২০২৪’র ২০ জুলাই কারফিউ ভেঙে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন
লতিফ রানা
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
২০২৪’র ২০ জুলাই কারফিউ ভেঙে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন
২০ জুলাই তৃতীয় দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। সেদিন দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউর অংশ হিসেবে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি’র সাথে সেনাবাহিনীকেও টহল দিতে দেখা যায়। ১৯ জুলাই শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর বৈঠকে মতবিরোধ দেখা যায়।
এই কারফিউর মধ্যেই যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর, মানিকনগরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। কারাফিউ ভেঙে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নামে আন্দোলনকারীরা। এইসব সংঘর্ষে দুইজন পুলিশসহ অন্তত ৩১ জন নিহত হন, যার মধ্যে শুধু ঢাকায়ই নিহত হন ১৭ জন।
এই দিন দেশজুড়ে শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চমহল নিরাপত্তার স্বার্থের অজুহাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই সকালেই কারফিউ ভেঙ্গে রাস্তায় নামে আন্দোলনকারীরা। এদিন আন্দোলনকারীদের সাথে প্রথম সংঘর্ষ বাধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে এরপর শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে যোগদেয় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াদ ও ডিবি।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, গার্মেন্টস কারখানায় ভাঙচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিন সেনাবাহিনী মাঠে থেকেও আন্দোলন নিবৃত্ত করতে পারেননি। ২০ ও ২১ জুলাই সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এরই মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দেশের রিেমটেন্স আসার পথও রুদ্ধ হয়ে পড়ে। সরকারের বন্দরকেন্দ্রীক রাজস্ব ও শুল্ক আহরণ কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরিণ অর্থ লেনদেন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়তে শুরু করে।
২০২৪ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ-আন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করে। প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন শুরু করলেও পরে ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলনে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সমর্থন জানায়।
শেষ মুহুর্তে সরকারের গোয়ার্তুমি এবং দলীয় ক্যাডারসহ বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে কিলিং মিশনে নামার পর সেই আন্দোলনে জড়িত হতে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ দেশের আপামর জনতা। একটা পর্যায়ে সরকার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হওয়া এবং কোটা বিষয়ক শুনানী এগিয়ে নিয়ে এসে তাতে তাতে মেধাভিত্তিক কোটার পরিমান ৪৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯৩ শতাংশে নিয়ে আসলেও তা অনেক দেরি হয়ে যায়।
ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারী দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন লেলিয়ে দিয়ে এবং পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনী ব্যবহার করে শত শত শিক্ষার্থীকে হত্যার পর এই রায় কিংবা আলোচনা আন্দোলনকারীদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি।
শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেয় এবং পরে কোটা বিরোধী আন্দোলন সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। সেই আন্দোলনের কাছে আত্মসমর্থন করে বাংলাদেশে প্রথম লজ্জাজনক ইতিহাস তৈরি করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা আত্মীয়স্বজনসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।


