Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

দালালদের উৎপাতে দিশেহারা রোগীরা

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

দালালদের উৎপাতে  দিশেহারা রোগীরা

দালালদের উৎপাতে দিশেহারা রোগীরা

Swapno

নারায়ণগঞ্জ  ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি জেলার অন্যতম বড় সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে অধিক পরিচিত। প্রতিদিনই এখানে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। মধ্যবিও ও নিম্নবিও মানুষের প্রধান ভরসার স্থান হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে বেড়েছে দালালদের আনাগোনা। হাসপাতালটি প্রায় এখন দালালদের দখলে।


দেখা যায়, হাসপাতালটিতে প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক রোগী তা জানেন না, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু দালাল চক্র রোগীদের ভুল তথ্য দিয়ে বাইরের ক্লিনিকে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে যেমন সাধারন মানুষদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তেমনি অনেকে স্বল্পমূল্যের সরকারি সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।


নারায়ণগঞ্জের খানপুর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় যে, হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রেসহ প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা- নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই পরীক্ষা- নিরীক্ষা গুলো স্বল্পমূল্যে করা হয়ে থাকে। তবে দেখা যায়, অনেক রোগী এসব তথ্য জানেন না। সূএ জানায়, বহির্বিভাগে যে ডাক্তার গুলো বসে তাদের হয়েই দালান চক্র কাজ করে থাকে। বহির্বিভাগের এই ডাক্তার গুলোই অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে বিকাল বা সন্ধ্যা থেকে। দালালরা যে যত বেশি রোগী নিয়ে যাবে সে তত বেশি কমিশন পাবে। তাছাড়া কিছু স্থানীয় লোকদের কারনেও দালালদের সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করা যাচ্ছে না বলে তারা জানান।


আফরোজা নামের একজন রোগী বলেন, আমাকে এক্স-রে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে বের হওয়ার পর একজন মহিলা স্লিপ নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে কী করতে হবে। এক্স-রে টা উনি বাহিরে থেকে করতে বলছেন। এখানে এক্স-রে করা হয় এ ব্যাপারে তিনি জানেন কীনা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এটা তিনি জানতেন না। তাকে বলা হয়নি। আরেকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বলেন আমাকে চার-পাঁচটা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।


ডাক্তার দেখিয়ে বের হওয়ার পর একজন মহিলা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজ দিয়ে বলেন, পরীক্ষা গুলো যেন ওখানে করি। আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে এখানে এই পরীক্ষা গুলো করা হয় কীনা, তিনি কিছু না বলে চলে যান। আরিফ নামে একজন রোগী জানান, আমার ছেলের কিছুদিন যাবৎ জ্বর। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছে। জানি এখানে কম খরচে সরকারি ভাবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু রিপোর্ট সঠিক আসবে কীনা, তাই কিছুটা বাড়তি টাকা দিয়েই বাইরে পরীক্ষা গুলো করানো হয়।


সুলতান নামে একজন বলেন, জানি এখানে ডাক্তারের চাপ অনেক কিন্তু তারা এটুকু তো বলতে পারে যে টেস্ট গুলো এখানে করা যায়। কেন স্লিপটা অন্যজন দেখে বলে দিবে যে কোথায় কি পরীক্ষা করতে হবে। তাদের ভুল তথ্যের জন্যে আমরা সরকারি সেবাগুলো ভালো ভাবে নিতে পারি না। যেখানে সিবিসি পরীক্ষা সরকারি ১৫০ ভাবে টাকায় করা হয় সেখানে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে ৮০০ টাকা খরচ করতে হয়।


এখানে যে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আরও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয় তা অনেকেই জানে না দালালদের জন্য। দালাল সমস্যা এই হাসপাতালে দীর্ঘদিনের। অনেকবার অভিযান চালিয়েও এ সমস্যা  সমাধান করা যায়না । অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। প্রশাসন যাতে স্থায়ী ভাবে এটার সমাধান করে থাকে এ দাবি জানাচ্ছি।


এ বিষয়ে এক শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, এই সমস্যাটা আমাদের দীর্ঘদিনের ও সবচেয়ে কঠিন সমস্যা জেলা প্রশাসক কিছুদিন পরপরই রেট দিচ্ছে, ম্যাজিস্ট্রেট ধরে নিয়ে যাচ্ছে আবার ছাড়া পেয়ে ওরা আগের মতো করে। রোগীদের টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে নিয়ে যায়। দালাল সমস্যা যদি স্থায়ী ভাবে সমাধান করতে হয় তাহলে প্রতিদিন যদি ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের গাড়িসহ ঢোকে তাহলে সমাধান করা যায়।


এ বিষয়ে জিঙ্গাসাবাদে হাসপাতালটির চিকিৎসা তত্তাবধায়ক ডা. মো. আবুল বাশার যুগের চিন্তাকে বলেন, যারা দালালদের কথা শুনে বাহিরে যায়, তাদের শিক্ষার অভাব। ডাক্তাররা কেন বলে দেয় না এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, তারা প্রতিদিন ২০০-২৫০ রোগী দেখে, তাদের এত সময় কই?

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন