বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১   ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জিয়া হলের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবে বিএনপির ক্ষোভ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫৯ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া মোড়ে অবস্থিত শহীদ জিয়া হল। ১৯৬৩ সালে সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরী গং তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এস এ সাত্তারের নামে নারায়ণগঞ্জ টাউন হলের জমির দলিল করে দেন। দলিল অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৫৯ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে এর নামকরণ করা হয় শহীদ জিয়া হল। এটি নামকরণ করা হয়েছে জিয়াউর রহমানের নামে তিনি সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া বাংলাদেশের সবচাইতে বড় বিরোধী দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও এই জিয়াউর রহমান।

 

দীর্ঘদিনের এই পুরনো ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরি করে (৬ দফা) নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এর আগে ২০১০ সালে নারয়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন শহীদ জিয়া হলের নাম পরিবর্তন করে (মিলনায়তন) রাখার  প্রস্তাব আসলে ও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। এবার দীর্ঘ ১৪ বছর পর আবারো শামীম ওসমান এ বিষয়ে কথা তোলার পর থেকেই উত্তেজিত হয়ে আছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা নানাভাবে বক্তব্যে শামীম ওসমানকে হুশিয়ারি ও অনুরোধ দুটোই করে যাচ্ছেন।

 

৪ ফেব্রুয়ারী রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের জিয়া হলের জায়গায় ‘৬ দফা ভবন’ নামে নতুন ভবন হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে বালুর মাঠ নামে একটি মাঠ ছিল। এখানে ঘোষণা দেওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই স্মৃতি ভুলিয়ে রাখতে নারায়ণগঞ্জ মিলনায়তন নামের একটি মিলনায়তন করেন।

 

তাঁরা বাধা দিলেও ঠেকাতে পারেননি। পরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেটাকে ‘জিয়া হল’ নাম দেন। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শামীম ওসমান বলেন, তাঁরা চান জেলা পরিষদের মাধ্যমে ওই জায়গায় একটি ভবন হোক এবং এর নাম ‘৬ দফা ভবন’ রাখা হোক। শামীম ওসমানের এই দাবি নিয়ে বর্তমানে বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।

 

তারা দাবি করছেন এখানে তোন বালুর মাঠ ছিলো না এটা শামীম ওসমানের ভূল তথ্য, অপরদিকে আরো অনেকেই বলছে, সাংসদ শামীম ওসমানকে এই জিয়া হল নিয়ে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি না করার অনরোধ করা হলো। তা না হলে নারায়ণগঞ্জের জনগণ কঠোর আন্দোলণ শুরু করবে। শীগ্রই বিএনপির নেতাকর্মীরা শামীম ওসমানের এই দাবি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে।

 

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য একে.এম শামীম ওসমান সাহেব জিয়া হল ভেঙ্গে যে নতুন নাম করণের উদ্যোগ নিয়েছেন তার মাধ্যমে দেশের জনগণের মনে আঘাত দিয়েছে। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। সেই হিসেবে রাষ্টীয়ভাবে তার নামে নারায়ণগঞ্জে একটি বৈধ স্থাপনা করা হয়েছে। কিন্তু এটাকে ভাঙ্গে ফেলে নতুন একটি ভবন করা হবে নাম রাখা হবে ৬ দফা এটা কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্যে হতে পারে না।

 

এছাড়া গতকাল সংসদে একটি জিয়া হলের জায়গার নাম বালুর মাঠ করা হয়েছে শামীম ওসমান সাহেব তার বক্তব্যে এমনি বলেছেন কিন্তু আমি এটা তদন্ত করেছি। সেই তথ্য ভূল এসেছে, কারণ বালুর মাঠ এটা ছিলো না, বালুর মাঠে বর্তমানে অন্য স্থাপনা রয়েছে। আমি প্রশাসনকে বলবো এটা একটু দেখতে ভালো করে তদন্ত করতে। তাহলেই বেড়িয়ে আসবে সাংসদে শামীম ওসমান সাহেব যে জিয়া হলের স্থানের নাম বালুর মাঠ বলেছে সেই  তথ্য ভূল। আমি শামীম ওসমান সাহেবকে বলবো আপনি আপনারা এই সিদ্ধান্ত বদলান তা না হলে নগরীতে আবারো কঠোর আন্দোলন শূরু করবে নারায়ণগঞ্জের জনগণ।

 

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, এই জিয়া হল নারায়ণগঞ্জের একটি ঐতিহ্যেকে ধরে রেখেছে। এমনকি এই হলের মিটিশন কাগজে ও জিয়া হল নামেই মিটিশন করা আছে। কিন্তু এই জিয়া হলের বিরুদ্ধে নতুন নাম করণের যে নীল-নকশা তৈরি করছে এমপি শামীম ওসমান সাহেব এটা একটি প্রতিহিংসার চিত্র। তার এই কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডকে জানাবো আর নারায়ণগঞ্জের জনগণকে নিয়ে এটার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবো।

 

আর আমরা ও তো বিগত দিনে ক্ষমতায় ছিলাম তখন তো আমরা শেখ মুজিবর সাহেবের কোন স্থাপনা গুড়িয়ে দেইনি। তারা কেন সেক্টর কমান্ডার জনপ্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম নারায়ণগঞ্জ থেকে মুছে দিতে চাইছে। এটা দেশের জনগণ কখনো হতে দিবে না। তিনি আরো বলেন, আমি শামীম ওসমান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলতেই চাই আপনি আপনার দেওয়া জিয়া হলের বিষয়ের বক্তব্যে পরিবর্তন করুণ তা না হলে নারায়ণগঞ্জের সাধারন জনগণ এই বিষয়ে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে রাজপথে নেমে আসবে।

 

বিএনপির নিবার্হী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন যুগের চিন্তাকে বলেন, শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাশালী সাংসদ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে চামচামি, চাটকারীতায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তার এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেশের জনগণ মেনে নিবে না। তিনি যে প্রদক্ষেপ নিয়েছেন নারায়ণঞ্জের জিয়া হলের নাম মুছে ফেলার তা জঘন্য একটি কর্মকান্ডের প্রকাশ। যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে যা তাদের সাধণা হয়ে থাকবে কখনো পূরণ হবে না। উনি একজন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করছেন।

 

তিনি আরো বলেন, এখন তারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন দেশের জনগণের জন্য কাজ করবেন। এটা না করে উনি নারায়ণগঞ্জে জিয়াউর রহমানের নামের স্থাপনা ভাংতে ও নাম চেঞ্জ করার পায়তারা করছেন। আমি মনে করি এই আওয়ামী লীগের নেতারা ১৭ বছরে জিয়াউর রহমানের নাম মুছতে পারেনি সামনে ১৭০০ বছরে ও তারা এই জিয়াউর রহমানের নাম মুছতে পারবে না। সারা জীবন জিয়াউর রহমানের নাম মানুষের অন্তরে স্বর্ণ অক্ষরে খোদায় করা থাকবে। এদিকে শামীম ওসমানের মতো আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজনৈতিক চামচামি, চাটকারীতা আওয়ামী লীগকে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

 

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি যুগের চিন্তাকে বলেন, জিয়া হল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান সাহেব রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি করতে চাচ্ছে। এদিকে এর আগে নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্ত্বে ও তার পর নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করতে নানাভাবে হুংকার দিয়েছেন কিন্তু তার ডান-বাম পাশে যারা থাকে তারাই এই মাদকের সাথে জড়িত আছে। তিনি বলেছিলেন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চান কিন্তু রাজনীতিকে তারাই অসুষ্ঠে পরিণত করছে।

 

এখন উনি যে বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে যে রাষ্ট্রীয়ভাবে পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে সেটাকে তারা ভাংতে চাচ্ছে এবার নতুন ভবন করে আরেক ৬ দফা নাম দিতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের এই কাছে সফল হবে না। আমি তাকে অনুরোধ করবো আপনি এই জিয়া হল নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করেন। আর না হলে শহরের রাজনীতিতে আবারো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আপনি সব সময় নারায়ণগঞ্জের মানুষের ভালো চান সুষ্ঠু রাজনীতি চান আপনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মনে আঘাত দিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতি নারায়ণগঞ্জে দেখতে পাবেন না জিয়া হল বিষয়ে আপনার যেই মত সেটা পরিবর্তন করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এস.এ/জেসি