Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ঝুঁকিতে গ্রাহকরা

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের  উদাসীনতায় ঝুঁকিতে গ্রাহকরা

চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ঝুঁকিতে গ্রাহকরা

Swapno

# ব্যাক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে তোলা হয় চাঁদা

# ছিনতাইকারী-পকেটমারদের অভয়ারণ্য, বিপাকে পথচারীরা

# প্রশাসন যাতে তাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করেন : ব্যাংক ম্যানেজার


চাষাঢ়ায় সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসীনতায় লেনদেনে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন গ্রাহকরা। প্রশাসন-নাগরিক সমাজ-সাংবাদিকসহ সুধীমহল গত কয়েকবছর ধরে ফুটপাতে হকার সমস্যা, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ ও যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগ নিলেও এসবের কোন কিছুকেই পাত্তা দেয়নি ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেশ কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ তুলেছেন, চাষাঢ়ার বিবিরোডের মুখে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গ্রাহকরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা বলছেন, ব্যাংকের বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ব্যাংকটির গোটা বাউন্ডারির বাইরের ফুটপাতে হকারদের বসতে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে, এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বিনিময়ে ব্যাংকের সামনে ফুটপাত দখল করে বসতে দেয়া সুবিধা বাবদ চাঁদা তোলেন ব্যাংকেরই কয়েক কর্মচারী। গ্রাহকরা অর্থের লেনদেন করতে এই ভিড় ঠেলেই ব্যাংকের মধ্যে ঢুকতে বেড়োতে হয়। ব্যাংকের গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেন এবং ভল্টের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন পুলিশ। ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ক্যাম্প এবং গাড়ি রাখার জায়গায় আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে হকারদের গাড়ি, ভ্যান, টুল, টেবিলসহ মালামাল রাখার সুব্যবস্থা করে দিয়েছে ব্যাংকেরই কিছু কর্মচারী। ব্যাংকের সামনের এই জটলায় শহরের চিহ্নিত ছিনতাইকারী, মোবাইল চোর, পকেটমারসহ নানা অপরাধীদের আনাগোনা। ঘটছে নানা ধরণের অপরাধ। এছাড়া ব্যাংকে লেনদেন করতে আসা গ্রাহকদের ভিড় থেকে টার্গেট করছেন ছিনতাইকারীরা। বিভিন্ন সময় র‌্যাব-১১’র বিশেষ অভিযানে এই মোড় থেকে ধরা ছিনতাইকারী এবং মোবাইল  চোরদের দেয়া তথ্যে বড় ধরণের মোবাইল চোর চক্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, চাষাঢ়া-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়ক দিয়ে আসা যাত্রীরা ফুটপাত দিয়ে চলাচলে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। ব্যাংকের সামনেই অটোরিক্সা, রিক্সার জটলায় পরিস্থিতি আরো নাজুক থাকে সবসময়। সূত্র জানায়, এইখান থেকেও ব্যাংকের কিছু কর্মচারী অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে থাকে।  

সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়ক সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে হকারদের দখলে। দু’পাশের ফুটপাত দখল করেও মূল সড়কের পাশেও ভ্যানগাড়ি নিয়ে বসেন হকারা। এতে কোন বাঁধা বা উচ্ছেদ করেন না প্রশাসন। বিগত সরকারের আমলে উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশ ও হকারদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ঘটে এই শহরে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সেই সময় হকার উচ্ছেদ করতে পারেন নাই প্রশাসন। যতবারই কঠোর ভাবে হকার উচ্ছেদে নেমেছে প্রশাসন, ততবারই হকারদের পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন গডফাদার শামীম ওসমান। শামীম ওসমানের প্রভাবেই বিগত সময়গুলোতে এই শহরের হকার উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন এই শহরের হকারদের কাছ থেকে লক্ষ টাকা চাঁদা তুলতেন হকার নেতারা। আর সেই টাকার ভাগ পেতেন শামীম ওসমান সহ তার নেতাকর্মীরা। শহরের চাষাড়ার সোনালি ব্যাংকের মোড়, শহীদ মিনার, বালুর মাঠ, গলাচিপা, উকিলপাড়া, কালিবাজার, শায়েস্তা খাঁ রোড, রেল লাইন, ১নং গেইট, ডিআইটি ও করিম মার্কেট সহ বিভিন্ন সড়কের লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করতেন আওয়ামীলীগের চাঁদাবাজরা। তাদের সাথে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাও এই চাঁদার ভাগ পেতেন। তাই বিগত সময়গুলো এই শহরের হকারদের ছিলো এক অন্য রকম প্রভাব। কিন্তু গত বছরের ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পরে চাঁদাবাজরা পালিয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি হকারদের সড়ক দখল ও চাঁদাবাজি। গত এক বছরে সড়কে হকার বেড়েছে দ্বিগুণ।

এদিকে শহরের প্রাণ কেন্দ্র চাষাঢ়ায় এখন হকারদের মিলন-মেলা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চাষাড়া জিয়া হল, সোনালী ব্যাংকের মোড়, শহীদ মিনারের আশে-পাশের পুরো এলাকাটি থাকে হকারদের দখলে। বিশেষ করে চাষাড়া সোনালী ব্যাংকের সামনে অংশটি হচ্ছে শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শহরে সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে চাষাড়া সোনালী ব্যাংকটি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক। এই ব্যাংকটিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ প্রিন্সিপাল অফিস ও কর্পোরেট শাখা। ব্যাংকটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণ করেন। এছাড়াও এখানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। ব্যাংকটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে নিজস্ব পুলিশ ও আনসার। কিন্তু নিজস্ব পুলিশ ও আনসার থাকার পরেও প্রতিদিন সোনালী ব্যাংকের প্রবেশের মুখে বিভিন্ন পণ্যের  দোকান বসিয়ে ব্যবসা করেন হকাররা। এছাড়াও সন্ধ্যার পরে ব্যাংকের ভেতরে হকারদের মালামাল রাখা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন সোনালী ব্যাংকের সামনে হকারদের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। আর এই চাঁদার টাকার মোটা অংকের ভাগ পান কিছু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের আশ্রয়েই সোনালী ব্যাংকের দেয়াল ঘেষে ও প্রবেশের পথ আটকিয়ে ফুটপাত দখল করে বসেন হকাররা।

এবিষয়ে ব্যাংকে লেনদেন করতে আসা কয়েকজন গ্রাহক বলেন, সোনালী ব্যাংক হচ্ছে শহরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক। এই ব্যাংকে বিভিন্ন সরকারী ভাতা, পার্সপোট বিল, বিদুৎ বিল, পানির বিলসহ বিভিন্ন বিল গ্রাহক দিতে আসেন। অনেক ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকা প্রতিদিন লেনদেন করেন। কিন্তু ব্যাংকের সামনে হকারদের জটলা থাকায় বিভিন্ন সময় অনেক ছিনতাইকারী ও পকেটমার অনেক গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়াও সকাল  বেলা হকারদের কারনে ব্যাংকে প্রবেশ করা যায় না। ব্যাংকের সামনে পুলিশ বসা থাকে, কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয় না। হকাররা পথ আটকিয়ে ব্যবসা করে আর পুলিশ বসে বসে দেখে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন হকার বলেন, আমাদের কমিটি আছে, বর্তমানে আমরা কমিটির নিয়ন্ত্রণে চলি। আর এখানে আমরা এমনি এমনি বসি না। বিদ্যুৎ বিল, দোকানের জায়গার টাকা আমরা প্রতিদিন দেই। আমাদের লোক আছে, তারা প্রতিদিন সন্ধ্যায় টাকা নিয়ে যায়।

এবিষয়ে সোনালী ব্যাংক পিএলসি নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. মোবারক হোসেন বলেন, আমি অনেক বার হকারদের নিষেধ করেছি, ব্যাংকের সামনে না বসতে। কিন্তু তারা আমার কোন কথা শুনে না। তাদেও পেছনে রাজনৈতিক দলের লোক আছে। তাদের আশ্রয়ে তারা এখানে বসে। আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কয়েকবার জানিয়েছি, অনেকবার উঠানো পর আবার তারা বসে। আমি চাইবো, সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসক যাতে তাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করেন। ব্যাংক কর্মকর্তা চাঁদার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জানা নেই। কিন্তু আমি তো আর সব দেখি না, হয়তো থাকতে পারে।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন