রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২১ ১৪৩১   ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

না.গঞ্জের চেহারা পাল্টাবে বদলাবে না ফতুল্লা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৩৪ পিএম, ৫ জুন ২০২৪ বুধবার

 

 

# প্রতিবছরই বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে বক্তব্য দেন শামীম ওসমান
# তবে স্থানীয়দের ছদকায়ে জারিয়া হিসেবে ট্রান্সমিটার দান করার ঘোষণা দেন
# এর আগে ময়লা পানিতে নেমে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেন তিনি

 

পানিবন্দি শব্দটি এখন যেন ফতুল্লাবাসীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাই ফতুল্লাবাসী যতই পানি থেকে দূরে সরে থাকতে চায়, পানি যেন ততই তাদের আঁকড়ে ধরে। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের আসমানী কবিতার একটি লাইন আছে, যেখানে লেখা আছে ‘একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি’। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকার পানিবন্দি অবস্থা দেখলেই যেন পল্লী কবির সেই উক্তিটির কথা মনে পড়ে। 

 

তবে এখানে পানি গড়িয়ে পড়ে না বরং পুরো এলাকাটিকেই ডুবিয়ে ফেলে তাই পল্লী কবির সেই উক্তির সাথে মিলিয়ে বলা চলে ‘একটুখানি বৃষ্টি হলেই ডুবিয়ে ফেলে পানি’। বছরের পর বছর এই পানির সমস্যা নিয়েই এখন তাদের জীবনযাপন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পানি নিয়ে অনেকেই ক্যামেরার সামনে বড় বড় কথা বললেও সেই কথা ভিডিওর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অনেকটা কাজীর গরু খাতায় থেকে যাওয়ার মতোই অবস্থা, গোয়ালে আর আসে না।

 

 বন্যা ছাড়াই এখানকার মানুষকে বন্যার দুর্ভোগ পোহাতে হয়  প্রতিবছর। বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এই ক্ষেত্রে তেমন কিছু একটা করার নেই বলে জানা যায়। তবে প্রতিবছরই বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় সাংসদ ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াকে চাঙা রাখছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। আসলেন, দেখলেন কিন্তু চলে গিয়ে ভুলে গেলেন। শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের চেহারা বদলাতে পারলেও কিন্তু এক ফতুল্লার পানিবন্দির দৃশ্যই দৃশ্যই বদলাতে পারেন না বলে ফতুল্লাবাসীর ক্ষোভ।

 

গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান যখন বলতেছিলেন আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের চেহারা বদলে যাবে। তখন সেখান এক অটো চালককে বলতে শোনা যায়, এমপি সাহেব নারায়ণগঞ্জের চেহারা বদলাইব। অথচ বছরের বছরের পর ফতুল্লার মানুষ যে পানিতে ডুইব্বা (ডুবে) আছে হেই (সেই) চেহারা পাল্টাইতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই হেন (সেখানে) অটো জায়গায় নৌকা চলে হেই চেহারা পাল্টাইবো কেডায় (কে)।

 

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। প্রতিবছরই এখানে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট তলিয়ে একেবারে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে স্থানীয়রা। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তলিয়ে গেছে ফতুল্লার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও অলিগলি। পানি সরে যাওয়ার কার্যকরি কোন ব্যবস্থা না থাকায় এই ভোগান্তি এখন তাদের নিত্যদিনে সঙ্গী। 

 

ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর, সস্তাপুর, রামারবাগ, ফতুল্লা স্টেশন রোড, হাজিবাড়ি রোড, উকিলবাড়ি, লালখা, শিয়াচর ও লামাপাড়া এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুরপাড় সড়কে রিকশার পরিবর্তে ভ্যান এবং নৌকা চলতে দেখা গেছে। কুতুবপুরের দৌলতপুর, আদর্শনগর, মুন্সীবাগ, ইসদাইর, গাবতলী তাগারপার, আজমেরীবাগ, লালখা, কোতালেরবাগেও আছে জলাবদ্ধতা। এখানকার রাস্তা-ঘাটসহ অধিকাংশ বাড়ি-ঘরই এখন পানির নিচে। 

 

এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, পানিবন্দি মানুষকে পানিমুক্ত করা সওয়াবের কাজ। আর এই সওয়াবের কাজের জন্য তিনি ফতুল্লাবাসীকে ছদকায়ে জারিয়া হিসেবে একটি ট্রান্সমিটার দান করবেন বলেও ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, পানিতে নিজের চরণ ডুবিয়ে এমপি ক্যামেরার সামনে ভিডিও ফুটেজে এই সমস্যা সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিভিন্ন সমস্যার চিহ্নিত করে বক্তব্যও দেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি কি-কি করবেন তারও ফিরিস্তি দেন। যা তিনি প্রতি নিয়তই দিয়ে থাকেন বলে স্থানীয়দের দাবি।

 

ফতুল্লাবাসী জানায়, বর্ষা হোক কিংবা না হোক, সামান্য বৃষ্টি আসলেই পানিতে ডুবে ভোগান্তির শিকার হয় এলাকাবাসী। প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতিতে এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আসেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকার পানির সমস্যা কি আজকে নতুন। বছরের পর বছর এই এলাকার মানুষ পানিতে ডুবে থাকে, আর আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এখানে সাথে কয়েকটি ক্যামেরা নিয়ে এসে ক্যামেরার সামনে এই করেঙ্গা, সেই করেঙ্গা বলে গরম গরম বক্তব্য দিয়ে ভিডিও ফুটেজ করে চলে যায়। 

 

আর চলে যাওয়ার পর এই বিষয়টি তাদের আর মনে থাকে না। এই ভিডিও ফুটেজ দিয়ে পার করে দেন এক বছর। পরের বছর আবার যখন মানুষ পানিবন্দি হয়ে হাহাকার শুরু করেন, তখন আবারও ক্যমেরাম্যান নিয়ে আসেন তারা। তারা জানান, গতবছর যখন এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তখন এই জলাবদ্ধতায় মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে শামীম ওসমান পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা দূর না হলে ময়লা পানিতে নেমে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

 

 এর আগে নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি এলাকার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার পানিবন্দি হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট সাময়িক দূর্ভোগের কারণে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন শামীম ওসমান।