রোববার   ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ৩০ ১৪৩১   ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফতুল্লা বিএনপির রোজেলপন্থীরা বাদলের ছায়াতলে

হাবিবুর রহমান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১১:৪৪ পিএম, ১ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার

 

 

# বিএনপি নেতা রোজেলকে সুবিধা দেন বাদল
# আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দিকেই বাদলের শক্ত অবস্থান
# নাশকতায় ঠোকাতে মাথাব্যথা ছিলো না বাদলের

 

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.সাইফুল্লাহ বাদল। যিনি সকলের কাছে বর্তমানে অকার্যকর এবং অসুস্থ নেতা হিসেবেই আখ্যা পেয়েছেন। তার অসুস্থতায় দৈন্যদশায় পরিণত হয়েছে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ। যার সত্যতা এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফুটে উঠেছে। এদিকে টানা ১৯ বছর ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে এম. সাইফুল্লাহ বাদল অনড় থেকে ও সংগঠনে ঐক্যবদ্ধতা ও শক্তিশালী করতে ব্যর্থতার প্রমান দিয়েছেন।

 

 দল দৈন্যদশা থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, কয়েকদিন পরপরই সভাপতি সাহেব অসুস্থ হয়ে পরায় ফতুল্লার দায়িত্ব নড়বড়ে হয়ে পরেছেন। গত কয়েক ট্রাম্পে কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে তিনি থাকায় ফতুল্লার দায়িত্ব থেকে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু যখনই কোন সুবিধা ভোগের প্রয়োজন পরে তখনই তিনি ফতুল্লা নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখেন এর বাহিরে আর নয়। 

 

তা ছাড়া তিনি কাশীপুর ইউনিয়নকে একগুচ্ছ করে রেখেছেন। এদিকে নেতাকর্মীদের আরো অভিযোগ রয়েছে যে, সাইফুল্লাহ বাদলের সাথে বিরোধী দলের ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেলের সাথে দমরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে। আর তার বিশেষ কারণ হলো তারা দুইজন একে অপরের মামাতো-ফুপাতো ভাই। সেই সম্পর্কের জেরে সব সময় একে অপরকে ছাড় দিয়েই রাজনীতিতে টিকে আছেন। এদিকে যখন রোজেল ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাইফুল্লাহ বাদল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তখন দুই ভাই একত্রিতভাবে ফতুল্লায় রাজত্ব চালাতেন। 

 

তখনই ফতুল্লার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ঝুটসহ বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনা করতেন এই রোজেলের আরিফ, নাদিম হাসান মিঠু, গিয়াস উদ্দিন লাভলু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাসেলসহ আরো কয়েকজন। আর সেই অপকর্ম সর্বদাই লুকিয়ে রাখতেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাদল। তা ছাড়া রোজেল ও সাইফুল্লাহ বাদল যে একে অপরের পরিপূরক তা গত ১৮ জুলাই এবং ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তার নিরবতায় বুঝা গেছে।

 

 কোটা সংস্কার আন্দোলন গিরে গত ১৮ জুলাই এবং ১৯ জুলাই ছাত্রদের সাথে মিশে বিএনপি জামাত স্বরণ কালের হামলা, ভাঙচুর, সন্ত্রাসী তান্ডবলীলা চালান। এই হামলায় নারায়ণগঞ্জে কয়েক শতাধিক মানুষ আহত সহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। সেই সাথে সরকারি-বেসকারি স্থাপনা থেকে শুরু করে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান নারায়ণগঞ্জে ৫০০ কোটি টাকা। তবে ফতুল্লা থানাধীন জালকুড়ি, শিবু মার্কেট, সাইবোর্ড এলাকায় অনেক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসলে ও বিএনপির সাথে বিদ্রোহী করা। 

 

 ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেলের নেতৃত্ব ও বিভিন্নস্থানে তাণ্ডবলীলা পরিচালিত হতে দেখা গেছে। ওই সময় তার সাথে জড়িত ছিলো স্থানীয় যুবদল নেতা, ছাত্রদল নেতাসহ অনেকেই। এদিকে এই রোজেল বিগত দিনে ফতুল্লার সাবেক নেতা শাহ-আলমের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে পরিচিত ছিলো। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জের আরেক বিএনপি নেতা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সাথে ও ছিলো তার ঘনিষ্টতা কিন্তু বিভিন্ন বিরোধে কিছুদিন বিদ্রোহ করলে ও আন্দোলনে তাদের এক সাথেই দেখা গেছে বলে শোনা গেছে একটি সূত্র দ্বারা।

 

 তা ছাড়া রোজেল বর্তমানে ফতুল্লা থানাসহ কয়েকটি থানায় নাশকতা মামলার আসামী হলে ও তিনি ভরসা রেখেছেন তার ভাই সাইফুল্লাহ বাদলের উপরে। তিনি তাকে নানা কৌশলে বিগত দিনের মতোই বাঁচিয়ে দিবেন বলছে অনেকেই। অপর দিকে জামাত বিএনপির হামলায় ভাঙচুর তান্ডব প্রতিরোধে ফতুল্লা থানা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.সাইফুল্লাহ বাদলসহ একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা মাঠে নামেন নাই। তারা নিজেদের গাঁ বাচিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। এদিকে এই বাদল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অতন্ত ঘনিষ্ট আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত। 

 

সেই সুবাদে তিনি সব সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে অনেকটাই সম্মানীত ব্যাক্তি হিসেবেই রয়েছেন। কিন্তু গত ১৯ জুলাই শামীম ওসমান নাশকতা বিরোধী শ্লোগান দিয়ে মাঠে নামলে ও তার পাশে এই আস্থাভাজন সাইফুল্লাহ বাদল ছিলেন না। এমনকি বাদল অসুস্থতার জন্য না আসতে পারলে ও তার কাশীপুর থেকে তার ছেলে নাজমুল হাসান সাজন, পিএস রেহান শরীফ বিন্দু, কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী, সাধারণ সম্পাদক এম. সাত্তারসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকমীরা ছিলেন না মাঠে। 

 

তাদের মন্তব্য আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের মাঠে নামার কোন নির্দেশ দেন নাই। যাকে ঘিরে তাদের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছেন। কিন্তু বাদলের জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ও কোন অসুবিধা নেই। কারণ তিনি জানেন বিগত দিনের মতোই দিব্বি ভাবে তিনি তার ফুপাতো ভাই বিএনপি নেতা রোজেলের শেল্টারে থাকতে পারবেন। সেই পরিলক্ষিত বোঝা যায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই জায়াগায় এম. সাইফুল্লাহ বাদলের শক্ত অবস্থান রয়েছেন।

 

এদিকে আরো জানা গেছে, গত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতা থাকা কালীন সময়ে এই ফতুল্লা থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি রোজেলের শেল্টারেই এই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বাদল দিব্বি চলা ফেরা করতেন। তার রোজেলের সুবাদে তার নামে তেমন কোন মামলাও হয় নাই তখন। সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি বাদল একই থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি রোজেল মামাতো-ফুপাতো ভাইয়ের সম্পর্ক। যা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক বোদ্ধমহল মনে করেন, আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেও সাইফুল্লাহ বাদলের কোন সমস্যা নেই। 

 

বর্তমানে তিনি যেভাবে তার ভাই রোজল ও তারপন্থীদের ছায়াতলে রেখেছেন আগামীতে সেই উসুল পূরণ করবেন ভাই রোজেল। এদিকে সেই সুবাদে বর্তমানে কাশীপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলতে কিছুই বোঝা যাচ্ছেন না। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. আশরাফুল আলম বাদলের অন্যতম সহযোগী যিনি বর্তমানে কাশীপুরে বিএনপি নেতা আরিফ মন্ডল, লাভলু, সেলিম জাভেদ, আনিস এদের সাথে অনেকটাই সুসম্পর্ক করেই চলেন। একই সাথে বাদলের সহযোগী অনেকেই আওয়ামী ণীগ-বিএনপি একই সাথে জায়গার ব্যবসা থেকে শুরু বিভিন্ন ব্যবসার সাথে একত্রিতভাবেই ধহরম-মহরম সম্পর্ক করেই চলাফেরা করেন। 

 

আর খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে, কাশীপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে যাদের যাদের মধ্যে শক্তিশালী তাদের মধ্যে যারা বিএনপির বেশির ভাগই ফতুল্লা থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহিদ হাসান রোজেলের লোকজন। এদিকে গতকাল জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে ফতুল্লা থানা বিএনপির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বাদল অনড় ভূমিকা পালনের গর্জন দিলে ও তার ফুপাতো ভাই রোজেল তা পন্থীদের ছাড় দিয়েই তিনি নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করবেন বলছেন স্থানীয়রা।