
এবার বেশি জলাবদ্ধতায় ভুগবে ফতুল্লাবাসী
ফতুল্লার জনজীবন এখন জলাবদ্ধতার করুণ বন্দিত্বে। বর্ষা শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি থাকলেও রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসবকিছু পানির নিচে। অথচ এই বিপর্যয়ের দায় নিতে কেউই রাজি নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং প্রশাসনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই লাখো মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
প্রতিবছর বর্ষার আগে অন্তত ড্রেন পরিষ্কার, নালা সংস্কার বা পাম্প বসানোর মতো অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তাতে কিছুটা হলেও পানি নিষ্কাশনের পথ তৈরি হতো। কিন্তু এবছর দৃশ্যপট পুরোপুরি ভিন্ন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা বেহাল, পরিচ্ছন্নতা কার্যত অনুপস্থিত। চারদিকে নোংরা পানি, দুর্গন্ধ এবং জীবাণুবাহী আবর্জনার স্তূপে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বৃষ্টি হলেই দোকানে হাঁটুপানি ওঠে। মালপত্র নষ্ট হয়, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বারবার অভিযোগ দিয়েছি, কেউ শোনে না। মনে হয়, আমরা মানুষ না, শুধু ভোট ব্যাংক।”
এক গৃহবধূ বলেন, “ছয় দিন ধরে রান্নাঘরে পানি জমে আছে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে। সাপে কেটেও মরতে পারি, কিন্তু কাউকে দেখি না ব্যবস্থা নিতে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ, ড্রেন বন্ধ করে ভবন নির্মাণ ও খাল দখলই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। কিন্তু এসব সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আজও নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেবল ফাইল ঘোরাতে ব্যস্ত।
সামাজিক আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই অবহেলার জবাবদিহিতা এখন সময়ের দাবি। স্থানীয়দের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু পরবর্তীতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
প্রশ্ন উঠছে আর কতদিন ফতুল্লার মানুষ এমন দুর্দশা সহ্য করবে? আর কতদিন সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাবে?
স্থানীয়রা দ্রুত নদী ও খাল পুনরুদ্ধার, ড্রেন সংস্কার এবং কার্যকর জলাবদ্ধতা ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তারা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
ফতুল্লা ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতায় ভুগছে ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউপি’র ৪নং ওয়ার্ড সদস্য কাজী মাইনউদ্দিন যুগের চিন্তা প্রতিনিধিকে বলেন, “বিগত বছরগুলোতে বর্ষার আগেই জেলা পরিষদ কিংবা স্থানীয় সরকার নানা উদ্যোগ নিত। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি জলাবদ্ধতা নিরসনে। যার ফলে এবার প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতায় ভুগবে।”
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ফতুল্লাবাসীকে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করা হয়। এখন দেখার বিষয় ফতুল্লার এই চরম জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না।