Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরাধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরাধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরাধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা

Swapno



শিল্প ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ জেলা নারায়ণগঞ্জে আয়তনের তুলনায় লোকসংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ শহরে এই চাপ আরও বেশি। আর এই শহরকে ঘিরেই অন্তত কয়েক হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তাই অফিস-আদালত, দোকানপাট, ছোট ছোট কারখানাগুলোর বেশিরভাগ অবস্থানই শহর ও এর আশেপাশে। তাই এই শহরটি একটি ঘিঞ্জি শহর বা ঘিঞ্জি নগরী হিসেবেও পরিচিত। তাই বিভিন্ন সময় এসব কলকারখানা, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি রোমহর্ষক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।


যেখানে অনেক লোকের হতাহাতের মতো ঘটনা ঘটে। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইল জেলেপাড়া এলাকার শান নিটিং মিলস লিমিটেড এর অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় নিহত হয় ২২ জন। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়।


২০২১ সালের ৮ জুলাই জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫৪ জন শ্রমিক নিহত হন। এর বাইরে গ্যাস বিস্ফোরণে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়তই এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কেড়ে নিচ্ছে শত শত মানুষের প্রাণ। তাই এক্ষুণি সচেতন না হলে যেকোন সময় আবারও এ ধরণের বড় দুর্ঘটনা ঘটনে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল।


তবে এসব ঘটনার বেশিরভাগই মানব সৃষ্ট পরিবেশের কারণে ঘটছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকগণ। যারমধ্যে রয়েছে অপরিকল্পিত বাড়িঘর ও শিল্পকারখানা নির্মাণ, প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অনুপস্থিতি, সরু যোগাযোগ ব্যবস্থা, আগুন নিভাতে অপর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, ফায়ার ডিফেন্সের লোকবল সংকট, প্রয়োজনীয় আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, গ্যাস সরবরাহ লাইনের ত্রুটি এবং অসাবধান ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ।


এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানার কমপ্লায়েন্সের বিভিন্ন অসামঞ্জস্য বিষয়গুলো সময়মতো পরিদর্শনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অনীহাও এই ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী বলে সচেতনমহলের ধারণা। তবে এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কারখানা কর্তৃপক্ষের গোয়ার্তুমি। কেননা কারখানার মৃত্যের সংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ হলো শ্রমিকদের বহির্গমনে বাধা প্রদান করা।


অর্থাৎ যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাথে সাথেই কারখানার সকল বহির্গমন এমনকি জরুরী বহির্গমনের পথও উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও উল্টো এসময় খোলা গেটও বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ পাওয়া যায়। যার দরুন মৃত্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইল জেলেপাড়া এলাকায় অবস্থিত শান নিটিং মিলস লিমিটেড-এ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যেখানে  এর অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় ২২ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনা ছিল খুবই মর্মান্তিক। যা ঐ সময়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। সেই ঘটনায় বিভিন্ন ফায়ার ডিফেন্সের সাথে সাথে স্থানীয়দের উদ্ধার তৎপরতাও অনেক বেশি ছিল বলে জানা যায়।


২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ঘটনার বিবরণে জানা যায় মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের পাইপ লিকেজ থাকার কারণে সেখান থেকে গ্যাস লিকেজের মাধ্যমে মসজিদের ভিতর গ্যাস প্রবাহিত হতে থাকে।


মসজিদটি এসি চালিত হওয়ায় দরজা ও জানাল সব বন্ধ থাকায় সেই গ্যাস বাড়তে বাড়তে মসজিদের রুমটি একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। এর ফলে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পর চেঞ্জওভার সুইচ দিয়ে লাইন চেঞ্জ করার সময় সৃষ্ট বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে পুরো রুমটি আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়।এ সময় মসজিদের ভেতরে থাকা এবং মসাজিদের সামনে দিয়ে যাওয়া পথচারীরাও অগ্নিদগ্ধ হয়।



২০২১ সালের ৮ জুলাই রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ৫৪ জন শ্রমিক নিহত হয়। এই ঘটনায় প্রায় ৭০ জনের মতো আহত হয় বলে জানা যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের প্রায় ৩০ ঘন্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ঘটনার পরদিন ৯ জুলাই দুপুরে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।


এর বাইরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছরই অর্ধশতরও উপরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। জেলার ফতুল্লা থানা, রূপগঞ্জ ও বন্দর উপজেলায় এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে বলে জানা যায়। এসব ঘটনা প্রতিরোধে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন, বহুতল ভবন নির্মাণে ভবন মালিকদের একাধিক সিঁড়ি স্থাপনের বিধিমালা মেনে চলা,


অগ্নিকাণ্ডের প্রাথমিক নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থাসহ এর ব্যবহার প্রশিক্ষণ এবং একই সাথে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন কারখানার মালিক শ্রমিকসহ সবার সম্মিলিতভাবে তদারকি ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব দুর্ঘটনা বহুলাংশেই রোধ করা সম্ভব বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন