শিবিরের সাবেক সভাপতির উপর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার হামলা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
শিবিরের সাবেক সভাপতির উপর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার হামলা
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় দোকানের জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে মহানগর ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াত নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদের হামলা ও লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মসজিদ সংলগ্ন পৌর মার্কেটের ঘটনা ঘটে। জামায়েত নেতার উপর হামলা ও লাঞ্চিত করার ঘটনায় স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাহবুব হাসান জুলহাস। কিন্তু সূত্র মতে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রানা স্বশরীরে ঘটনাস্থলে আসলেই সাঈদের উপর বৃষ্টির মতো হামলা হতে থাকে।
এ ছাড়া এই রানার বিরুদ্ধে পরিবহন সেক্টর দখল, চাষাড়ায় স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ, রেললাইনের দোকান, ফুটপাত, জমি দখল, চাঁদাবাজি, মিশনপাড়া, আমলাপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদের শেল্টারসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গত ৫ আগষ্টের পর থেকেই কথায় কথায় (গুলি) করতে চান স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রানা এমন নানা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ দিকে লাঞ্ছনার শিকার গোলাম সারোয়ার সাঈদ সাবেক শিবির নেতা এবং বর্তমান জামায়াত নেতার পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবে চেম্বার অব কমার্সের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। তা ছাড়া বিগত সময়ে জুলাই-আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থান আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকাতে ছিলেন। তিনি একাধিকবার কারাবরণ ও কয়েক ডজন মামলার আসামী ছিলেন।
এমন একজন ব্যবসায়ী ও পাশাপাশি জামায়েত নেতাকে প্রকাশ্যে পিটানো দু:খ জনক বলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তা ছাড়া বিএনপিসহ জামায়েত, ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সুষ্ট বিচারের দাবি জানিয়ে তুচ্ছ ঘটনার তীব্র নিন্দ্রা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
স্থানীয় দোকানদার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাষাঢ়ায় পৌর মার্কেটের একটি দোকান নিয়ে কয়েকদিন ধরেই মালিকানা বিরোধ ছিল। আশিকুর রহমান নামের একজন দোকানের মালিক দাবী করলেও সাঈদের দাবী তিনি নিজেও ওই দোকান ও জমির মালিক। এ নিয়ে মামলা ছিল এবং তিনি মামলায় জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে আশিকুরের পেছনে কাজ করছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা।
এদিকে গতকাল জমির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ মাধ্যমে মালিক দাবি করা মহানগর জামায়াত ইসলামীর সদস্য গোলাম সারোয়ার সাঈদ একটি এক্সাভেটর দিয়ে ওই জমিতে থাকা একটি দোকান ভাঙতে যান। কিছু অংশ ভেঙেও ফেলা হয়। পরে খবর পেয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুর অফিসে থাকা জুলহাস ছুটে এসে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে শকু ঘটনাস্থলে আসলে তার সঙ্গে সাঈদের বাকবিতন্ডা ঘটে।
একই সময়ে ছুটে আসেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রানা আসলেই তার লোকজন জামায়াত নেতা সাঈদের উপর হামলা চালিয়ে কিল ঘুষি ও বেধড়ক মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকেরা তাকে দ্রুত খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান। এদিকে জানা গেছে, সলিমউল্লাহ সড়কের পাশের বড় একটি অংশের জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)।
নাসিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ওই জমির একটি অংশে ‘এটেঁল মাটি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী মো. নাসির ওরফে ‘টুন্ডা নাসির’। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্দ লোকজন এ রেস্তোরাঁটি ভাঙচুর চালান। পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে নাসিরের বেশ কয়েকমাস ভাড়া বকেয়া থাকায় চুক্তি বাতিল করে গত ফেব্রুয়ারিতে আশিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়েত নেতা সাঈদ নিজেকে এটার মালিক দাবী করছেন। তা ছাড়া সাখাওয়াত ইসলাম রানা দাবি করছেন, আশিকুলের সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে একটি ফার্মেসি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে জামায়েত নেতা সাঈদ দাবি করেন, এই জমির মূল মালিক ফয়েজুর রহমানের কাছ থেকে ২০১৩ সালে ১৪ শতাংশ ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ পান তিনি।
জামায়েত নেতা সাঈদ হামলা ও লাঞ্চনার শিকার হলেও রানার সেকেন্ডইন কমান্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের জুলহাস এই ঘটনায় তার উপর হামলা হয়েছে বলে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আরো জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের এ জমির ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত নাজমা রহমানের দেবর। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে আদালতে মামলাও করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।
মামলাসহ সকল বিষয় তুলে ধরে কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেন, শহরের বাগে জান্নাত মসজিদ থেকে পশ্চিম দিকের সবগুলো দোকানের এবং পেছনের জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। তবে, এই জমির বড় একটি অংশ ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করেছেন ফয়েজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে ‘জাল দলিল’ তৈরির অভিযোগে ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন একটি মামলাও করে। ওই মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সুতরাং এ জমির মালিকানা ফয়েজুর রহমান বা গোলাম সারোয়ার সাঈদ কেউই দাবি করতে পারেন না।
এ বিষয়ে মহানগর জামায়াত ইসলামীর নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদ বলেন, ফয়েজুর রহমানের কাছ থেকে ২০১৩ সালে ১৪ শতাংশ ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ পান তিনি। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণে জমির দখলে যেতে পারেননি। আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে তিনি জমিটি দখলে পেতে একাধিকবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দ্বারস্থও হন। এমনকি স্বেচ্ছাসেবক দলের রানা ও সাবেক কাউন্সিলর শকুর সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, এ জমি নাকি এখন সিটি কর্পোরেশন থেকে রানা ভাড়া নিছেন। এবং সেখানে কাজ শুরু করেছেন। আমি গতরাতেও তার সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি কাজ বন্ধ করেননি। তাদের কয়েকবার বাধাও দিছি। কিছুদিন আগে আমি আর্মির কাছে লিখিতও দিছি। এতকিছুর পর আমি আজ (সোমবার) কাজ করতে গেলে প্রথমে শকু ভাই আসেন, পরে রানাও আসেন। কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে আমার কথাও হয়। এরপরই স্বেচ্ছাসেবক দলের রানার লোকজন আমার উপর হামলা করে। তারা ভেকুটাও ভাঙচুর করছে।
ঘটনার বিষয়ে সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, জামায়াত সমর্থিত সাঈদ একজনের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বলে সেইখানের দোকান বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে গেছেন এবং স্থানীয় দোকানিদের মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সেখানে তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে এক পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অপরপক্ষ মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। যেহেতু জমিজমার বিষয়টি দেওয়ানি কার্যবিধির অধীনে পড়ে, তাই একজন উপপরিদর্শককে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি একেবারেই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, কোনো পলিটিক্যাল বিষয় না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাষাঢ়ায় সলিমউল্লাহ সড়কের পাশের একটি জমির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ মাধ্যমে মালিক দাবি করা মহানগর জামায়াত ইসলামীর সদস্য গোলাম সারোয়ার সাঈদ একটি এক্সাভেটর দিয়ে ওই জমিতে থাকা একটি দোকান ভাঙতে যান। কিছু অংশ ভেঙেও ফেলা হয়।
পরে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত হাশেম শকু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানা, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মাহবুব হাসান জুলহাস ও তাদের অনুসারীরা। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মারধরের শিকার হন গোলাম সারোয়ার সাঈদ।
এদিকে উভয়পক্ষের লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সলিমউল্লাহ সড়কের পাশের বড় একটি অংশের জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)। নাসিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ওই জমির একটি অংশে ‘এটেঁল মাটি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী মো. নাসির ওরফে ‘টুন্ডা নাসির’। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্দ লোকজন এ রেস্তোরাঁটি ভাঙচুর চালান।
পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে নাসিরের বেশ কয়েকমাস ভাড়া বকেয়া থাকায় চুক্তি বাতিল করে গত ফেব্রুয়ারিতে আশিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাখাওয়াত ইসলাম রানা বলেন, আশিকুলের সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে একটি ফার্মেসি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। তাকে না জানিয়ে জামায়াত ও শিবিরের লোকজন নিয়ে ওই দোকান এক্সাভেটর দিয়ে ভাঙতে যান সাঈদ। পরে তিনি এবং আশেপাশের ব্যবসায়ীরা তাতে বাধা দেন। তবে, এই সময় জামায়াত নেতাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। যদিও একটি ভিডিওতে শওকত হাশেম শকু, সাখাওয়াত ইসলাম রানার উপস্থিতিতে সাঈদকে মারধর করতে দেখা যায়।
এদিকে, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মাহবুব হাসান জুলহাস পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, দোকান ভাঙতে বাধা দিলে ‘জামায়াত ও শিবিরের লোকজন’ তাকে মারধর করেছেন। জুলহাস এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগও থানায় দিয়েছেন বলেও জানান সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির।
তবে, সিটি কর্পোরেশনের এ জমির ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত নাজমা রহমানের দেবর। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে আদালতে মামলাও করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।
কথা হলে সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেন, শহরের বাগে জান্নাত মসজিদ থেকে পশ্চিম দিকের সবগুলো দোকানের এবং পেছনের জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।
তবে, এই জমির বড় একটি অংশ ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করেছেন ফয়েজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে ‘জাল দলিল’ তৈরির অভিযোগে ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন একটি মামলাও করে। ওই মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সুতরাং এ জমির মালিকানা ফয়েজুর রহমান বা গোলাম সারোয়ার সাঈদ কেউই দাবি করতে পারেন না।
এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসাইন বলেন, “ওই জায়গার বেশ কিছু জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং সেগুলো রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্নজনকে ভাড়াও দেওয়া হয়েছে। এ জমি নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ হয়েছে কিনা আমরা এখনও অবগত নই। আমাদের কাছে কেউ আসেননি।”


