বুধবার   ১৫ মে ২০২৪   চৈত্র ৩১ ১৪৩১   ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

৩শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে মেডি এইডে রোগী টানে 

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২৪ সোমবার

 

# রোগী কালেকশনে সকাল-বিকাল হাসপাতালে দালালি করেন তিনি
# ৩ বছর যাবৎ নবায়ন, প্যাথলজিস্টবিহীনেও চালু এই ডায়াগনস্টিক
# মেডি এইডের প্রতি সিভিল সার্জনের নিরব ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পাশেই খানপুর কাজিপাড়া বটতলা এলাকায় ৩ বছর যাবৎ লাইসেন্স নবায়ন না করে, অস্বাস্থ্যকর প্যাথলিজ এর পাশাপাশি কোন প্যাথলজিস্ট না রেখে এমনকি বর্জব্যবস্থাপনা ক্রটিসহ নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক এক নামধারী প্রতিষ্ঠান। যা পরিচালনা করে আসছেন আজাদুল ইসলাম (আযম) নামের এক কথিত ব্যক্তিসহ তারই কিছু ঘনিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা। একজনের ও নেই ডায়াগনস্টিক বিষয়ে কোন প্রকারের অভিজ্ঞতা।

 

জানা গেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির পাশেই রয়েছে সরকারি ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল সেখান থেকেই বিভিন্ন ডাক্তার ও কিছু হাসপাতালের স্টাফদের ম্যানেজ করে কিছু টাকার বিনিময়ে স্লিপে লিখিয়ে নেয় তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম। রোগীরা বাধ্য হয়ে সেখানকার লোক ও কিছু কথিত ডাক্তারদের পরামর্শে এসে উঠে এই ডায়ানস্টিক সেন্টারে। সেখানে আসলেই সেখানকার দুইজন নার্সের মাধ্যমে কোন প্যাথলজিস্ট ছাড়াই কোন রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে রোগীদের জিম্মি করে জোর পূর্বকভাবে আদায় করছে মোটা অংকের টাকা।

 

তা ছাড়াও তাদের এই মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ভূল পরীক্ষায় অনেকেই বিপাকে পরেছে এমন ও অভিযোগ রয়েছে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের নিরব ভূমিকা কেন তা নিয়ে চলছে নগর জুড়ে নানা প্রশ্ন।

 

এদিকে সরেজমিনে এসে দেখা গেছে, মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশেই সকাল ১০টা থেকে ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আউটডোরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাদুল ইসলাম আযমকে। পরবর্তীতে উনাকে দেখা যায় বিভিন্ন ডাক্তারের রুমে রুমে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে। পরে আবারো বেড়িয়ে কিছু দালাল চক্রকে বলতে দেখা যায় ‘শুধু অন্যান্য ডায়াগনস্টিক দেখলে চলবো না আমাদের দিকে ও একটু নজর রাইখেন মিয়া’।

 

এই বলে উনি হাসপাতালের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে উনাকে বলতে দেখা যায়, ‘অন্য অন্য জায়গা থেকে কম টাকায় পরীক্ষা করিয়ে দিবোনে আসেন’ এমন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় তার সেই কথাকথিত মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নোংরা পরিবেশে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে রোগীকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। যা ইতিমধ্যে সকলেই অবগত আছে যাকে ঘিরে কাজিপাড়া এলাকায় (গলাকাটা) ডায়ানস্টিক নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

 

এদিকে গত (১০ মার্চ) দুপুরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও কৃষিজীবীদের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, স্বাস্থ্য সচেনতা ও মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন বলেছেন, কোন রকম গরমিল পাওয়া গেলেও হাসপাতাল-ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার হোক তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমানে নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে কথিত আযমের মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্ত এটার বিরুদ্ধে কোন প্রকারের জোরদার ভূমিকা নেই নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমানের। তাহলে কি এখানে কোন প্রকারের স্বার্থ রয়েছে কিনা সিভিল সার্জন কর্মকর্তাদের এমনটাই প্রশ্ন তুলছে সুধিমহল।

 

প্রসঙ্গত, গত (২৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে শহরের খানপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল লাইসেন্সেবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলাতে অভিযান দেন সেখানে তারা অভিযুক্ত আয়েশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইমন যার বর্তমান নাম আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর আয়েশা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে আর তাদের হাসপাতাল খুলতে দেখা যায়নি।

 

কিন্তু মেডি এইড ও ইমন ওরফে আহিল ডায়াগনিস্টক সেন্টারকে ঠিকই তালা ভেঙ্গে খুলতে দেখা গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় সিলগালা বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গত (৪ মার্চ) আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অস্থায়ী কালের জন্য বন্ধ ও মালিককে ৭ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন ভোক্তা অধিকার ও ভ্রাম্যমান আদালত।

 

সেদিন মেডি এইডের মালিক আজাদুল ইসলাম (আযম) তার ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেডি এইডে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে ছিলেন। সেদিন কোন মতে বেঁচে যাওয়ায় আর ভ্রাম্যমান আদালত তার ডায়াগনিস্টকের দিকে না যাওয়ায় উনি বেঁচে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত দেদারসে চালু রেখেছে নবায়নবিহীন মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

 

এদিকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ও অবগত রয়েছে তার ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা বা সেখানে কোন প্যাথলজিস্ট বা ভালো সরঞ্জাম নেই। কিন্তু নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা কে পরিচালনা করছেন এমনই প্রশ্ন রয়েছে আশেপাশের বাকি ডাক্তার বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর।

 

তিনি ও আহিলের মালিক রবিনের মতো করে নিজেই নানা প্রকারের পরীক্ষা বা নানা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন এমন প্রশ্ন রয়েছে ডায়াগনস্টিক জুড়ে। তা নিয়ে ও কোন প্রকারের তদন্ত করছে না সিভিল সার্জন অফিস। তা ছাড়া উনি কোথা থেকে চাবি পেয়ে তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালা খুললো তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। বর্তমানে খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের রোগীরা দালাল আযমের ছল চাতুরিতে জিম্মি হয়ে পরছেন। এস.এ/জেসি