ব্যাটারী চালিত যানবাহনের দৌরাত্ম্যে ধুঁকছে জনগণ

লতিফ রানা
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68a5713f46ef8.jpg)
ব্যাটারী চালিত যানবাহনের দৌরাত্ম্যে ধুঁকছে জনগণ
# গাড়ি নিবন্ধন এবং চালকদের লাইসেন্স এর আওতায় আনার দাবি
# লাইসেন্স নকল না করার নিরাপত্তার মাধ্যমে অনুমতি দেওয়া যায় : জেলা প্রশাসক
# সড়ক দুর্ঘটনার ৮০ শতাংশই এদের কারণে হয় : আফজাল হোসেন পন্টি
নারায়ণগঞ্জ শহরের মূল সড়কে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে ব্যাটারি চালিত যানবাহনের সংখ্যা। বর্তমানে শহর ও এর আশেপাশে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ হাজার এ ধরণের যানবাহন চলাচল করে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। এর মধ্যে বিশেষ স্টীকার কিংবা কার্ড ব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকা লুটিয়ে নিচ্ছে বলে এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়েছে। যানবাহন চালকসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ৫ আগস্টের আগে প্রায় ৫০ হাজার স্টীকার ও কার্ড প্রদান করা হয়েছে বলেও খবর প্রকাশ হয়েছে। যার মধ্যে প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিসহ কিছু নামধারী সাংবাদিক এই বাণিজ্যে জড়িত বলেও জানা গেছে। এখনও বিভিন্ন ব্যাটারি চালিত যানবাহনের সামনে সেসব স্টীকার কিংবা বিভিন্ন কথিত সাংবাদিকের নাম ও মোবাইল নাম্বার দেখা যায়। অথচ এসব অদক্ষ এবং উগ্র চালকদের নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোর কারণে শহর, বন্দর ও গ্রামের অলিতে গলিতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। হাত ভাঙ্গা, পা ভাঙ্গা, হাড় ভাঙ্গা, শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে বা ছিলে যাওয়াসহ একাধিক সেলাইয়েরও ঘটনাও অহরহ ঘটছে। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে ব্যাটারি চালিত গাড়ি চালকদের অদক্ষতা ও উগ্র ড্রাইভিংয়ের কারণে শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায়ই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮/১০টি ছোটবড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এর মধ্যে শুধুমাত্র নিহত হওয়ার ঘটনাই গণমাধ্যমে আসে। বাকি দুর্ঘটনার ৫ শতাংশও মিডিয়ায় আসে না। এসব ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করা ও শরীরের বিভিন্ন সেলাই দেওয়াসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অনেক নুন আনতে পান্তা ফুরায় পরিবারের রোজগার করা ব্যক্তিকেও বিছানায় দিনের দিনের পর পড়ে থাকতে হয় বলেও জানান তারা। তাদের মতে একদিকে এসব যানবাহনকে যেমন নিবন্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, অন্যদিকে চালকদের অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আওয়তায় আনা জরুরী। তাদের মতে এসব অদক্ষ চালকরা যখন-তখন যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিংসহ কোন সংকেত ছাড়া কিংবা সামনে পিছনে না দেখে হঠাৎ করেই ডানে-বামে গাড়ি ঘুরানোর জন্য টান দেয়। এর ফলে প্রতিয়তই বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কগুলোতেও তাদের এমন বেপরোয়া অবস্থানের কারণে অকারণে অকালে ঝরে যাচ্ছে একাধিক প্রাণ। অন্যদিকে সচেতন মহলের দাবি, শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো এসব গাড়িকে শহরের মূল সড়কে প্রবেশ করতে না দেওয়া।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ব্যাটারি চালিত এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। এরমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এই উৎস থেকে আদায় করা চাঁদা। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের কিছু অসাধু লোক সেখানে পুলিশও থাকতে পারে, আর আছে কিছু নামধারী সাংবাদিক। তাই বিভিন্ন প্রশাসনের অভিযানের সময়ও দেখা যায়, এই নামধারী সাংবাদিকদের একধরণের তদবীর করতে, ফোন করতে। প্রশাসনও আবার প্রচার করে এই বলে যে, ‘এই যে দেখেন! সাংবাদিকরাও আমাদের কাছে রিকোয়েস্ট করে’। এর ফলে প্রকৃত সাংবাদিকদেরও মুখ বন্ধ করে দেওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। আমাদের মতো সাংবাদিকদেরকে বিব্রত করার যা একটি কৌশল (অপকৌশল)। আমরা আগেও বলছি এখনও বলতেছি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব এ ধরণের তদবীর, চাঁদাবাজি আমরা প্রশ্রয় দেই না, আমাদের কেউ এর সাথে জড়িত না। যদি কেউ যুক্ত থাকে (আমিসহ) প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আমি বলবো এই বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবো। যার ফলে অন্য সাংবাদিকরাও প্রমাণ পায় যে, প্রেসক্লাব এধরণের কাজে জড়ায় না।
তিনি বলেন, এসব যানবাহনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তার সবগুলো কিন্তু আমাদের মিডিয়াতে আসে না। শুধুমাত্র নিহত বা বড় ধরণের দুর্ঘটনাগুলোই সাধারণ মিডিয়ায় আসে। কিন্তু এর বাইরে হাড় ভাঙ্গা, পা ভাঙ্গা, হাত ভাঙ্গা, বিভিন্ন জায়গায় কেটে যাওয়া বা ছিলে যাওয়া, যেখানে একাধিক সেলাইয়েরও প্রয়োজন হয়, এমন ধরণের ঘটনা কিন্তু অহরহ ঘটছে। এ ধরণের দুর্ঘটনার ৮০ শতাংশই হচ্ছে এসব ব্যাটারি চালিত যানবাহনের অদক্ষ ও উগ্র চালকদের জন্য। এগুলো কিন্তু পত্রিকার পাতায় আসে না। শুধু তাই না, এসব যানবাহনের কোন নিয়ন্ত্রণ বা তদারকী না থাকায় অন্যান্য এলাকায় যারা অপরাধী হিসেবে পরিচিত বা থাকতে পারছে না বা পলাতক হিসেবে তারা এই পেশাকে পুঁজি করে এখানে পালিয়ে এসে গা ঢাকা দেয় বলেও জানা যায়।
ব্যাটারি চালিত যানবাহনসহ অটো ইজিবাইকের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে বলা হয়েছে ১৭ হাজারের কিছু বেশি ব্যাটারি চালিত যানবাহনকে এখানকার (শহরের) রাস্তায় চলাচলের অনুমতি তারা দিয়েছে। তবে আমরা রাস্তায় এ ধরণের যেসব যানবাহনকে চলাচল করতে দেখি, তাতে তার সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজারের মতো। আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, বিভিন্ন এরিয়ায় এসব অটোগুলোকে আলাদা আলাদা রঙ করে দিবো। সিটি কর্পোরেশন থেকে বর্তমানে যেমন হলুদ রঙ করা হয়েছে। কিন্তু এখন যারা বৈধ তারা যেমন হলুদ রঙ করেছে, তেমনি যারা অনুমোদন নেয়নি তারাও হলুদ রঙ করেছে। এখন আমরা যে প্ল্যানই করি, অর্থাৎ লাইসেন্স প্রদান করলে তার আগে অবশ্যই আমাদের এমন পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যেখানে লাইসেন্স বা পদ্ধতি সহজে ডুপ্লিকেট করা যাবে না। আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা পর্যন্ত আমরা অবৈধ অটোগুলোকে ধরতে পারছি না। আরেকটি বিষয় হলো এই অটোগুলো যারা শহরে নামাচ্ছে, তারা কি এই শহরে বসবাস করছে না! তাদেরও ভাবা উচিৎ যে, আমাদের এই অটোর কারণে শহরবাসীর খুব কষ্ট হচ্ছে।