বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১   ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

না.গঞ্জে ছাত্রলীগের নেতারা ছিলেন বেপরোয়া

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:৫১ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার

নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগের বিগত সময়ের নেতারা নানা অপকর্মের মধ্য দিয়ে জিম্মি করে রাম রাজত্ব চালিয়েছেন। টেন্ডারবাজি, চাদাঁবাজি, জুটসন্ত্রাসী,নারী কেলেঙ্কারি,ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ভুমি দস্যুতা গ্রুপ তৈরি করে মানুষদের জিম্মি করে এমন নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে অপরাধ কর্ম চালিয়েছে। এমনকি বিগত নির্বাচনের সময় কেন্দ্র দখল করার কন্টেক নিয়ে প্রশাসনের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য বাহিনী তোলারাম কলেজে তারা জিম্মি করে নিজেদ্রে কব্জায় রেখে সেখানে টর্চার সেল তৈরী করেছেন। কিন্তু বিগত সময়ের দাপটে ছাত্রলীগের নেতারা আজ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও নারায়ণগঞ্জের কোন নেতা তা প্রতিবাদ করতে পারেন নাই। এমনকি তাদের কোন বিবৃতি পর্যন্ত নেই।

 

এদিকে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্ববর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ২৩ অক্টোবর বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি এক সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। তার আগেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাপরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

 

অপরদিকে বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগের দায়িত্বে এসেছে তারাই প্রত্যেকেই এই ধরনের নানা অপকর্মে জরিয়ে পরেছে। তারা কেউ ক্লিন ইমেজের ছাত্র রাজনীতিতে প্রতিফলন দেখাতে পারে নাই। বরং তারা বিতর্কিত হয়েছে। বিগত সময়ে গডফাদার শামীম ওসমানের পুত্র ওয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ নানা অপকর্মে জরিয়ে অবৈধ ভাবে টাকা কামিয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে। রিয়াদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, জুটসন্ত্রাসী, চাদাঁবাজি, নির্বাচনের কেন্দ্র দখল, মাদক ব্যবসার গড়ে তোলে অবৈধ ভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

 

রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিক প্রধানকে আলাদাভাবে শেল্টারের মাধ্যমে মাসদাইরের বাড়ৈভোগ এলাকার ত্রাস হিসেবে সৃষ্টি করেছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া অনিক প্রধানের নেতৃত্বে সেই এলাকায় মাদকব্যবসা ও ছিনতাই চলমান কার্যক্রম চালিয়েছে রিয়াদ। মাসদাইর বাড়ৈভোগ এলাকার ফারিয়া গামেন্টর্স থেকে শুরু করে গাইবান্ধা বাজারের সকল বাড়ি ওয়ালা ও দোকানদারেরা  কথায় কথায় রিয়াদের নামে ভয় পেত। আর কিছু করতে হলে রিয়াদের নামে চাঁদা দিয়ে যে সব কাজ করে সেই লক্ষ্যেই মূলত তার চাচাতো ভাই অনিক প্রধানকে তৈরি করে মাসদাইরের বিখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। রিয়াদ নিয়মিতই অনিককে বলতো তর সকল কাজে যদি কেউ আসে ফালিয়ে দিবি আমি বাকি সব দেখবো। 

 

এই সকল অপকর্ম করে মাসদাইর এলাকার প্রধান বাড়ির ছেলে রিয়াদের ভাগ্য ঘুরে যায় গত এক দশকে। জালকুড়ি ও ভূইগড়ে ৫০ শতাংশ জমির মালিক হয়েছেন তিনি। যার মুল্য হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা। ছাত্রলীগের প্রভাবে অয়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কোটি টাকা কামিয়েছেন ঝুট ব্যবসা ও টেন্ডারবাজি করে। এছাড়া তোলারাম কলেজে ছাত্র সংসদকে বানিয়েছে ছাত্রলীগের টর্চার সেল। সেই সাথে ভর্তি বানির্জ করেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হাবিবুর রহমান রিয়াদ।

 

অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক পরিচয়ে নানা অপরাধের জরিয়ে অবৈধ ভাবে কয়েক শ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। টেন্ডারবাজি, ব্যবসায়ীদের থেকে চাদাঁবাজি করে বেরিয়েছেন তিনি। এলজিইডি থেকে যারা টেন্ডার পেয়ে কাজ করেছে তারা সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি নিপুকে পার্সেন্টটিস দিতে হয়। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি  আজিজুর রহমান আজিজ টেন্ডারবাজি,চাদাঁবাজি,জুটসেক্টর দখল কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়েছে। 

 

এছাড়া এ্কই অপরাধে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসমাইল রাফেল এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসনাত রহমান বিন্দু অপকর্ম করায় এখন পালিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। যদিও কয়েক দিন আগে মালয়েশিয়ায় নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের রিয়াদ ও রাফেলকে দেখা গেছে এমন একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। তাদের আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালিন সময়ে তাদের দাপটে মানুষ এতোদিন ভয়ে সময় কাটিয়েছে। কিন্তু নিষিদ্ধ সংগঠনের এই নেতারা এখন পালিয়ে রয়েছে। আর এতে করে স্বস্তিতে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ।