
ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে রাস্তা মরণফাঁদ
নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়ক বর্তমানে এলাকাবাসীর কাছে এক দুঃসহ জনভোগান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় এই সড়ক দিয়ে শিল্পকারখানার শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় নিচের সড়কটির বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। খানাখন্দ, কাদা, ভাঙাচোরা আর অব্যবস্থাপনার কারণে এই সড়ক এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, আর ভুক্তভোগী হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
গতকাল বিসিক শিল্পনগরীর মূল ফটকের সামনে এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটে। কর্দমাক্ত রাস্তায় ট্রাক উল্টে চালক ও হেলাপার দু’জন গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সড়কে গর্ত ও ফাঁটল থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। বৃষ্টি নামলে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়—পানি জমে যায়, কাদায় ভরে যায়, কোথাও গর্ত আছে তা বোঝার উপায় থাকে না। ফলে যানবাহন চালক থেকে শুরু করে পথচারীরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা ব্যবহার করছে। সড়ক সংস্কারের জন্য ব্যবহৃত ভারী মেশিনগুলো মাঝরাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পঞ্চবটি থেকে কাশিপুর পর্যন্ত দীর্ঘ এই সড়কজুড়েই একই দুরবস্থা বিরাজ করছে। যানবাহনগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা এক জায়গায় আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, ফলে কর্মজীবী মানুষদের নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পথচারীরাও এই সড়ক দিয়ে নিরাপদে চলাচল করতে পারছেন না। প্রায়ই শোনা যাচ্ছে—পা পিছলে পড়ে গিয়ে শ্রমিকদের হাত-পা ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটছে। এলাকাজুড়ে প্রচুর শিল্প কারখানা থাকায় প্রতিদিন হাজারো শ্রমিক এ পথ ব্যবহার করেন। তাদের জন্য এই পরিস্থিতি এখন চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে নিচের সড়কটির সংস্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে পুরো সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, সাধারণ পথচারীরাও হেঁটে যেতে পারছেন না। কাদা ও গর্তের কারণে প্রায়ই মানুষ পিছলে পড়ে হাত-পা ভাঙছেন।এ অঞ্চলে অসংখ্য গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ডাইং ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো শ্রমিককে এই রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। তারা বলছেন, রাস্তার এই পরিস্থিতি তাদের জীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।গার্মেন্টস শ্রমিক রহিমা আক্তার বলেন, ভোরে কারখানায় যেতে হলে কাদার ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। অনেক সময় পিছলে পড়ে যাই, জুতা-পোশাক কাদা হয়ে যায়। সময়মতো কাজে পৌঁছাতে না পারলে বেতন কাটা যায়। আমাদের জন্য এটা বড় কষ্ট। আরেক শ্রমিক জসিম উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা সাধারণত বাসে বা ভ্যানে যাতায়াত করে। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকায় এসব যানবাহন চলতে পারে না। বাধ্য হয়ে কাদার ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। এতে আমরা প্রতিদিনই ঝুঁকি নিচ্ছি।
শিল্প এলাকায় কর্মরত শ্রমিক নাজমা খাতুন বলেন, আমাদের কারখানা মালিকরা সময়মতো কাজে আসতে বলেন। কিন্তু রাস্তার কারণে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা পথে আটকে থাকি। এতে আমাদের ওপর অযথা চাপ পড়ে। রাস্তার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা তো প্রতিদিনই বিপদের মধ্যে থাকব।স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করি। কাদা ও খারাপ রাস্তার কারণে গাড়ি নিয়ে বের হলে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরেক পথচারী সালমা বেগম বলেন, বৃষ্টি হলে তো এই রাস্তা দিয়ে হাঁটা একেবারেই অসম্ভব। পানি জমে থাকে, কাদা হয়, জুতা-পোশাক সব নষ্ট হয়ে যায়। শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্য এই রাস্তাটা এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। ফ্লাইওভার নির্মাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নিচের সড়কেরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। কারণ শিল্প এলাকার হাজার হাজার শ্রমিক ও ব্যবসায়ী প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করেন। তারা দ্রুত সড়ক সংস্কার, কাদা ও গর্ত ভরাট এবং সঠিক চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।