পাসপোর্ট অফিসে ফের দালাল চক্রের আনাগোনা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

পাসপোর্ট অফিসে ফের দালাল চক্রের আনাগোনা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আগুনে পুড়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় ৯ মাস পর গতকাল রোববার (৪ মে) সকালে কার্যক্রম চালুর প্রথম দিনেই পাসপোর্ট সেবা নিতে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সকালে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী পরিলক্ষিত হতে দেখা গেলে ও বেলা পেরিয়ে ২ টা হলেই ফের বিগত দিনের মতোই লক্ষ্য করা যায় দালাল চক্রের দৌরাত্ম।
এদিকে প্রথম দিনের কার্যক্রম পরিদর্শন করতে বেলা ১১ টায় পাসপোর্ট অফিসে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। জেলা প্রশাসক পাসপোর্ট অফিস থেকে বেড় হওয়ার ঘন্টাখানিক পর থেকেই ৯ মাস পূর্বে থাকা সেই দালাল চক্রের কারসাজি শুরু হয় সেই পাসর্পোট অফিসের দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুসারে জানা যায়, সকাল থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর পাসপোর্ট তৈরির চেকিং কাউন্টারে পৌঁছে প্রয়োজনী এনআইডি কার্ড, ছবি জমা দিলেই পাসপোর্ট অফিসের কথিত দুইজন মহিলা কর্মকর্তা বলে বাহিরের কম্পিউটারের দোকান থেকে ফরমসহ সকল কার্যক্রম শেষ করে আসতে আর কোথায় যাওয়া লাগবে এমন কয়েকজনের নাম ও সাজেস্ট করে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠে আসে। এদিকে সকাল থেকেই জেলা প্রশাসক থাকাকালিন পর্যন্ত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকল কার্যকালাপ পরিচালনা করলে ও দুপুরের পর থেকেই দালাল চক্রের হাতে নিয়ন্ত্রণ হতে শুরু করে সেই পুরনো দালালের অফিসটি।
এদিকে সকালে পাসপোর্ট অফিসের প্রথম দিনের কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, পাসপোর্ট হচ্ছে একজন নাগরিকের জাতিয়তা ও নাগরিকত্ব পরিচয়ের অন্যতম ডকুমেণ্ট। রোহিঙ্গা কিংবা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা নয় এমন কোন লোক এ অফিস থেকে পাসপোর্ট করলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই এ পাসপোর্ট অফিসটি হবে পুরোপুরি দালালমুক্ত। যদি দালালদের আনাগুনা পরিলক্ষিত হয় তাহলে তাৎক্ষনিক মোবাইল টিম পাঠিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, কোন সেবা গ্রহিতা যেন প্রতিবন্ধকতার শিকার না হয় সেদিকটি বিবেচনায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহব্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্পঘন এলাকা। এ জেলার যারা শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে প্রতিনিয়তই তাদের দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে হয়। পাসপোর্ট তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। দীর্ঘ ৯ মাস এ অফিসের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সে লক্ষ্যে অফিসের কার্যক্রম নতুনভাবে চালু হয়েছে। আমি আশা করি এখণ জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাগব হবে। পাসপোর্ট প্রতিবন্ধকতার সম্মক্ষিণ না হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জামাল হোসেন জানান, সকাল থেকে আবেদনপত্র জমা ও বায়োমেট্রিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিনেই বিপুলসংখ্যক সেবাপ্রত্যাশীর ভিড় দেখা গেছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় মাস পর নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসীকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই। দালাল মুক্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে জনগণের কথা বিবেচনা করে ৫ ই আগস্ট পরবর্তী প্রেক্ষাপটে জনগণ শতভাগ সেভা পায় সেই প্রেক্ষাপটকে নিয়ে আমাদের কর্মকর্তার কর্মচারীরা কাজ করে যাবে। এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা চাই আপনাদের পরামর্শ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম দ্রুত জনগণের দোরঘোড়ায় পৌঁছে যেতে পারে সেজন্য আমরা বদ্ধপরিকর।
কিন্তু জেলা প্রশাসক ও উপ-পরিচালকের এমন বক্তব্যেকে ১ ঘন্টার মধ্যেই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কথিতপয় কর্মকতারা জুলাই আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানকে বুলন্ঠিত করেছে। এরা আবারো পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের দোকানে বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে আসা নাগরিককে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে ই-পাসপোর্ট তৈরির সরকারি নিয়ম ও টাকা মান ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পেইজ রেগুলার ফি ৪০২৫ টাকা, জরুরী ফি ৬৩২৫ টাক এবং অতিব জরুরী ফি ৮৬২৫ টাকা। ৫ বছর মেয়াদি ৬৪ পেইজ রেগুলার ফি ৬৩২৫ টাকা, জরুরী ফি ৮৬২৫ টাকা এবং অতিব জরুরী ফি ১২০৭৫ টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পেইজ রেগুলার ফি ৫৭৫০ টাকা, জরুরী ফি ৮০৫০ টাকা এবং অতিব জরুরী ফি ১০৩৫০ টাকা। কিন্তু বিগত দিন থেকেই পাসপোর্ট প্রতি বেশি টাকা হিসেবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি হাতিয়ে নিচ্ছেন দালাল চক্র যে ভাগ বিগত দিনে পাসপোর্ট অফিসের সকল কর্মকর্তারা পেত সেই পুরনো ভাগ ও দুর্নীতি জুলাই আন্দোলনে পর গতকাল থেকে চালু হওয়া পাসপোর্ট অফিসে শুরু করেছেন জুলাই আন্দোলনের পূর্বে কর্মরত দুই অফিস কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে এক ভুক্তভোগী আলেয়া বেগম অভিযোগ তুলে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে সরাসরি অফিসে আবেদন করে পাসপোর্ট পাওয়া বিগত দিনে ছিলো ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু বিগত দিনে ছাত্র আন্দোলনে পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিসহ নানান অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্ধ জনতা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন পাসপোর্ট অফিসটি। এদিকে বিগত সরকার পালিয়ে গেলে নতুন সরকার আসলে দীর্ঘ ৯ থেকে ১০ মাস পর পূনরায় চালু হয় নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট সেবা কিন্তু এখনো এদের দালালদের দৌরাত্ম কমেনি।
বিগত দিনের মতোই আজকে ফের হয়রানির শিকার হতে হলো আমাদের। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন ধরে পাসপোর্ট এর আবেদনের জন্য এক পাঁ দুই পাঁ করে এগিয়ে যেতে যেতে দুপুর ২ টা বেঁজে যায় তখনই হঠাৎ কাউন্টারে বসা দুইজন মহিলা কর্মকর্তা আমিসহ আমার পিছনের লাইনের কয়েকজনকে বলেন বাহিরে কয়েকটি কম্পিউটার দোকান রয়েছে সেখানে গিয়ে ফরম ফিলাপসহ আবেদন করার জন্য। এমনকি এরা বাহিরে গিয়ে সুমন, শাহজালাল অথবা শহিদুল, শ্যামলের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তাহলে আমাদের প্রশ্ন সব কিছু দালাল মুক্ত হলে ও এখনো পাসপোর্ট অফিস দালাল মুক্ত নয় কেন।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জামাল হোসেনের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে ও তিনি তা রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ি এলাকায় চারতলা ভবনের এই কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে সার্ভার স্টেশন, কম্পিউটার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র,
আসবাবসহ সবকিছু পুড়ে যায় এবং মালামাল লুট করে নেওয়া হয়। পুড়ে যায় আট হাজারের বেশি প্রস্তুত পাসপোর্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাগজপত্র। এরপর নারায়ণগঞ্জবাসীকে কেরানীগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে পাসপোর্টের কাজ করতে হতো। কিন্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় চালু হলো নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। চালু হলে ও এখনো শেষ হয়নি দালাল দৌরাত্ম্য।