বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১   ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উম্মুক্ত থাকলেও এমপির নির্দেশনার অপেক্ষায় প্রার্থীরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:১৯ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার

 

সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পরই এখন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ডামাঢোল বাজতে শুরু করেছে। সেই সাথে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র পদত্যাগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে সে সকল এলাকায় আগামী ৯ মার্চ নির্বাচনের ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ শুন্য থাকায় এই ইউনিয়নের উপনির্বাচনের তপসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন।

 

গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ফতুল্লা ইউনিয়নে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে কোন রকম চললেও আগামী ৯ মার্চ উপ নির্বাচনের মাধ্যমে তার ইতি ঘটতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ মার্চ ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এক ঝাঁক সম্ভাব্য প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। কেননা দলের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে এখানকার চেয়ারম্যান তিনিই হতে পারে যে এমপির আশীর্বাদ পেতে পারেন।

 

এদিকে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত স্বপন চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর থেকে উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসার জন্য একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তার মাঝে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা সাংসদ শামীম ওসমানের আশীর্বাদ পেতে সর্বোচ্চ ভাবে দৌড়ঝাঁপ করছেন। যদিও আওয়ামী লীগ দলীয় হাই কমান্ড মতে ৯ মার্চের নির্বাচনে কিংবা তার পরে যে কোন স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারীরা কেউই তার সিগন্যাল না পাওয়ায় এখনো পর্যন্ত তেমন কেউ মনোনয়ন জমা দেন নাই।

 

তবে তৃনমূল নেতা কর্মীরা বলছে একাধিক প্রার্থী থাকায় দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ এখনো পর্যন্ত প্রার্থীদের মাঝে কোন সমঝোতায় নিয়ে আসতে পারে নাই। সমঝোতা তৈরী জন্য ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত চেয়ারম্যানের বাসা টানা চার দিন দফায় দফায় বৈঠক হয়। তবে কোন আশারুপ ফল আসে নাই। তবে কে তার আশীর্বাদ পেতে যাচ্ছেন তা আজকে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কেননা ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি নিজের মত করে মাঠ গুছিয়ে এমপির নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু তার দাবী তিনি দলীয় এমপি শামীম ওসমানের সমর্থন পাবেন। কেননা তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সাংসদ শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছেন। তার সাথে প্রতিযোগী হিসেবে কোন অংশে পিছিয়ে নেই ফতুল্লা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফতুল্লা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মো. শরীফুল হক।

 

তিনিও তার মত করে নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে এমপির সমর্থন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। এছাড়া এই তালিকায় ফতুল্লা থানা যুবলীগের সেক্রেটারি ফাইজুল ইসলামও রয়েছেন। তবে এই তিনজনের মধ্য দিয়ে সুযোগকে হাতছাড়া করতে চান ফতুল্লা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন। তাদের সাথে উকিঝুকি মারছেন যুবলীগ নেতা আজমত আলী। আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুরও সুযোগের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে ফতুল্লা ইউনিয়নেয়র প্রয়াত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপনের পরিবার থেকে তার সহধর্মিনী সেলিনা সুলতানাও প্রার্থী হতে চান।

 

যদিও দলের নেতা কর্মীদের মাঝে বলাবলি হচ্ছে ইতোমধ্যে তাকে কয়েক প্রার্থী সমর্থন দিয়ে তারা সরে গিয়েছেন। সেই হিসেবে প্রয়াত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপনের সহ ধর্মিনী হওয়ায় তিনিও পিছিয়ে নেই। নিজের মত করে অবস্থান তৈরী করছেন। তারা প্রত্যেকেই এমপি শামীম ওসমানের অনুসারী হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। সেই সাথে শামীম ওসমানকে রাজনৈতিক গুরু হিসেবেও মেনে থাকেন তারা।

 

তবে তারা বিভিন্ন ভাবে দৌড়ঝাঁপ করে তাদের রাজনৈতিক গুরু সাংসদ শামীম ওসমানের আশীর্বাদ পেতে সর্বোচ্চ ভাবে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কেননা যার উপরে গুরুর আশীর্বাদ পরবে সেই হয়তো ফতুল্লা ইউনিয়নের আগামী কর্ণধার কিংবা চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় ভাবে স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকায় প্রার্থী হতে কারো ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই।

 

স্থানীয়রা বলছেন, তারা ভোটারদের থেকে বেশি গুরুর আশীর্বাদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অথচ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের ভোট প্রয়োগে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু ভোটাররাও এখনো সম্ভাব্য প্রার্থীদের তেমন দেখা পান নাই। গুঞ্জন উঠেছে গুরুর আশীর্বাদ নিয়েই প্রার্থী হয়ে ভোটারদের কাছে যাবেন। তার জন্য আজকে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কেননা আগামীকাল মনোনয়ন জমা দিতে হবে।

 

অপরদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘ দিন ফতুল্লা ইউনিয়ন বাসির মানুষ উন্নয়নের মুখ দেখছে না। কেননা এখানে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০২১ সনের ২৬ ডিসেম্বর এই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক মনোনীত হয়ে এখানকার প্রয়াত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি এর আগে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে থেকে তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারেন নাই। তাছাড়া ভারমুক্ত হয়ে ২ বছর না যেতেই দুনিয়া ছেড়ে সৃষ্টিকর্তার ডাকে চলে যান।

 

২০২৩ সনে ২৩ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন মারা গেলে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শুন্য হয়। জাতীয় নির্বাচনের কারণে তা সঠিক সময়ে নির্বাচন করা সম্ভব হয় নাই। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পরই খালি উপেজলা এবং পৌর সভা নির্বাচনের তফসিলের সাথে ফতুল্লা ইউনিয়ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশন। তারপর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে সক্রিয় থেকে নিজেদের মত করে গুরুর দরবারের আশীর্বাদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু এই আশীর্বাদ যে কে পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থকরা।

 

সেখানে অন্যান্য দলের প্রার্থী সহ স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিলেন। কিন্তু এখন দলীয় প্রতীক না থাকায় যে কেউ প্রার্থী হতে কোন বাধা নেই। তবে ফতুল্লা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সকলেই স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। আর এজন্য এই জনপ্রতিনিধিকেও কাকে সমর্থন দিবে তা নিয়ে বিপাকে পরতে হচ্ছে।

 

ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী জানান, আমি দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছি। এমপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে রাজনীতি করে আসছি। আমাদের এমপি যাকে আমরা রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মানি জননেতা সাংসদ শামীম ওসমান যেই নির্দেশনা দিবেন আমরা তার যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিবো। আমি ফতুল্লা ইউনিয়নকে মাদক, ভুমিদস্যু মুক্ত করার জন্য আমাদের এমপির সাথে মিলে কাজ করতে চাই।

 

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সদস্য শরীফুল হক জানান, আমাদের নেতা এমপি শামীম ওসমান আমাদের সকল প্রার্থীকে বসে আলোচনা মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছেন। যাতে করে আমরা একজনকে সমর্থন দিয়ে বাকিরা বসে যাই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমরা ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শওকত আলীর বাসায় বসে আলোচনার মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি নাই। তাই সাংসদ শামীম ওসমান যে নির্দেশনা দিবেন আমরা তাই মেনে নিবো। তাছাড়া আমি দলের হয়ে দীর্ঘ দিন যাবত কাজ করে যাচ্ছি। এমনকি যখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে কবরী এমপি ছিলেন তখনও আমি মামলা হামলার স্বীকার হয়েছি। সেই হিসেবে আমি শতভাগ আশাবাদি সাংসদ শামীম ওসমান আমাকে সমর্থন দিবে।

 

এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানা যুবলীগ নেতা আজমত আলী বলেন, আমি কোনো পদ পদবী ছাড়াই মানুষের সেবা দিয়ে আসছি। তবে এ সেবাটা আরোও ব্যাপকভাবে দেওয়ার জন্য একটা প্লাটফর্ম দরকার হয় সেটা জদি চেয়ারম্যান হিসেবে করতে পারি তবে মানুষকে সেবা দিতে পারবো ব্যাপকভাবে। কিন্তু শামীম ওসমান যদি অন্য কাউকে বিবেচনায় আনে তবে আমি তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবো না। বরং শামীম ওসমান যাকে সমর্থন দিবে তার হয়েই কাজ করবো।

 

সেলিনা সুলতানা বলেন, আমার স্বামীর চেয়ারম্যান এর মেয়াদ প্রায় ৩ বছর বাকি রয়েছে। আমি চাই তার বাকি সময়টা আমি চেয়ারম্যান হিসেবে তার অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ন করি। তবে শামীম ওসমান যা সিদ্ধান্ত দিবেন মেনে নিবো। এখন দেখার বিষয় কি চমক দেখায় শামীম সমান।

 

উল্লেখ্য আগামী ৯ মার্চ ব্যালট পেপারে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যঅনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারী, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই ১৫ ফেব্রুয়ারী, আপিল দায়ের ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারী, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারী, প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারী এবং ৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এস.এ/জেসি