Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

মাদকের বিস্তার রোধে কঠিন পদক্ষেপ প্রয়োজন

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

মাদকের বিস্তার রোধে কঠিন  পদক্ষেপ প্রয়োজন

মাদকের বিস্তার রোধে কঠিন পদক্ষেপ প্রয়োজন

Swapno

মাদক এমন একটি দ্রব্য যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে কিছু বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং সেই দ্রব্যকে বারবার সেবন করার একটি প্রবণতা বা আসক্তির কারণ তৈরি করে। এদের মধ্যে নিকোটিন, মরফিন, হেরোইন, এলএসডি, এবং কোকেন উল্লেখযোগ্য। মাদকদ্রব্যে আসক্তির কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।


অতিরিক্ত মাদক সেবন মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বেড়ে যেতে পারে উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক রোগের ঝুঁকি। এই মাদকের করাল গ্রাসে অধঃপতনে যাচ্ছে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ তথা পুরো জাতি।


তাই সমাজের ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত এই মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশে একের পর এক তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আইন। কিন্তু তাতেও মাদকের ব্যবহার কমছে না উপরন্তু বাড়ছে। সচেতন মহলের মতে দেশের কিছু অনিয়ম এই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য দায়ী।


যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পরিবারের কর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা, সমাজের কর্তাব্যক্তিদের অর্থলোভে সিন্ডিকেটে জড়িয়ে যাওয়া, দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মকর্তাদের অসাধুতা এবং গ্রেফতার হওয়ার পরও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিন পাওয়া (যা কিছু অসাধু আইনজীবীকে মাদকাসক্তদের পক্ষ নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের পথ তৈরি করে দেয়)।
 
এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী ও অবৈধ মাদক পাচার প্রতিরোধ দিবসের অনুষ্ঠানে বলেন, মাদক শুধু দেশীয় না, আন্তর্জাতিক সমস্যা। মাদকের প্রভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতিসহ সবকিছুই হুমকির মুখে পড়ে।


এর ভয়াল থাবায় ধ্বংস হয় দেশের যুব সমাজ, বাধাগ্রস্ত হয় দেশের সমৃদ্ধি। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তদের জন্য ৭টি বিভাগীয় শহরে ১ হাজার ৪ শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি বিভাগীয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।
 
তবে মাদকের বিষয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসি খুবই ভয়াবহ অবস্থানে আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্য মতে জানা যায়। সূত্রমতে, মাদকের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হলো নারায়ণগঞ্জ। আমাদের দেশে ভারতের সীমান্তবর্তী দুই জেলা কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে মাদক প্রবেশ করে।


এই দুই জেলার সাথে বড় একটি সীমানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার। তাই মাদক ব্যবসায়ীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা দেশে এই মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দেয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এখানে বিভিন্ন সময় অভিযান করে অনেক মাদকদ্রব্য উদ্ধারের খবরও আছে। অন্যদিকে নদীপথেও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এই মাদক নিয়ে আসে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে।


সে তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলায় প্রায় ৫শত মাদক ব্যবসায়ী আছে। যার দুই তৃতীয়াংশই সদর উপজেলায় (ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাসহ) বাস করে। তবে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাদক স্পট রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া এলাকায় বলে জানা যায়। তাদেরকে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশের সোর্স সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে ধরা পড়লে তাদেরকে কিছু অসাধু আইনজীবী জামিনের ব্যবস্থা ও কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
 
আমাদের দেশে সচরাচল যে সব মাদক দ্রব্য রয়েছে তার মধ্যে হিরোইন, কোকেন, ইয়াবা, আফিম, মারিজুয়ানজ/গাঁজা, ফেন্সিডিল, বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ঔষধ, মদ, বিয়ার এমন কি জুতা লাগানোর আঠা পর্যন্ত দেখা যায়। অনেকে আবার বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংকের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে নেশা করে।


একদিকে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা সমাজে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বাড়াতে তৎপরতা চালিয়ে বাড়াচ্ছে মাদকের চাহিদা। আর সেই অনুযায়ী বাড়ছে সাপ্লাই। এমনকি বিভিন্ন সময় মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। অর্থাৎ তারা মাদক কন্ট্রোল করতে গিয়ে নিজেদের অনেকেই মাদকের শিকার হচ্ছেন বলেও জানা যায়।
 
সচেতন মহলের অভিযোগ, মাদকের বিভিন্ন স্পট থেকে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের সোর্সরা মাসোহারা নেয়। ফলে তার নির্বিঘ্নে মাদক বিক্রি করে। এমনকি অনেক সময় অভিযানের আগেই তারা মাদক বিক্রেতের সাবধান করে দেন বলেও মনে করেন তারা। মাদক বিক্রেতারা যদি পুলিশের জালে ধরা পড়েও তাতেও সমস্যা হয় না।


এক ধরণের অসাধু আইনজীবী তাদের জামিনের কাজ করার জন্য বসেই থাকে। তারা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে খুব সহজেই অল্পদিনের মধ্যেই তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে দেয়। এদের পুলিশে ধরিয়ে দিলেও লাভ হয় না, কয়দিন পর আবার জামিনে বের হয়ে আসে। তাই মাদক সেবন বন্ধে আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে না পারলে সুফল পাওয়া সহজ হবে না বলে বিশ্লেষকদের দাবি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন