বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাত্রলীগমুক্ত করে শিক্ষার্থীরা
লতিফ রানা
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
২০২৪’র ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাত্রলীগমুক্ত করে শিক্ষার্থীরা
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন ছিল। এই ছুটির দিনেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগের দিন আবু সাঈদসহ নিহত ছয়জনের উদ্দেশ্যে গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল, বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মতো ঘটনা চলে দিনভর।
প্রথম দফায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গায়েবানা জানাজা পড়ে আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যর দিকে এগুলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তারা। পরে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরের সামনে যায় এবং সেখানে দ্বিতীয় দফায় জানাজা পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা কফিন মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে রওনা দিলে তাদের উদ্দেশ্যে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ।
জানাজা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শহীদদের এই রক্তা এবং এই আন্দোলন আমরা বৃথা যেতে না দেওয়ার একই সাথে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন থেকে সরে না যাওয়ার শপথ করেন। তাছাড়া সাভার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট এলাকা, ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ, মাদারীপুর মোস্তফাপুর,
শরীয়তপুরের জাজিরা, বরিশালের চৌ-মাথা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর ও সরাইল, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা ও শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কোটা বিরোধীদের সাথে ছাত্রলীগ ও পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে বলে জানা যায়। রাতের বেলায় যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারে চলে কোটা বিরোধীদের সাথে ছাত্রলীগ ও পুলিশের তান্ডব। সারাদিনের হামলা ও ধরপাকরের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই রাতে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচী ঘোষণা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
১৭ জুলাই আগের দিন বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের মরদেহ রংপুরের পীরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। নিহত আবু সাঈদের বাড়ির পাশে জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে সকাল সোয়া নয়টায় জানাজা আদায় করা হয় এবং সোয়া ১০টার দিকে তার লাশ দাফন করা হয়।
রাতে সারজিস আলম ও আসিফ মাহমুদের ফেসবুক আইডিতে বলা হয় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সোয়াটের নেক্কারজনক হামলা ও খুনের প্রতিবাদে, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করাসহ একদফা দাবিতে পরের দিন ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট সাটডাউন’ ঘোষণা করছি।
সেখানে আরও বলা হয়, এই কর্মসূচী চলাকালীন সময় হাসপাতাল ও জরুরী সেবা ব্যতীত কোন প্রতিষ্ঠানের দড়জা খুলবে না। রাস্তায় এম্বুলেন্স ছাড়া কোন গাড়ি চলবে না। এ সময় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সমর্থনে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
এই আন্দোলনের সাথে বিএনপি জামায়াতের সম্পৃক্ততরা দাবি করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরাষ্টমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, এই আন্দোলন ছাত্রদের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে গেছে। তারা বিএনপি জামায়াতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যারা বিএনপি জামায়াতের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে বিএনপি জামায়াতসহ তাদের বিচার করতেই হবে।
তবে বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা এই আন্দোলনের সাথে কখনও সরাসরি জড়িত নই। আমরা তাদেরকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি তাদের এই আন্দোলন যুক্তিসংগত। সেদিন বিএনপির গায়েবানা জানাজা কর্মসূচী থাকলেও পুলিশের বাধায় তা পালন করতে পারেনি বিএনপি। তবে বিভিন্ন কৌশলে বিএনপির কিছু নেতা কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রবেশ করতে পারলে সেখানেই তারা গায়েবানা জানাজা আদায় করেন।
অন্যদিকে পুলিশের বাধার মুখে সড়কের মধ্যে আলাদা জানাজা আদায় করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা কর্মীরা। এই দিন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাবেশের ব্যানারে আটক বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে নিতে শাহবাগ আসেন শিক্ষকরা। সেখানে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ড হয় শিক্ষকদের। পরে পাঁচজন শিক্ষককে থানায় প্রবেশ করতে দেয় পুলিশ এবং আলোচনার পর দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানান শিক্ষকগণ।
একই সাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নিন্দা জানান তারা। এদিন চট্টগ্রামেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় নগরের লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত এ গায়েবানা জানাজায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০ জায়গায় সড়ক-মহাসড়ক এবং দুই জায়গায় রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।


