Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

ফতুল্লার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে গ্রাহক সেবায় চরম ভোগান্তি

Icon

সাইমুন ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

ফতুল্লার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে গ্রাহক সেবায় চরম ভোগান্তি

ফতুল্লার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে গ্রাহক সেবায় চরম ভোগান্তি

Swapno


নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ফতুল্লার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমানে কার্যত অচল হয়ে আছে। নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা কেউ পলাতক, কেউ বিচারাধীন মামলায় জড়িত, আবার কেউ প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগ। ফলস্বরূপ, আইন অনুযায়ী যাদের উপর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পড়েছে, তাদের সীমিত ক্ষমতা ও প্রশাসনিক জড়তায় পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।


তথ্য মতে, ফতুল্লা ইউনিয়ন, এনায়েতনগর ইউনিয়ন,কাশিপুর ইউনিয়ন, বক্তাবলী ইউনিয়ন ও কুতুবপুর ইউনিয়ন এই পাঁচটি ইউনিয়নের কোন চেয়ারম্যানই দায়িত্ব পালন করছেন না। সকলেই রয়েছেন পলাতক।ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান-১ যারা ছিলেন তারা।


এর ফলে ইউনিয়নবাসী এক ভয়াবহ দুঃসময় পার করছে।ক্ষুদ্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেবাও পূর্বের ন্যায়  বিরামহীন  পাচ্ছে না তারা। একটি ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণত যে সেবাগুলো নাগরিকদের দিয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ নিবন্ধন সনদ প্রদান, নাগরিক, চারিত্রিক ও ওয়ারিশ সনদ প্রদান, উপকারভোগী তালিকা তৈরি (ভিজিডি, ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ইত্যাদি),বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রস্তাব ও অনুমোদন,


ভূমি সংক্রান্ত সুপারিশ (নামজারি, খতিয়ান সংশোধন ইত্যাদি), স্থানীয় সালিশি ব্যবস্থা পরিচালনা (মামলা-মোকদ্দমা এড়াতে), ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনা, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশংসাপত্র ও সংযুক্ত সনদ দেওয়া, স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, ব্রিজ নির্মাণ),সরকারি অনুদান ও পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ আরো বহুবিধ কার্যক্রম করে থাকে। বর্তমানে এসব কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ।


জনগণ দিনের পর দিন ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও কোনো সেবা পাচ্ছেন না। এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,একটা ওয়ারিশ সনদের জন্য ১৫ দিন ঘুরছি। কেউ সই করে না, কেউ দায় নিচ্ছে না।  আবার একজন জানান,মায়ের বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে ৬ মাস আগে। চেয়ারম্যান নাই, সেক্রেটারি বলে ওনার হাতে কিছু নাই। তাহলে কোথায় যাব আমরা? এই ভোগান্তিকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি ‘দালাল চক্র’। তারা পরিষদকে ব্যবহার করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সেবা দেওয়ার কথা বলছে, যেগুলো সাধারণত বিনামূল্যে বা সামান্য ফি দিয়ে হওয়ার কথা।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানই প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু যখন তিনি দায়িত্বে না থাকেন, তখন আইন অনুযায়ী ১ নম্বর মেম্বার বা প্যানেল চেয়ারম্যান সাময়িক দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তাদের হাতে সাইনিং অথরিটি ও প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষমতা না থাকায় পরিষদের মূল কার্যক্রমগুলো হয় স্থবির, নয়তো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।


অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণ, বিকল্প কর্মকর্তা নিয়োগ, অথবা সংশ্লিষ্ট সচিবালয়ের মাধ্যমে সেবা চালু রাখার মত উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি।

এলাকার গুণীজন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিছু মানুষের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা জানান , “চেয়ারম্যান না থাকলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম যেন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, এটা একটি গভীর প্রশাসনিক ব্যর্থতা। সরকারের উচিত এখনই বিকল্প ব্যবস্থায় জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা।


” তারা আরও বলেন, এই ধরনের জড়তা কেবল জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না, বরং সরকারের উপর আস্থা নষ্ট করে এবং দালালতন্ত্রের বিস্তার ঘটায়। ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতিবিদরা এই অচলাবস্থাকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সুযোগ হিসেবেও ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফতুল্লার সচেতন নাগরিকরা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ হলো জনগণের সবচেয়ে কাছের সরকার। এখানকার সেবা না থাকলে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং অন্তর্র্বতীকালীন কার্যকর ব্যবস্থা দরকার।


বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ফতুল্লার এই পাঁচটি ইউনিয়নের সেবা অচল অবস্থায় থাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ জলাবদ্ধতা নিরসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরা কোন উদ্যোগ নিতে সাহস পাননি।ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে  লাখ লাখ মানুষ।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন