Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

চাষাঢ়ায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অনীহা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাষাঢ়ায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অনীহা

চাষাঢ়ায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অনীহা

Swapno



# ওনার উন্নয়ন ছিলো সম্পুর্ণ আই ওয়াশ : মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ
# ওনি চাটুকারদের কান কথায় অনেকটা মেশিনের মতোই চলতেন : স্থানীয়বাসী
# শহরবাসীর দাবি সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে তা করা হয়নি : সচেতন মহল


২০০৩ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ (বর্তমানে যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত) নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। এরপর ২০১১ সালে বিভিন্ন নাটকীয়তার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তারপর দলীয় প্রভাব বিস্তারের ২০১৬ ও ২০২২ এর নির্বাচনের মাধ্যমে টানা ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদে থাকেন তিনি। 


কিন্তু এত দীর্ঘ সময়েও নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর সবচেয়ে বড় অভিশাপ যানজট নিরসনে নেননি কার্যকর কোন পদক্ষেপ। দীর্ঘ প্রায় ২১ বছরের ক্ষমতায় থেকেও শহরবাসীর নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য কোন ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ করেননি দেশজুড়ে উন্নয়ন মডেল খ্যাত সাবেক এই মেয়র। তিনি শুধুমাত্র নিজেকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে জাহির করার প্রকল্পের কাজ হাতে নিতেন বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।


স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১০মে শুক্রবার ভোরে অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে গ্রেফতার হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ (নিষিদ্ধ ঘোষিত) সমর্থিত সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। তার উপর গত জুলাই আগস্ট আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গণহত্যাসহ গোপনে সংঘটিত করা, পুনর্বাসন করাসহ বর্তমান অন্তবর্তকালীন সরকারকে একটি ব্যর্থ প্রমান করে দেশে একটি অরাজকতা তৈরি করার অভিযোগ আছে বলে জান যায়।


গ্রেফতার হওয়ার আগে এই মেয়র প্রায় ২১ বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা এবং পরিবর্তীত সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। যিনি স্থানীয় বাম সংগঠনগুলো এবং নিজের তোষামোদী মিডিয়াকে ব্যবহার করে একটি অপপ্রচারণার মাধ্যমে নিজেকে জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও উন্নয়নের রোল মডেলকারী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যাতে অনেকটা সফলও হয়েছেন।


শহরের বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিল-কারখানাগুলো ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে তৈরি হলেও বড় বড় আড়ৎগুলো এখনও রয়েছে টানবাজার ও নিতাইগঞ্জ এলাকায়। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কটি শহরের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় বেশিরভাগ অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন ও শপিংমলগুলোর পুরো চাপ এই সড়ককে কেন্দ্র করেই হয়।


তাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু করে এদিকে ১ নং রেলগেট, ২ নং রেলগেট হয়ে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রতিদিন না হলেও আট থেকে দশ লাখ লোকের চলাচল। সমস্ত চাপ একটি মাত্র সড়কে উপর পড়ায় এখানে প্রতিনিয়তই যানজট লেগে থাকে। আর এত ব্যস্ততার মাঝেও নারায়ণগঞ্জ শহরের কোথাও নেই কোন ফুটওভার ব্রিজ।


বিভিন্ন সময় এলাকার সচেতন মানুষ দাবি করে আসলেও বিভিন্ন অজুহাতে তা এখনও হয়ে উঠছে না। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের যাতায়াত। রাস্তাটিতে কোন ফুটওভার ব্রীজ না থাকায় একদিকে জনসাধারণকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে সড়ক পারাপার হতে হয়। তেমনি সড়ক পারাপার করতে থাকা মানুষের তীব্র ভীড়ে গাড়িচালকদের এক্সালোটর থেকে ব্রেক কষতে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। যার ফলে যানবাহনের ধীরগতির পাশাপাশি নগরজুড়ে সারাদিনই যানজট লেগে থাকে।


পাইকপাড়াবাসী আসফিয়া আক্তার বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ এমন একটি জেলার এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি মূলত একটি সড়কের উপরই নির্ভর করতে হয়। যার ফলে যানজট নিরসনে প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হয়। আর এই যানজটের কারণেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। তাই ব্যস্ততম এই বঙ্গবন্ধু সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চাষাঢ়া, গলাচিপা ব্যাংকের মোড়, ২নং রেলগেট এবং ১নং রেলগেটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। কিন্তু এই শহরের দায়িত্বে থাকা সাবেক মেয়রকে এই বিষয়ে কেউ কোন কথাই বলতে পারতো না। 


তার চারপাশে সব সময় একটি চাটুকার বলয় বেষ্টনী তৈরী করে রাখতো। যাদের কান কথায় অনেকটা মেশিনের মতোই চলতেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশের ধনী জেলার তালিকার প্রথম সারিতেই অবস্থান করছে নারায়ণগঞ্জ জেলার নাম। যেখানে প্রতিনিয়ত কয়েক লাখ লোকের চলাচল। অথছ এমন ধনী জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহরের এমন ব্যস্ততম এলাকায় এবং এমন যানজটের শহরে রাস্তা পারাপারের জন্য নেই কোন ফুটওভার ব্রিজ। যা মেয়রের দৈন্যতার প্রকাশ।


এই বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ওনি (সাবেক মেয়র আইভী) কখনও শহরবাসির কল্যাণের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেননি। শুধুমাত্র নিজেকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে জাহির করার প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছেন। যা ছিলো সম্পুর্ণ আই ওয়াশ। তবে এত বছর দায়িত্বে থেকেও নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ, ব্যস্ততম ও জনবহুল এলাকায় একটিও ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করতে পারেননি। আসলে প্রকৃত অর্থে ওনি শহরবাসীর যানজট লাগবে কিছু করার চেষ্টা করেননি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন