শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১   ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাধীনতার এতো বছর পর স্যাংশন জাতির জন্য লজ্জাস্কর: গিয়াসউদ্দিন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ২৬ মে ২০২৩ শুক্রবার


# বৈশ্বিক পরামর্শ গ্রহণ না করাতেই এসব আমাদের ঘাড়ে চাপছে

# আমাদের দেশের জনগণকে এসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে
 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্রমশ জটিলতা তৈরি হচ্ছে জাতীয় রাজনীতিতে। বিশ্বাঙ্গনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সাথে আলোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে কড়াকড়ি অবস্থান নিয়ে নানাবিধ স্যাংশন দিচ্ছে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে পরিচিত দেশ আমেরিকা।

 

 

লঘু স্যাংশনের আলামত হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির আমেরিকা সফরের ট্যুরিস্ট ভিসা পর্যন্ত দিচ্ছেনা আমেরিকা। সামনে এর তীব্রতা বাড়তে পারে। এরই মাঝে লঘু স্যাংশনের আওতায় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের আমেরিকার ভিসা না দেওয়ার ঘটনা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আলোচনা তৈরি করেছে।

 

 

তবে এসব স্যাংশন নিজেদের দোষেই আসছে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। বিএনপির এই প্রভাবশালী রাজনীতিকের কাছেই ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন বর্তমান আওয়ামীলীগের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। 

 

 

নানা ইস্যুতে আমেরিকার একের পর এক স্যাংশন দেয়া প্রসঙ্গে সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন যুগের চিন্তাকে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্যই ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, এদেশের মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।

 

 

কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পরেও  এখনও আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। যারা বর্তমানে সাড়ে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে তারা গত দুইটা নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মানুষের ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে পারেনি। দিনের ভোট তারা রাতে করেছে।

 

 

মানুষকে নির্বাচনী অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে তারা ক্ষমতায় আছে। এটা যেমন এই দেশের মানুষ জানে। তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে, জেনেছে। এতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ এবং মূল লক্ষ্য তা ভুলণ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিশ্ব দরবারে নিজেদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে উপস্থাপন করেছি।  

 

 

এখন বিভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নানা ধরণের কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নানা ধরণের পরমর্শ দিচ্ছে, আবার দেশের ভেতরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু এসবের কোন কিছুই গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে সরকার আমলে নিচ্ছেনা। তারা নিজেদের ইচ্ছা নিয়েই একগুয়েমি করছে। আর নিজেরা স্বাধীনতা চেতনা পরিপন্থী কাজে বেশি লিপ্ত হচ্ছে।

 

 

এর কারণে যেমন একদিকে তাদের জনপ্রিয়তা তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে অন্যদিকে এইসব বিষয় সামনে রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা জনগণের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে তারা ভীত হচ্ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ এখন একটি সুন্দর ও সুুষ্ঠু নির্বাচন চাইছে যাতে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক।

 

 

দেশের বাইরে থেকেও বিভিন্ন দেশ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দিনের পর দিন আহবান জানিয়ে আসছে। সেজন্য নানা পরামর্শও দিচ্ছে। কিন্তু এসব আমলে না নেয়ায় এখন বিভিন্ন ক্ষমতাধর দেশ আমাদের নানা স্যাংশন দিচ্ছে। স্বাধীনতার এতো বছর পর একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমি মনে করি এটা বিদেশীদের কোন নিজস্ব স্বার্থের চাইতেও আমাদের দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার, গণতন্ত্রের অধিকার চর্চা প্রতিষ্ঠার জন্য হচ্ছে। 

 

 

সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমি মনে করি কোন দেশের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য স্যাংশন কাম্য নয়। সার্বভৌম রাষ্ট্র সায়েমের জন্য সকলের সাথে বন্ধুত্ব থাকবে। সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি চাই মুক্তিযোদ্ধার আদর্শ বাস্তবায়ন হোক। গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনগণের অধিকার খর্ব হয়।

 

 

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে বহিঃবিশ্ব স্যাংশনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা। আমাদের স্বাধীনতার এতো বছর পর এসব স্যাংশন আমাদের জন্য তথা জাতির লজ্জাস্কর ব্যাপার এবং দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের দ্রুত শুভবুদ্ধির উদয় না হলে আমাদের দেশের জনগণকে এসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।   এন. হুসেইন রনী  /জেসি