বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১   ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তিন ডাইংয়ে বিষাক্ত সস্তাপুর

সাইমুন ইসলাম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার

 

# সামান্য জরিমানা আর প্রশাসন ম্যানেজে আবার পুরনো রূপে
# দুই ভাই কাদির ও আলি আকবর এর মালিকানাধীন দুই ডাইং
# আনজুর মালিকানাধীন হলি ডাইংয়ের কারণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

 

 

সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়ন এর অন্তর্গত সস্তাপুর এলাকাটি জলাবদ্ধতার কারণে প্রায়ই আলোচনায় থাকে। ডিএনডি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার কারণে এমনিতেই জলাবদ্ধতা একেবারে নির্মূল করা যাচ্ছে না। এতে করে প্রায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ জনপদের বাসিন্দাদের। তবে এ দুর্ভোগের সাথে এ জনপদের বাসিন্দাদের ভোগান্তি আরো কয়েকধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে এ এলাকায় অবস্থিত প্রধান ডাইং, কাদির ডাইং ও হলি ডাইং নামের তিনটি ডাইং।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাদির ডাইং ও প্রধান ডাইং এই দুই ডাইং এর মালিকানায় রয়েছেন কাদির ও আলি আকবর নামের দুই ভাই। এবং হলি ডাইং মালিকানায় রয়েছে আনজু নামক এক ব্যক্তি। এই তিনজন কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা মান্য না করেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত।

 

সরেজমিনে দেখা যায় ডাইংগুলোর কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে গোটা এলাকা। শুধু তাই নয় ডাইং এর ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা আর সেই জলাবদ্ধতার পানি মূলত বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি যা কারো সংস্পর্শে আসলে সৃষ্টি হয় নানাবিধ জটিল চর্মরোগ। আর বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে সৃষ্টি হয় শ্বাসনালীর জটিলতা।

 

সূত্র মতে, এই ডাইংগুলোর নেই কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাঠ পুড়িয়ে, ঝুট এর সাথে বিষাক্ত ক্যামিকেল পুড়িয়ে  তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে করে মারাত্নক হুমকির মুখে পরেছে এ জনপদের মানুষের জনস্বাস্থ্য।

 

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ তিনটি ডাইং ই অবৈধভাবে চলছে। কাদির ডাইং বরাবর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। প্রধান ডাইং থেকে ইতিমধ্যো এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিপুরন আদায় করা হয়েছে। এবং হলি ডাইং বরাবর পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ প্রদান করেছে। তবে এতকিছুর পরও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব ডাইংগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ না হওয়ায় এলাকা জুড়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, এ  ডাইংগুলোর কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনেক সমস্যায় আছি। এদের কালো ধোঁয়ার কারণে আমাদের বুকে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিশ্বাস নিতে এখন কষ্ট হয়। বৃষ্টির দিনে এই ডাইং এর কারণে পানি পায়ে লাগলে পা পঁচে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তবে কারো অসুবিধার কথা চিন্তা না করে তারা তাদের স্বার্থের জন্য ঝুঁকিতে ফেলছে গোটা এলাকার বাসিন্দাদের। যা মোটেও কাম্য নয়। তিনি এ ডাইং বন্ধ করে দিয়ে এ এলাকার মানুষদের এ অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি জানান।

 

আরেকজন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাদের অরাজকতা। তবে এসব ডাইং নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর তবে জরিমানার পরও নিয়ম বহির্ভুতভাবে কেনো এখনও চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের কোনো উপযুক্ত জবাব দেয়নি কেউ। তবে এলাকাবাসী চায় এসব অবৈধ ডাইং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাকে অভিশাপ মুক্ত করা হোক।

 

এখন দেখার বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তর এলাকাবাসীর এই সমস্যা সমাধানে কি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা এসব ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ দেখতে চায়। কারণ এদের জরিমানা করা হলে তারা পুনরায় এসব কার্যক্রম চালু রাখে। এস.এ/জেসি