিক্ত অর্থ দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।

 

 

এদিকে সঠিক সময়ে শ্রমিক না পেলে বৈরি আবহাওয়াতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এতে ধান তোলতে শ্রমিক সল্পতা আর বেশি মজুরির কারণে উভয় সংকটে পরেছেন উপজেলার কৃষকেরা। বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকট ও মজুড়ি বাড়ার সাথে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের হাসি হারিয়ে গেছে।

 


রূপগঞ্জ কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, উপজেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৫০০০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। তবে আবাদ হয়েছে ৫০০০ হাজার ৫০ হেক্টর। উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নতুন ধান ঘরে তুলতে মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার চাষিরা।

 


উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি কিংবা চুক্তিতে ধান কেটে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের ঘরে তুলে দেন ফসল। এসময় রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় শ্রম বেচাকেনার হাট (শ্রম বিক্রির হাট) বেশ জমে উঠে।

 

 

উপজেলার শ্রম হাটে পর্যাপ্ত পরিমান শ্রমিক না পেয়ে অনেকে নরসিংদীর মাদবদী শ্রম বাজার থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করছেন। শ্রমিক সংকট থাকলে মজুরি বাড়ে বিদ্যুৎ গতিতে। সংকটকালে একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নির্ধারণ হয় ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। শ্রমিকের সহজলভ্যতা বাড়লে কমে আসে মজুরিও, সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক মিলে।

 


প্রত্যান্ত এলাকা থেকে আসা শ্রমিকদের শ্রম বিক্রয় হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস চুক্তিতে। তবে শ্রমিক সংকট থাকলে মজুরি বেড়ে যায় দুই-তিন গুণ। এদিকে এক যোগে কৃষকের ঘরে ঘরে ধান কাঁটা মাড়াই শুরু হওয়ার কারণে শ্রমিক চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় পর্যাপ্ত শ্রমিক ঘাটতি থাকায় ও মজুড়ি বেশি হওয়ায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে সঙ্কা ও লাভ লসের হিসেব মিলছেনা কৃষকের।

 


উপজেলার ধান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অববাহিকায় রূপগঞ্জ উপজেলায় এবার বোরো ধান রোপণে কৃষিবান্ধব আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও সন্তোষজনক থাকায় কৃষক কৃষানিরা ভেজায় খুশি ।

 

 

তবে ভালো ফলন হওয়ার পরও ধান মাড়াই কাজের শ্রমিক সংকট ও মজুরী বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পরেছেন এখানকার কৃষকরা। এদিকে সঠিক সময়ে শ্রমিক না পেলে ধান ঘরে তুলতে না পারলে বৈরি আবহাওয়াতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অন্যদিকে ভালো ফলনের পরও শ্রমিক মজুড়ি বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনে লাভ লসের হিসাব কষে কৃষকের আনন্দ স্লান হয়ে গেছে।

 


উপজেলার তারাব পৌরসভার বংশিনগড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পোষাক কারখানার চাকরিজীবী ইন্দ্রোজিত বিশ্বাস শ্রমিক সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ায় ছুটির দিনে ছেলে ও ছেলের বউকে সাথে নিয়ে নিজেই নিজের জমির কাঁটা ধান ক্ষেতেই মাড়াই করে তুলে আনছেন।

 

 

তিনি জানান, দুই দিন আগে একদিনের জন্য ১ হাজার টাকা দৈনিক মজুরিতে দুই জনকে দিয়ে ধানগুলো কাটিয়েছেন। কাঁটা ধানের আটি গুলো ক্ষেত থেকে ঘরে তোলার জন্য দুই দিন ধরে শ্রমিক খৈাঁজে পাচ্ছেন না। তাই ছেলে ছেলের বউকে সাথে নিয়ে ধান মাড়াই করে ঘরে নিচ্ছেন।

 


মুড়াপাড়া ইউনিয়নের গজার ভিটা এলাকার কৃষক আবুল হোসেন ব্যাপারী জানান, এখন মাঠ ভরা পাকা ধান চারদিকে শ্রমিকের এত চাহিদা বেশি মজুরিতেও সব সময় শ্রমিক পাওয়া যায়না। গতকাল ১ হাজার টাকা করে মজুরি দিয়ে চার জনকে দিয়ে ধান কাঁটিয়েছি । আজ অন্যত্র মজুরি বেশি পাওয়ায় ক্ষেতে ধান রেখেই চলেগেছে।

 

 

এখন নিজের পরিবারের লোকজন নিয়ে এগুলো মাড়াই করে বাড়ি নিতে হবে। আর শ্রমিকের যে দাম, নরসিংদীর মাদবদী বাজারে গিয়ে ঘুরে এসেছি- চড়া দাম দিয়ে শ্রমিক আনলে ফসল করে লাভের মুখ দেখা যাবেনা।

 


উপজেলার হাউলিপাড়া এলাকার কৃষক শফিউল্লা বলেন, এবার ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান আবাদ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৯ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ধানের ফলন ২০-২২ মণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ধান কেটে ঘরে তোলার শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে তেমন লাভ হবে না। এদিকে শেষ পর্যন্ত শ্রমিক সংকটে ধান মাঠে নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্বাবনা রয়েছে।

 


ময়মনসিংহ থেকে শ্রম বিক্রি করতে আসা শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশে এক যোগে ধান কাঁটা-মাড়াই শুরু হয়। এ সময় শ্রমিদেরচাহিদা বেশি থাকে মজুরিও পাওয়া যায় ভালো। তাইতো একটু বাড়তি আয়ের আশায় রূপগঞ্জে ধানের কাজ করতে চলে আসি।

 


রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেহা নূর বলেন, রূপগঞ্জে এবার বোরো ধান আবাদের নির্ধাতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রায় আবাদ হয়েছে। ধানের ফলনও বেশ ভালোই হয়েছে। এরইমধ্যে উপজেলায় বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ প্রায় বেশির ভাগ শেষ হয়েছে। তবে ঘুর্নিঝড় মোখার তান্ডবে বৃষ্টিপাতের সঙ্কায় কৃষকের তারাহুরো করে ধান ঘরে তোলার চেষ্টায় কিছুটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

 

 

উপজেলা কৃষি অফিস কতৃক কৃষকদের সার্বখনিক সেবা প্রধান করা হয়েছে। কুষি অফিস কতৃক এখানকার ৩৫০ জনকে উফসী ও ৫০০ জন কৃষকের মাঝে হাইব্রিড ধানরে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। আশা করা যায়, কৃষকরা যথাসময়ে তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবে।  এন.হুসেইন রনী /জেসি