Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

কদম রসুল সেতু নিয়ে নতুন বিড়ম্বনা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

কদম রসুল সেতু নিয়ে নতুন বিড়ম্বনা

ফাইল ছবি

Swapno

# ২০১৭ সালে হাজীগঞ্জে ৬৪০ কোটি টাকায় ৯৪০ মিটার সেতুর পরিকল্পনা করা হয়

# যেখান দিয়ে সহজ হবে সেখানেই হোক, কিন্তু আমরা সেতু চাই : বন্দর নাগরিক কমিটি

# নবীগঞ্জ দিয়ে করলে এতদিনে সেতুর নির্মাণ কাজও শেষ হয়ে যেতো : বন্দরবাসী

# ৫নং ঘাট দিয়ে ঝামেলা হবে জেনেও বন্দরবাসীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে : সচেতন মহল


সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরে শীতলক্ষ্যা সেতুর অবস্থান নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে। অর্থাৎ সেতুটি কোন জায়গায় নির্মাণ করলে বেশি সুবিধা এবং কোন জায়গায় নির্মাণে ঝক্কি ঝামেলা বেশি পোহাতে হবে তাই হচ্ছে আলোচনার শিরোনাম। এরই মধ্যে গত এক সপ্তাহ জুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে শীতলক্ষ্যা সেতুটি কোন জায়গায় নির্মাণ করলে তা বাস্তবায়ন সহজতর হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন শহরের বুক চিড়ে পাঁচ নং খেয়াঘাট দিয়ে এই সেতু নির্মাণ করলে বেশি সুফল পাওয়া যাবে। আবার কেউ বলছেন একেবারে শহরের ভিতরে না করে শহরের মুখে অর্থাৎ হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় এই সেতু নির্মাণ করলে সব দিক দিয়েই বেশি সুফল ও লাভবান হওয়া যাবে। 



অন্যদিকে সেতু তৈরি করার আগে সেতুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করা জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল। তাদের মতে এরই মধ্যে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ভুল নকশায় ভূগছে নারায়ণগঞ্জবাসী। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হলেও প্রস্তুত হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকে না। পরে সেই ভুলের খেসারত দিয়েই সেই ক্ষত বহন করে যেতে হয় সাধারণ জনগণকে। তাই এরই মধ্যে সেতু নির্মাণে নকশা নিয়েও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে ব্যাপকভাবে।



সচেতন মহলের ধারণা, কোন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও জরিপে ঘাটতি থাকলে তা সুফলের জায়গায় উল্টো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে আমাদের এই নারায়ণগঞ্জেই বেশ কিছু সচেতন নামধারী লোক আছে যারা সব সময় শহরবাসীর ভোগান্তি কমিয়ে আনার পরিবর্তে ভোগান্তি বাড়তেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একই সাথে নিজেদের পান্ডিত্য জাহিরে প্রশাসনকে সহযোগিতার নাম করে উল্টো তাদের প্রচেষ্টাকে কন্টকপূর্ণ করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরা কোন একটি কাজকে সহজতর না করে হরেকরকম গিঞ্জি পাকিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।



বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান হাবিব জানিয়েছিলেন, ‘জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে দুটি সেতুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর একটি হলো হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাট এবং অপরটি হলো শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘেষে ৫নং খেয়াঘাট দিয়ে। এরমধ্যে বন্দরের নবীগঞ্জ হতে শহরের হাজীগঞ্জ খেয়াঘাট নিয়ে ৯৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি চার লেনের হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। যার মধ্যে নবীগঞ্জ অংশে থাকবে ২৮০ মিটার, নদীর মাঝখানে থাকবে ৪২০ মিটার ও হাজীগঞ্জ এলাকায় থাকবে ২৪০ মিটার। চার লেনের এই সেতুর দুটি লেন দিয়ে সাধারণ মানুষ পারাপার হবে। আর বাকি দুই লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৪০ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের যে তিনটি ধাপ পেরুতে হয় সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানানো হয়। সে সময় তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় সেতুটি হলো শহরের ৫নং খেয়াঘাট এলাকায়। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫শ কোটি টাকা। এখন শুধু সরকার অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে।’



হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটে ফেরির একাধিক যাত্রীর সাথে এই সেতুর অবস্থান নিয়ে আলোচনা করলে তারা জানান, এই কদম রসুল সেতুর প্রকল্পটি নিয়েও বছরের পর বছর চলছে এক ধরণের নাটকীয়তা। যেখানে সেতুটি নির্মাণ সহজ ব্যবস্থায় ও কম ভোগান্তিতে করা সম্ভব এবং যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করলে তা শহরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়ও পড়বে সু-প্রভাব। সেখানে নির্মাণ না করে একটি গিঞ্জিপূর্ণ এলাকায় যেখানে বিভিন্ন বাধা বা সমস্যা অবধারিত, নির্মাণ ব্যয় বেশি, অবকাঠামো ভাঙা ও জনদুর্ভোগ বেশি, যেখান দিয়ে করার নাম করে বিভিন্ন অসুবিধার অজুহাতে দীর্ঘদিন যাবত বন্দরবাসির চোখের সামনে মুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সেই চক্রটি এখন আবারও সেই একই প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।



সেতু নির্মাণের এলাকা হিসেবে হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটকে প্রাধান্য দিয়ে তারা জানান, এরই মধ্যে বন্দরবাসীর যাতায়াতের জন্য দুটি ফেরিঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর একটি ৫নং ঘাট ফেরিঘাট এবং দ্বিতীয়টি এই ফেরিঘাট অর্থাৎ হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরিঘাট। এর মধ্যে ৫নং ঘাটের ফেরি প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। কিছুদিনের মধ্যেই তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে হাজীগঞ্জ ফেরিঘাটটি বন্ধ হওয়া দূরের কথা এই ঘাটটি এখন বন্দরবাসির চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। তবে তাদের মতে যে জায়গায়ই হোক না কেন এই মুহুর্তে বন্দরবাসির জন্য একটি সেতুর খুবই প্রয়োজন।



এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর নাগরিক কমিটি (বনাক) এর সভাপতি ডা. আব্দুস সাত্তার দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, এই সেতুটি নিয়ে বিভিন্নভাবে রাজনীতি করা হয়েছে। আসলে ওসমান পরিবার বলেন আর তাদের প্রতিপক্ষ বলেন, তারা কেউ আমাদের বন্দরবাসির ভালো চায় না। তিনি বলেন, নবীগঞ্জ দিয়ে এই সেতুটি করলে হয়তো এই সেতুটি এতদিনে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। যদিও নবীগঞ্জ দিয়ে করলে অনেক সহজ হতো এবং ঝামেলা কম হতো তারপরও আমরা চাই না আর কোন অযুহাতে বন্দরবাসি এই সেতু হতে বঞ্চিত হোক। তাই যেখান দিয়ে সেতু নির্মাণ করা সহজ হয় এবং প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন হয় সেখান দিয়েই সেতু হোক, তারপরও আমরা একটি সেতু চাই।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন