ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার গ্রেপ্তার আতঙ্কে, সেবায় স্থবিরতা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার গ্রেপ্তার আতঙ্কে, সেবায় স্থবিরতা
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে এখন কার্যত জনশূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে মামলার কারণে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ আটক, কেউ পলাতক, আবার কেউ জামিনে মুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অফিসে ফিরছেন না। ফলে জনসেবামূলক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিট। এখানে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প, কর আদায়, গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ ইউপিতেই এসব কার্যক্রম এখন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সর্বশেষ বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভায় অংশ নিতে এসে স্থানীয় জনতার হাতে হেনস্থার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আসামি বাসেদ মেম্বারকে পুলিশের হাতে তুলৈ দেওয়া হয়। এই ধরণের ঘটনার পর থেকে অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে তীব্র ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকের নামে মামলা থাকায় তারাও গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউবা গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্ত হলেও নিরাপত্তার অভাবে পরিষদে ফেরেননি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দেখা মিলছে না। কোথাও এক-দু’জন মেম্বার উপস্থিত থাকলেও পরিষদ কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। গ্রামবাসী জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, বিভিন্ন ভাতা, দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প বা উন্নয়নমূলক কাজে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে অনেক পরিষদের প্রধান ফটকই দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে।
তবে ফতুল্লা ইউপিতে ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রমে স্থবির, সেখানে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রম। এখানে বাসেদ মেম্বার গ্রেফতার হলেও বাকি মেম্বার ও চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করছেন এবং সেবার মান বজায় রাখছেন। ফলে এ ইউনিয়নের জনগণ এখনও তুলনামূলকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা স্থানীয় উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং অবকাঠামো নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা যদি গ্রেফতার আতঙ্কে বা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে জনগণের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হবে।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের হাতে হেনস্থার পর জনপ্রতিনিধিদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনাকে তারা উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন। এর ফলে অন্য জনপ্রতিনিধিরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, যা পরিষদ কার্যক্রমকে আরও পঙ্গু করে দিচ্ছে।স্থানীয়রা বলছেন, পরিষদের কাজ বন্ধ থাকায় জন্মসনদ ও মৃত্যু সনদ সংগ্রহ, বিভিন্ন সরকারি সেবা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার প্রক্রিয়া আটকে গেছে। রাস্তা মেরামত বা ড্রেন পরিষ্কারের মতো জরুরি কাজও থমকে আছে।
নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অনুপস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় ও আস্থার অভাবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চায় সকলেই।