রাস্তা দখল করে যানজটের নেপথ্যে উৎসব বাস

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

রাস্তা দখল করে যানজটের নেপথ্যে উৎসব বাস
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট এখন নিত্যদিনের ভোগান্তি। সপ্তাহখানিক আগেও যানজট নামক বিষফোঁড়ার যন্ত্রণায় প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নগরবাসি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তাছাড়া ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল গুলোও যানজট নিরসনের ব্যবস্তা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি প্রদান করেন। শহরের যানজট নিরসনে প্রশাসন ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এখন কিছুটা শিথিলতায় আসছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ২ নম্বর রেলগেট মোড় এলাকার যানজট কোন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ আসছে না। এখানকার যাজটরে মুল কারণ হিসেবে উৎসব পরিবহন ও বন্ধন পরিবহন বাস রাস্তা দখল করে রাখে। তাদেরকে জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা যেন একটি করে বাস ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তারা তা না মেনে সারিবদ্ধ ভাবে দিনের বেলায় ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় বাস রাখায় এখানকার যানজট লেগে থাকে। এর নেপথ্য মুল কারণ হচ্ছে উৎসব পরিবহন বাস ও বন্ধন পরিবহনের বেপরোয়া চালকরা। কেননা তারা প্রতিনিয়ত এখানে বাস থামেিয় রাখে।
এদিকে আওয়ামী শাষনামলে নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি সেলিম ওসমান পরিবহন সেক্টর নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে তখন প্রশ্ন তুৃলেন রাস্তায় কেন বাস রাখবে। কারা সড়ক দখল করে বাস রাখে। রাস্তা দখল, ফুটপাত দখল সহ জেলার নানা সমস্যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বাসিও প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু এগুলো নিয়ে সমাধান করার যেন কেউ নাই। পরিবহন সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ করেন শাফিয়া রওশন আলী। তার নিয়ন্ত্রনে থাকেন পরিবহন চালকরা।
দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট থেকে ১ নম্বর রেলগেট হয়ে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সারিবদ্ধ ভাবে উৎসব-বন্ধন পরিবহন বাস পাকিং করে রাস্তা অবৈধ ভাবে দখল করে রাখে। তারা দিনের বেলায়ও ২ নম্বর রেলগেট মোড়ে অবৈধ ভাবে স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলছে। এছাড়া রাত আট টার পরে ২ নম্বর রেলগেট মোড় থেকে শুরু করে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তা দখল করে সারিবদ্ধ ভাবে বাস পার্কিং করে রাখে। এতে করে পরিবহন মালিকদের পার্কিং করার জন্য যে খরচ হয় তা বেচেঁ যায়। যা সর্ম্পুর্ণ অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে রাখে। বাসের পরিবহন চালকরা বেপরোয়া হয়ে এখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠান। অথচ এখানে তাদের কোন কাউন্টার নেই। শহরবাসির মতে, উৎসব-বন্ধনের কারনে হর হামেশায় সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরী হয়ে আছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারাও মানুষকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে।
কালিবাজার থেকে ১নং রেলগেটপর্যন্ত সিরাজউদ্দৌলা রোড দিনের বেলায় দখল করে রাখে হকাররা । আর সন্ধ্রা কিছুক্ষন পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এই সড়কটি বন্ধন-উৎসব বাস পার্কিং করে রাস্তা দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে নগরবাসীর অভিযোগ। বাসগুলো রাস্তা দখল করে রাখায় জনগণ চলাচলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দিনের বেলায় যেমন চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কে যানজট তৈরী হয়ে তেমনি রাতের বেলা ৯ টার পরেও শহরে যানজট সৃষ্টি হয়। এই যানজটের কারনে মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়। সন্ধার পরে পরিবহন গুলো সড়ক দখল করে রাখায় রাতের বেলায়ও মানুষের চলাচল করতে কষ্ট করতে হয়।
এছাড়া অপরদিকে দেখা যায়, সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের চারারগোপ থেকে ১নং রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করেছে বন্ধন উৎসব। কালিবাজার থেকে শুরু করে ১নং রেলগেট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরো রাস্তাটি দখল করে রেখেছে। সড়কটির পাশে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ কলেজ এবং নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল। স্কুল-কলেজ আগত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানে আসতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যেখানে ৫ মিনিট সময় লাগে প্রতিষ্ঠানে আসতে সেখানে ৬০ মিনিট সময় লেগে যায়। বন্ধন উৎসব বাসের নৈরাজ্যের কারণে থেকে শহরবাসীও মুক্তি পান নাই।
নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা কেন সঠিক সময়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌছাতে পারে না। কারন রাস্তায় জানজট লেগে থাকে। শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় কেন বাস রাখবে। তাদের দাবী চলাচলের জায়গাটা পরিস্কার রাখতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্রী তানিয়া জানান, বন্ধন, উৎসব, বন্ধুসহ বাসের চালকেরা কলেজের সামনে পুরো রাস্তাটি দখল করে বাসস্ট্যান্ড বানিয়েছে। রিক্সা ও প্রাইভেটকার চলচাল করতে পারছে না। চরম দুর্ভোগে জনসাধারণসহ স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। সকালে কলেজ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে গিয়ে তাদের পরিবহন রাখায় সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারেন না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভে পরেছে শহরবাসীও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের আগে বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন। উৎসব পরিবহনের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলে সানাউল্লা ও শহিদুল্লাহ। গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে উৎসব পরিবহনের এমডি হিসেবে দায়িত্বে এসেছেন মো. কাজল এবং বন্ধন পরিবহনের মালিকানায় এসেছে টিটু। তাছাড়া এই পরিবহন মালিকদের রাস্তা দখলের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের ট্রাফিক বিভাগ যেন দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকেন।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক সোহেল রানা জানান, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া আমরা তাদের উচ্ছেদ করে অভিযান পরিচালনা করি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উৎসব পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজল বলেন, আমি রাস্তায় বাস না রাখার জন্য বলে দিচ্ছি। একই সাথে চালকদের সতর্ক করা হচ্ছে। বন্ধন পরিবহনের কর্ণধার টিটুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।