জেলায় মাদকের বিস্তার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উদ্বেগ
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
জেলায় মাদকের বিস্তার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উদ্বেগ
# সকল অপরাধের মূলে মাদক : জেলা প্রশাসক
# মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবে প্রয়োগ হয় কম : পুলিশ সুপার
জেলার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে সকলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সাথে তা প্রতিরোধসহ উত্তরণের ব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক, প্রসাশনসহ সামজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা মন্তব্য প্রদান করেন। বিশ্লেষকদের মতে, মাদকাসক্তি কেবল ব্যক্তির জীবনকে ধ্বংস করে না, বরং পরিবার ও সমাজের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মাদক ব্যবহারের কারণে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি, এবং স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। তাই, মাদক নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে সবমহলের ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপারের তথ্যমতে, গত মাসে পুরো জেলায় ৮৩ টি মাদক মামলা হয়েছে। তাদের মতে, যা তুলনামুলক ভাবে বেশি হয়েছে। আর এজন্য মাদকের বিষয়টি সকলে দৃষ্টিতে পড়ায় তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই সভায় মাদক সেবনের ফলে নানা সমস্যা সৃষ্ঠ তুলে ধরা হয়।
অন্যদিকে মাদক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো হলো:মাদকাসক্তি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি আত্মবিশ্বাস হ্রাস করে, বিষন্নতা ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে এবং ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয়।
সামাজিক সমস্যা: মাদকাসক্তি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। এটি অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি করে, পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক প্রভাব: মাদকাসক্তি ব্যক্তির কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের মাদক কেনার জন্য অর্থ যোগাড় করতে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। চুরি, ছিনতাই,ডাকাতি থেকে শুরু করে হত্যায় লিপ্ত হয়ে পগে। এছাড়া, মাদকাসক্তি সমাজের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে।
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি: মাদকাসক্তি বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে, যেমন-লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, এইডস ইত্যাদি। মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি: মাদক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আইন প্রয়োগ:মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কঠোর করা হয়েছে এবং এর প্রয়োগ জোরদার করা হচ্ছে। চিকিৎসা ও পুনর্বাসন: মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদক বিরোধী সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সবাই যদি নিজেদের অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই তাহলে যত আলোচনা হলো সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। শুধু বলছি কিন্তু সেটাকে কতটুকু বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি তা যদি অনুভব না করি তাহলে সম্ভব হবে না। মাদক হচ্ছে সকল অপরাধের মূল। যারা মাদক সেবন করে তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে বিবেক কাজ করে না। যখন বিবেক কাজ করে না তখন তারা যে কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে মাদকের প্রসার বাড়ছে আমরা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে আমাদের সকলের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আগামী মিটিংয়ে এটার সফলতা পাবো।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির আলোচনায় সবার মাঝে একটি বিষয়ে উঠে এসেছে তা হলো মাদক। গত মাসেও নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩০টি মাদক মামলা হয়েছে। তার মাঝে ১২৭ জন গ্রেপ্তার হয়। এই জেলাঠি শিল্পাঞ্চল হওয়ায় বাহিরের জেলার এখানে এসে শ্রমিক হয়ে কাজ করায় লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। এদের অধিকাংশ কোনরকম পড়াশুনা করে এখানে এসে গার্মেন্টসে চাকরী করে।
কিন্তু তারা এলাকায় থাকাকালীন সময়ে বিড়ি সিগারেট খেত। এখানে এসে গাজাখোর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অভিজ্ঞাতা মতে মাদাক খাওয়া শুরু হয় অষ্টম শ্রেণী থেকে। প্রথমে সিগারেট খায়, সেখান থেকে গাঁজা, পরে ইয়বায় আসক্ত হয়ে যান। আমার মনে হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদক খেলে কি ধরণের ক্ষতি হয় তা তুলে ধরলে অনেকটা কাজ হবে।
তিনি বলেন, আমরা যখন মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করি তারাও জামিনে এসে পড়ে। আবার এই মাদক মামলায় কেউ স্বাক্ষী হতে চায় না। তখন সোর্সকে আমরা স্বাক্ষী বানাই। তখন সব দোষ পুলিশকে দেয় পুলিশ মাদক দিয়ে ফাঁসিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে। যার জন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে। মাদককে প্রতিরোধ করতে হবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক খেলে শরীরের লিভার সহ স্বাস্থ্যের কি ক্ষতি হয় তা তুলে ধরতে হবে।
আসলে আমরা মিটিংয়ে বসে যত ভালো কথা বলি, বাস্তবে তার প্রয়োগ কম হয়। মাদকব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়ে আমাদের কোন লাভ নেই। কেননা আমাদের এখানে কোন বাড়িঘর নেই। এখানকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে আমাকেই জবাবদিহি করতে হবে। আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ইসলাম কোন অপরাধকে সমর্থন করে না। এমনকি সমাজ এবং আইনীভাবেও তা সমর্থন করে না। তাই মাদককে নির্মূল করতে হলে নারায়ণগঞ্জের কোন কোন অঞ্চল দিয়ে মাদকের চালান প্রবেশ করে তা রোধ করতে হবে। সেই সাথে মাদকের কারণে সমাজের মাঝে সবচেয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরী হয়। এসব প্রতিরোধ করা যখন হবে তখনই হয়ত মাদক কিছুটা নির্মূল হতে পারে।


