মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ৩১ ১৪৩১   ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ক্লাস চলছে মন্দিরের কক্ষে

মেহেরীন জারা

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:১১ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার

 

কিছুক্ষণ পরপর বাজছে ঢোল-ঢাক ও পুরোহিতের গীতা পাঠ। তার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে পাশের মন্দিরে। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বসছিলো না ক্লাসে, শিক্ষক টেবিলে ডাস্টার পিটিয়েও মনোযোগ বসাতে পারছিলোনা ছাত্র-ছাত্রীদের। এমন দৃশ্যের দেখা মিলে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকার শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দিরের দাপ্তরিক কক্ষে। এই মন্দিরের ভিতর গত নভেম্বর মাস থেকে ক্লাস করানো হচ্ছে ২য় ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।

 

২৬ নম্বর লক্ষ্মীনারায়ণ বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৭ নম্বর লক্ষ্মীনারায়ণ বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলে একই ভবনে। বিদ্যালয়টি দোতলা বিশিষ্ট দেখা যায় ছাদের পলেস্তারা খসে পরছে ক্লাস রুমে। ছাদটি যেন ধসে না পরে তাই বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা এ কারণে ঝুকিঁপূর্ণ ঘোষণা করা হয় এই ভবনটিকে। নিচ তলায় যে তিনটি রুম রয়েছে সেখানে ২ রুমে ক্লাস করানো হয়, শিক্ষার্থী অনুপাতে শ্রেণিকক্ষ কম হওয়ায় গাদাগাদি করে বসে পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা।  

 

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে সাড়ে ৭০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভবনটি পুরোনো হওয়ায় কক্ষগুলোতে জানালাগুলো ভাঙ্গা, নেই বললেই চলে। 

 

বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ঝিমি সাহা জানান, বাচ্চারা স্কুলে ক্লাস করতে পারছে না এটা আর কতদিন চলবে। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়, ভবনটি কখন জানি ভেঙ্গে পরে, একসময় ভবনটির ছয়টি কক্ষেই শ্রেণি কার্যক্রম চলতো। আর মন্দিরে তো স্কুলের মতো পরিবেশ পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক এই কারণে শিক্ষার্থীদের এখন স্কুলে পাঠাতে ভয় করেন অভিভাবকরা। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের বাধ্য হয়ে মন্দিরে ১ কক্ষে ক্লাস করাতে হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও এসে ভবনের এই দূরাবস্থা দেখে গেছেন। এখন শিক্ষক হয়েই বলতে হয় বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়টির এমন বেসামাল পরিস্থিতি থাকাটা লজ্জাজনক।
 
 
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক তাপসি সাহা বলেন, ভবনটি ঝুঁিকপূর্ণ হওয়ার কারণে উপরের ৩টি ক্লাস রুম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বললেই তো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না এ বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষদের জানানো হয়েছে। আর এখানে তো আমাদের বাচ্চারা পড়ে না, এলাকার বাচ্চারাই পড়ে।

 

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিরঞ্জন সাহা বলেন, আসলে আমার এখানে অভিবাবক সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলে ওইসব ব্যাপারগুলো আমি দেখি সাধারণত। এতোগুলো ছেলে মেয়ে ঝুঁকি নিয়ে দ্বিতীয় তলায় ক্লাস করবে এই ভেবে আমরা তাদের মন্দিরে ক্লাস করার জন্য বলেছি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই সরকার যদি এগিয়ে না আসে আমরা সাধারণ মানুষ জমির মামলার সংক্রান্ত বিষয়ে কি করতে পারি। কেউ কি কারো জায়গা ছেড়ে দেবে স্কুলের জন্য। তাই আমরা বাধ্য হয়ে মন্দিরে ক্লাস করাচ্ছি। তবে এ স্কুলের বিষয়ে আমি ডিসি মহাদয়ের সাথে কথা বলেছি তিনি বলেছেন দ্রুত আমাদের একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।       

 

এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রার্থমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসি বেগম বলেন, এই বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। ওইখান থেকে যখন চলে আসবে তখন পরবতী পদক্ষেপ নিব। মন্দিরে যদি পাঠদান না করানো যায় তাহলে কমিটির লোকদের ও প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে একটা ব্যবস্থা নিব। আর স্কুলটিতে একটি জমি সংক্রান্ত মামলা আছে এখানে মামলাটি নিষ্পত্তিকৃত করা হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এস.এ/জেসি