Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

না.গঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসমত শৌচাগার সংকট

Icon

মাকসুদুর রহমান

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

না.গঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসমত শৌচাগার সংকট

না.গঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসমত শৌচাগার সংকট

Swapno

 নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পেতে নির্ভর করতে হয় ‘৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের’ উপর। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। সম্প্রতি হাসপাতালটির শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় তীব্র ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।



সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের নিচতলার শৌচাগারে প্রবেশ করতেই নাকে লাগে তীব্র দুর্গন্ধ। শৌচাগারগুলোর অধিকাংশই অপরিষ্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন।  ভেতরে ঠিকমতো আলোর ব্যবস্থা নেই, দুই-একটিতে বাতি থাকলেও তা নিভু নিভু করে জ্বলছে। একাধিক পানির কল থাকলেও প্রায় সবগুলোই অকোজো।


আবার যেগুলোতে পানি আসে সেগুলোও বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এগুলোর পানি পড়তে পড়তে মেঝেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ময়লা আবর্জনায় দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে রয়েছে।


এছাড়া পুরুষ টয়লেটগুলোর স্যানিটারি ফিটিংগুলোর অধিকাংশই ভাঙা ও ব্যবহার অনুপযোগী, এমনকি সেগুলোতে প্লাম্বিং ফিক্সচারে পানির সংযোগ পর্যন্ত নেই। মেঝে এবং দেয়ালের টাইলসগুলোও ভাঙা, যা যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, যেখানে একবার পিছলে পড়ে গেলে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী রোগী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ বলেই সরকারি হাসপাতালে আসি। কিন্তু এখানকার শৌচাগারের যে অবস্থা, তাতে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে। শৌচাগারের পাশেই আবর্জনার ভাগাড়, যেখান থেকে পচা ভাত ও মাছের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এই দুর্গন্ধে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের টেকা দায় হয়ে পড়েছে। পরিচ্ছন্নতার জন্য রাখা ঝাডু এবং অন্যন্য সামগ্রীগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী, যা দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।


আরেক ভুক্তভোগী আউয়াল জানান, শৌচাগারের বাইরে পুরুষ লেখা থাকলেও ভেতরে নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে এক নারী জানান,  লেখা দিয়ে কী হবে? অন্য শৌচাগারগুলোর অবস্থা আরও খারাপ, তাই বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি দেখার কেউ নেই এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।


নিচতলার এই দুর্বিষহ চিত্র দেখে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গেলে দেখা গেছে আরেক করুণ চিত্র। সেখানে শৌচাগার থাকলেও দরজায় তালা ঝুলছে, যা সাধারণ রোগীদের ব্যবহারের জন্য নয়। আরেকটি শৌচাগার দেখা যায় বোর্ড দিয়ে এমনভাবে আটকে রাখা হয়েছে যা ব্যবহারের কোনো উপায় নেই। এতে রোগীরা আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা যেখানে মানুষের জীবনকে নিরাপদ ও কর্মক্ষম করার কথা, সেখানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি হাসপাতালের শৌচাগারের এমন বেহাল দশা রোগীদের জন্য এক দুর্ভোগের আতুরঘরে পরিণত হয়েছে।


এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে বারবার জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রোগীদের। এই চরম অব্যবস্থাপনা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে হাসপাতালের সেবার মান যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। সরকারি এমন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে শৌচাগারের এই অব্যবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে রোগীদের ভোগান্তি শুধু বাড়বেই । কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপই পারে এই জনদুর্ভোগের অবসান ঘটাতে।


এই বিষয়ে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবুল বাসার যুগের চিন্তাকে বলেন,  ‘যেখানে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার লোক টয়লেটগুলো ব্যবহার করে থাকে। আমরা যতবারই পরিষ্কার করি, ততবারই ময়লা হয়। আর রোগীরা তাদের প্রয়োজন কাজ শেষ করে পরিমাণ মতো পানি ব্যবহার করে না।


প্রতিবার রোগীরা বাথরুম ব্যবহার করার পর তো, আমাদের ওই পরিমাণ লোক নেই যে বারবার বাথরুম পরিষ্কার করবে!  এটা ঠিক, আমরা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করতে পারছি না। আমাদরে লোকবলের অভাব এবং সেই সাথে  রোগীদের সচেতনতার অভাব।’ এছাড়া তিনি বলেন, ‘নিচের বাথরুমগুলোর সংস্কার কাজ চলমান, যাতে করে পানি জমে না থাকে। আর আমাদের যে নতুন ভবন করে দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা শীঘ্রই সেখানে কার্যক্রম শুরু হবে। তাহলে আমাদের এরই রকম সমস্যা আর থাকবে না।’  

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন