Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ‘পাকিং জোন’ প্রকল্প

সওজের কাজে সরোজ সাহার বাগড়া

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

সওজের কাজে সরোজ সাহার বাগড়া

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ছয়লেন প্রকল্পের ‘পাকিং জোন’ প্রকল্পকে ‘ট্রাক স্ট্যান্ড’ বলে অপপ্রচার চালিয়ে শামীম ওসমানের বন্ধু হিসেবে খ্যাত লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ও লামাপাড়া এলাকার এস.এন গার্ডেনের মালিক সরোজ কুমার সাহার নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

Swapno


# পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে জনভোগান্তিমূলক কিছু হবে না : জেলা প্রশাসক
# ছয়লেন প্রকল্প অনুযায়ী পার্কিংজোন তৈরি হবে : নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ
# ট্রাকস্ট্যান্ড বলে প্রচারণার বিষয়ে মন্তব্য করেননি সরোজ সাহা
# লিংকরোডে তিনটি পার্কিজোন তৈরির কাজ শুরু হবে : এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, সওজ


 ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ছয় লেনে উন্নীতকরণের শেষ পর্যায়ের কাজ। এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এর চতুর্থ দফার কাজ পার্কি জোন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী চাষাঢ়া থেকে সাইবোর্ড পর্যন্ত জালকুড়ি, ফতুল্লা স্টেডিয়ামের অপরপাশে এবং ভূইগড় এলাকায় যানজট নিরসনে তিনটি পার্কিজোন তৈরির কথা রয়েছে। তবে এই কাজে ফতুল্লা স্টেডিয়াম এলাকায় অর্থাৎ লামাপাড়ায় লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ও লামাপাড়া এলাকার এস.এন গার্ডেনের মালিক সরোজ কুমার সাহাসহ আরো বেশ কিছু ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত অংশ সড়ক ও জনপথে (সওজ) এর জায়গায় থাকায় পার্কিং জোন তৈরির কাজে বাগড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে বিকল হয়ে পড়া যানবাহন এবং স্টেডিয়াম চালু হলে এটিকে কেন্দ্র করে আসা বিশাল যানবাহনের চাপ নিরসনেই এইখানে পার্কি জোন তৈরির পরিকল্পনা সওজের। তবে গত কিছুদিন ধরে শামীম ওসমানের বন্ধু হিসেবে খ্যাত সরোজ সাহার প্ররোচনায় লামাপাড়া এলাকার আরো কিছু ব্যক্তি ওই এলাকায় ‘পার্কিং জোন’ কথাটি চেপে গিয়ে ‘ট্রাকস্ট্যান্ড’ গড়ে তোলা হচ্ছে বলে প্রচারণা চালায়। সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্প অনুযায়ী পার্কি জোন হলে সওজের জায়গায় সরোজ সাহার ফ্যাক্টরীর কিছু অংশ কাটা পড়তে পারে। 


গতকাল ফতুল্লা স্টেডিয়ামের বিপরীত পাশে লামাপাড়া এলাকায় সড়কের পাশে এ স্ট্যান্ড না করার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকজন শিল্প কারখানার মালিক, শ্রমিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। তাদের দাবি, সড়কের পাশে সরকারি এ জমিটিতে ট্রাক স্ট্যান্ড স্থাপন করা হলে যানজট ও বিশৃঙ্খলা হবে, যা এলাকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবে। তাছাড়া, উল্টো পাশেই আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম থাকায় দেশি-বিদেশি দর্শকদের সামনে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সৌন্দর্য নষ্ট করবে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কয়েক ঘন্টা ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন শতাধিক ব্যক্তি। তারা প্রায় ঘন্টাব্যাপী সড়কটিতে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। জেলা প্রশাসকের কাছে ট্রাক স্ট্যান্ড স্থাপনকাজ বন্ধের নির্দেশ দিতে আহ্বান জানান। সম্প্রতি সড়কটির পাশে সড়ক ও জনপথের কিছু জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা। মানববন্ধন থেকে এ উচ্ছেদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ ঝারেন বক্তারা। মূলত এরপেছনে সরোজ সাহা প্ররোচনাদানকারী হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন বিক্ষোভকারীরা।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপথের (সওজ) এর এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, ডিপিপি অনুযায়ী লিংক রোডের ছয় লেনের কাজ শেষ পর্যায়ে। চানমারী এলাকায় মসজিদ অপসারণের পর রাস্তা প্রশস্ত করা, চানমারী থেকে চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাব পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত করণের কাজটি বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে সড়কবাঁধ-পেভমেন্ট প্রশস্ত, বিদ্যমান পেভমেন্ট মজবুত করা, সার্ভিস সড়ক, হার্ড সোল্ডার, রিজিড পেভমেন্ট মজবুত-প্রশস্ত করা ও সার্ভিস লেন, কংক্রিট রোড ডিভাইডার, বাস-বে, আরসিসি বক্স কালভার্ট সম্প্রসারণ, ফুটওভার ব্রিজ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজও চলমান। প্রকল্প অনুযায়ী চতুর্থ দফায় চাষাঢ়া- থেকে সাইবোর্ড পর্যন্ত তিনটি পার্কি জোন নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলমান আছে। মূলত এই পার্কি জোনে শুধু ট্রাক থাকবে বলা হচ্ছে আদতে তথ্যটি সঠিক নয়, লিংক রোডে যেসকল গাড়ি বিকল হয়ে যাবে, অন্যান্য জেলার গাড়ি যেগুলো শহরে চাপ তৈরি করে ছোট বড় সবধরণের গাড়িই এইসব পার্কিং জোনে গাড়ি রাখতে পারবে। আর ফতুল্লা স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। স্টেডিয়ামের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে এটি চালু হলে সেখানে বিশাল পরিমাণ গাড়ির চাপ পড়বে, যেটি মোকাবেলা করতে না পারলে লিংকরোডের উপর চাপ পড়বে। সেটিকে মাথায় রেখেই প্রকল্প অনুযায়ী সেখানে পার্কিং জোন তৈরির কাজ চলমান আছে, তাছাড়া জালুকুড়িসহ আরো দুই জায়গায় লিংকরোডের পাশে সওজের জায়গায় এই তিনটি পার্কিজোন তৈরি হবে। সর্বোপরি এই সকল কাজ সম্পন্ন হলে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীই এর সুফল ভোগ করবে, নারায়ণগঞ্জ শহর ও লিংকরোডে গাড়ির চাপ কমবে। তাই নারায়ণগঞ্জে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এই কাজ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহবান জানাই।

এদিকে সওজের পার্কি জোন তৈরির কাজকে ট্রাক স্ট্যান্ড বলে বিক্ষোভ করার বিষয়ে লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ও লামাপাড়া এলাকার এস.এন গার্ডেনের মালিক সরোজ কুমার সাহা যুগের চিন্তাকে বলেন, আসলে এই বিষয়টি আমি জানি। ওই এলাকার স্থানীয় কিছু লোক মিলে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন। সরকারি উদ্যোগে পার্কি জোন তৈরি হচ্ছে কেন এটিকে ট্রাক স্ট্যান্ড বানানো হচ্ছে বলে প্রচারণা করা হচ্ছে এবং বিক্ষোভের নামে ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এ জেলার একটি হার্ট-লাইন। এ সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের অংশ হিসেবে সড়কের পাশে ট্রাক ও ছোট যানবাহনের স্ট্যান্ড স্থাপনের কাজ চলছে। স্টেডিয়ামের ঠিক সামনেই হয়তো ট্রাক স্ট্যান্ড হবে না। কিন্তু খেলা দেখতে আসা লোকজনের জন্যও তো যানবাহন স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সওজ সবকিছু পরিকল্পনামাফিক করছে বলে জানিয়েছে। এতে জনভোগান্তিমূলক কোনো কিছু হবে না।’

সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকোশলী আব্দুর রহিম যুগের চিন্তাকে জানান, ‘এখানে কোন ট্রাকস্ট্যান্ড হচ্ছেনা, লিংকরোডের ছয়লেন প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখানে গাড়ি পার্কি জোন তৈরি করা হবে।’

প্রসঙ্গত, চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৮.১৫ কিলোমিটার। এটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (লিংক রোড) নামেও পরিচিত। সড়কটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ছয় লেনে উন্নীতকরণের শেষ পর্যায়ের কাজ। সড়কটির সাইনবোর্ড থেকে চাঁনমারী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু চাঁনমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। চানমারী এলাকায় একটি মসজিদ সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। আর সম্প্রতি গুড়িয়ে দেয়া বায়তুল আমান আর রাইফেল ক্লাবের মধ্যবর্তী জায়গাটিতেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। তবে খুব দ্রুত কাজ  শেষ করতে পারবে বলে আশাবাদী সওজ।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন