ড্রেন-সেপটিক ট্যাংক যখন বোমা
# সেপটিক ট্যাংক নির্মাণে সচেতনা বৃদ্ধিতে নেই কোন উদ্যোগ
# ড্রেনের গ্যাস নির্গমণ লাইন সচলে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ
# প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করার দাবি
বিভিন্ন স্থাপনায় সেপটিক ট্যাংকগুলো তৈরি করা হয় পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহজতর করার জন্য। তবে অপরিকল্পিত সেপটিক ট্যাংক যে কোন সময় একটি বোমা রূপান্তর হয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে। অর্থাৎ আবাসিক এলাকা বা লোকালয়ে অপরিকল্পিত সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করা মানে একটি আস্ত বোমার উপর বাস করা। আর সেপটিক ট্যাংকের এই ধরণের বিস্ফোরণ যে কতটা ভয়বহ আকার ধারণ করতে পারে এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জবাসী তার টের পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ শহর বন্দর ও ফতুল্লাসহ জেলার বিভিন্ন সময় এই সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে একদিকে যেমন ঘটেছে প্রাণহানি, অন্যদিকে অনেককেই পঙ্গুত্ব বা অঙ্গহানিসহ শরীরে বিভিন্ন ক্ষত নিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অথচ এ ধরণের দুর্ঘটনাগুলো কি কি কারণে হতে পারে, এর ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এর থেকে প্রতিকারের জন্য কি ধরণের বিষয়গুলোর উপর নজর দেওয়া প্রয়োজন এসব বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক তেমন প্রচারণা নেই। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে এ ধরণে দুর্ঘটনা।
ড্রেন ও সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণের মূল কারণ হলো ট্যাংকে বা ড্রেনের ভেতরে জমে থাকা গ্যাস (যেমন মিথেন বা পয়ঃনিষ্কাশন গ্যাস) থেকে সৃষ্ট একটি আকস্মিক বিস্ফোরণ। অর্থাৎ সেপটিক ট্যাংক কিংবা ড্রেনের ভিতরে ভিতরে থাকা পয়ঃনিষ্কাশন ময়লা থেকে দীর্ঘদিন জমে থাকা মিথেন গ্যাসের চেম্বারে কোনো দাহ্য উৎস থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি হলে এই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এমনকি দীর্ঘদিন গ্যাস জমে থেকে ভিতরে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। গ্যাস বের হওয়ার জন্য সেপটিক ট্যাংকে প্রয়োজনীয় গ্যাস পাইপ না থাকলে কিংবা ড্রেনের গ্যাস বের হওয়ার জন্য যে ফাঁকফোকরগুলো রাখা হয় তা বন্ধ হয়ে যায়, যখন গ্যাস বের হওয়ার কোন জায়গা না পেয়ে এই বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয়। গত কয়েকবছরে নারায়ণগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় এমন ধরণের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ভবনের সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে ঘটেছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা, ড্রেন বিস্ফোরণের ফলে উড়ে গেছে স্লাব আহতের ঘটনা ঘটেছে একাধিক। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধংস হয়েছে ভবন কিংবা ড্র্রেনের। সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর সোমবার বন্দরের রুপালী আবাসিক এলাকায় এ ধরণের একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যদিও সৌভাগ্যবশত এই ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
সচেতন মহলের অভিযোগ, গ্যাস বিস্ফোরণ কিংবা অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সাবধানতার জন্য প্রচার করা হয়, মহড়া দেওয়া হয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিল-কারখানা কিংবা বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় কর্মসূচির মাধ্যমে সতর্ক করা হয়, সেপটিক ট্যাংক কিংবা ড্রেন বিস্ফোরণের বিষয়ে সে হিসেবে কোন প্রচার করা হয় না বললেই চলে। প্রচার মাধ্যমগুলোতেও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অসাবধানতা দূর করা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও গ্যাস ওভেন সঠিকভাবে ব্যবহার করা, দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে রাখা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এছাড়াও রান্নার পর চুলা ও গ্যাসের চাবি বন্ধ করা, সিগারেট ও দিয়াশলাইয়ের কাঠি সাবধানে নিভিয়ে ফেলা, দাহ্য পদার্থে খোলা বাতি ব্যবহার না করা, শিশুদের আগুন থেকে দূরে রাখা এবং জরুরি বহির্গমন পথ সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা ইত্যাদি বিষয়েও অবগত করা হয়। কিন্তু সেপটিক ট্যাংক কিংবা ড্রেন বিস্ফোরণ কি কারণে হয়, এর প্রভাবে কি ধরণের ক্ষতি হয় সে বিষয়ে কোন প্রয়োজনীয় সর্তকতার প্রচার ও উদ্যোগের বেশ অভাব রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় এ ধরণের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত। এর এতে প্রাণহানি ও দুর্ভোগের মতো ঘটনাও ঘটে চলছে অহরহ।
শহরবাসীর অভিযোগ একদিকে বাড়ি নির্মাতারা টাকা বাঁচাতে কিংবা অজ্ঞতার কারণে তাদের নির্মিত সেপটিক ট্যাংকগুলো কোন প্রকার প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা ছাড়া কিংবা দুর্বলভাবে তৈরি করছে। তারা বুঝতেও পারছে না এতটাকা খরচ করে বাড়ি নির্মাণ করার পর শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে সেই ভবনে বাস করাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে এই বিষয়গুলো যাদের নজরদারি করার কথা, তারাও করছেন না কোন তদারকি। একই সাথে সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন ড্রেনগুলো নির্মাণের পরই কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। এসব কাজের ভবিষ্যৎ পচির্যার বিষয়সহ রুটিন কাজগুলো করার সময় দায়িত্বরত বিভাগ তা যথাযথভাবে করছে কি না সে বিষয়ে নেই কোন তদারকি।


