Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

প্রশাসন-ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ

যানজট নিরসনে ফিরছে স্বস্তি

Icon

রাকিবুল ইসলাম :

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

যানজট নিরসনে ফিরছে স্বস্তি

যানজট নিরসনে ফিরছে স্বস্তি

Swapno

# যানজটের বিষফোঁড়া থেকে শহরবাসিকে স্বস্তিতে রাখতে চাই : সোহেল


নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট ছিল নিত্যদিনের ভোগান্তি। সপ্তাহখানেক আগেও যানজট নামক বিষফোঁড়ার যন্ত্রণায় প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নগরবাসি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তাছাড়া ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোও যানজট নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের  নিকট স্বারকলিপি প্রদান করেন। এছাড়া এই মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটিতেও যানজট বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় উঠে আসে। তবে যানজট নিরসনের জেলা প্রশাসকের কাছে যথেষ্ঠ জনবল কিংবা লোক না থাকায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি ও বিকেএমইএ থেকে জনবল চান তারা। তারই প্রেক্ষিতে চেম্বার অব কমার্স এর সিনিয়র সহ সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল নিজে দায়িত্ব নিয়ে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া ও মডেল গ্রুপের কর্ণধার ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মাসুদুজ্জামান মাসুদের সাথে আলোচনা করে জেলা প্রশাসককে ২০ জন শিক্ষার্থী দেন। যারা নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার সুফল নগরবাসি পেতে শুরু করেছে যানজটের চিত্র এখন বদলে গেছে। এখন আর আগের মত নারায়ণঞ্জ চাষাঢ়া মোড়ে ৩০ মিনিট  বসে থাকতে হয় না। জ্যামের ভোগান্তিহীন ভাবে শহরের মানুষ চলাচল করছে। গতকাল সরেজমিনে দেকা যায় নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া মোড়ে এখন আগের মত জ্যাম নেই। পরিবহন গুলোকে বেশিক্ষণ সিগন্যালে থাকতে হয় না।  


এদিকে নগরবাসীকে যানজট নামক সমস্যা থেকে নিরসন করতে বিভিন্ন সময় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। যদিও ২০ জন লোক দেয়ার আগে সিটি করপোরেশন থেকে প্রায় ৪০ জনের বেশি যানজট নিরসন কর্মী হিসেবে কাজ করেও এই সুফল দিতে পারে নাই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ার মোড়ে কোন অবৈধ স্ট্যান্ড থাকতে পারবে না বলে জানানো হয়। তাছাড়া চাষাঢ়া মোড় কোন বৈধস্ট্যান্ড নেই। অবৈধ ভাবে ৬টি স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে এখানে। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা ট্রাফিক পুলিশ ইতোমধ্যে চাষাঢ়া মোড়ের স্ট্যান্ডগুলো কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এছাড়া শহরের বড় অটো ইজিবাইক প্রবেশ বন্ধ করায় রাস্তাও অটো মিশুক থেকে অনেকটা দখল মুক্ত রয়েছে। দিনের বেলায় শৃঙ্খলা থাকলেও রাতের বেলায় অটো ইজিবাইক গুলো শহরকে দখল করে নেয়। বিশেষ করে রাত ৮ টার পর থেকে রাস্তা দখল নেয় অটো ইজিবাইক গুলো। তবে দিনের যানজটের ভোগান্তি থেকে স্বস্তি পাওয়ায় নগরবাসি চেম্বার অব কমার্স থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।


তথ্যমতে, গত সপ্তাহে জেলা প্রশসাক জাহিদুল ইসলাম মিঞার নিকট ২০ জন শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করেন। তার মাঝে ১০ জন শিক্ষার্থী প্রদান করেন মডেল গ্রুপের পক্ষ থেকে। এই ১০ জনের প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা খরচ তারা বহন করবেন। বাকি ১০ জন শিক্ষার্থীর প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অর্থ বহন করবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বয় করে মাঠে নামার পর থেকে যানজট সমস্যা থেকে আগের থেকে অনেক উন্নতির দিকে আসছে বলে জানান নগরবাসি।  


অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের যানজট সমস্যা নিয়ে সকল প্রশাসনকে একত্র করার মধ্য দিয়ে যানজটের বিষফোঁড়াকে কিভাবে স্থায়ী সমাধানে রূপ দেয়া যায় তা নিয়ে সকলের সাথে আলোচনা করছেন ব্যবসায়ী নেতা মোরশেদ সারোয়ার সোহেল। কেননা স্থায়ী ভাবে সমাধান পেতে হলে এখানে প্রশাসনের ট্রাফিক পুলিশ, জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, রোডস এন্ড হাইওয়ে এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমইএ’র সমন্বয়। এই পাচঁটি সংস্থার ব্যক্তিরা এক সাথে সমন্বয় করে তাহলে হয়তো নগরবাসিকে স্থায়ী ভাবে সমাধানের পথ তৈরী হতে পারে। তাছাড়া হকাররা ফুটপাত ছেড়ে এখন সড়কে নেমে এসেছে এজন্য তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। কেননা  হকাররা আগে সড়কে দাড়াত না। কিন্তু তারা এখন ফুটপাত ছেড়ে সড়কে নেমে এসেছে।  


জানাযায়, জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম এই জেলায় এসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জকে গ্রীন এন্ড ক্লিন হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে গত মাসে তিনি নারায়ণগঞ্জে এক লাখ গাছ লাগিয়ে গ্রীনের দিক দিয়ে সফলতা পেয়েছে। কিন্তু তিনি এখন ক্লিনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এক খাল পরিষ্কারের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সেই সাথে দখল হওয়া খাল উদ্ধার করছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ট্রাক মযলা ফেলেছে বক্তাবলীতে।আরেক দিকে শহরের যানজট মুক্ত রাখার জন্য চাষাড়া মোড়ের অবৈধ স্ট্যান্ড দখল মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সাথে নগরীর যানজট মুক্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যার ফল নগরবাসি পেতে শুরু করেছে।


নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা চাচ্ছি যানজট নামক বিষফোড়া থেকে শহরবাসিকে কিছুটা হলেও স্বস্থিতে রাখার জন্য। আর এজন্য এর সাথে প্রশাসনের যতগুলো বিভাগ রয়েছে সকলকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আগাতে চাই। আমরা চাই অন্তত মানুষ যেন চলাচল করতে পাড়ে সেই ব্যবস্থাতা হোক। আর এজন্য আমাদের চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমইএ অতীতেও ভুমিকা রেখেছে এখনো রেখে যাচ্ছে। এছাড়া মডেল গ্রুপের ১০ জন ছেলে এবং চেম্বার অবকমার্সের ১০ জন ছেলে পুলিশ প্রশাসনের সাথে মিলে ট্রাফিকের ভুমিকায় যানজট নিরসন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি ইতোমধ্যে তার প্রতিফল নগরবাসি পেতে শুরু করেছে। আমরা চাই শহরের মানুষ নিজেরাও সচেতন হয়ে দায়িতশীল হোক। কেননা তাদেরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তাহলে দেখা যাবে সকলে মিলে শহরটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলা যাবে।


নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে যানজট। ক্রমে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছিল। আমরা ‘ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বাড়তি জনবলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এতে নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত করতে পারছে।


চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আহমেদুর রহমান তনু বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জের কল্যাণে চেম্বার অব কমার্স এবং মডেল গ্রুপের সহযোগিতায় যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বলব এই যানজট নিরসনে সবাই এগিয়ে আসেন। সবাই মিলে যেই কাজটা করা সম্ভব তা একক ভাবে সম্ভব না। ২০ জনের টিম নিয়ে যানজট নিরসনে আমরা মাঠে নেমেছি। যারা যাত্রী হিসেবে শহরে চলাচল করেন তারা যেন চালককে ডিসি প্লিন ওয়েতে চলাচলে বাধ্য করেন। যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে  যারা যাত্রী, চালক, গাড়ির ড্রাইভার পরিবহনের মালিক রয়েছে তাদেরকেও সহযোগিতা করতে হবে। যারা বাস মালিক রয়েছেন তাদের বলবো আপনাদের ড্রাইভাররা যেন যত্রতত্র জায়গায় বাস থামিয়ে না রাখেন।


ট্রাফিক পুলিশের টিআই করিম বলেন, আমরা চাষাড়া মোড়কে যানজট মুক্ত রাখার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে চাষাড়া মোড়ের স্ট্যান্ডগুলো সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে চেম্বারের ২০ জন শিক্ষার্থী আমাদের সাথে কাজ করছেন। আশাকরি শহরের যানজট থেকে নগরবাসিকে স্বস্তিতে রাখতে পারতাছি।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন