পাঁচ সন্বয়ককে তুলে নেয় ডিবি নিরাপত্তা জন্য নেওয়ার দাবি করে
লতিফ রানা
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
ফিরে দেখা : ২০২৪’র ২৭ জুলাই পাঁচ সন্বয়ককে তুলে নেয় ডিবি নিরাপত্তা জন্য নেওয়ার দাবি করে
২০২৪ সালের ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। আগের দিন বিকেলে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকেও ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।
গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে জানতে ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানায় ডিবি। ২৭ জুলাই তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানায় ১৮ জুলাই বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার আগে প্রায় এক লাখ নতুন সিমকার্ডধারী ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
অন্যদিকে আন্দোলনে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সিসিটিভি ফুটেজে চেহারা দেখা গেলেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে দেশ জুড়ে তৈরি হয় নতুন আতঙ্ক। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আদালতের রায়ের পর সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই দিন রাতে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন তিন দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ২৭ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাকভবনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ১৮ জুলাই সেতু ভবন, বিটিভি, মেট্রোরেল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার আগে ঢাকায় নতুন ১ লাখ নতুন সিমকার্ডধারী প্রবেশ করে বলে সাংবাদিকদের জানায়।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে রাজধানীজুড়ে নাশকতার আগে গত ১৮ জুলাই ঢাকার নেটওয়ার্কে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নতুন সিমকার্ডের আভির্ভাব ঘটে। এগুলোর তথ্য উপাত্ত এবং সূত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে বিএনপি, ছাত্রদল, জামায়াত এবং শিবিরের চিহ্নিত তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীরা এই কয়েকদিন ঢাকার মধ্যেই ছিল।
২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। আগের দিন বিকেলে চিকিৎসারত অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ প্রসঙ্গে তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার এই তিনজনকে আমরা শুক্রবার রাতে নিয়ে এসেছি। তারা ফেসবুকে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছিলেন। তাদের একজনের বাবাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন।
আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে কেউ যদি কোথাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেন, আমাদের দায়িত্ব তাদের সেফটি-সিকিউরিটি দেওয়া। তাই তাদের সেফটি-সিকিউরিটি দিচ্ছিকোন প্রকার যাচাই বাছাইয়ের বালাই নেই সিসিটিভিতে মুখ দেখা গেলেই করা হতো গ্রেফতার। এমনকি আন্দোলন দেখতে বা আন্দোলনের সময় কোন কাজে বাড়ি থেকে বের হলেও তার ছবি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় তাহলেও তাকে গ্রেফতার করা হতো।
এই বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ হতে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, বিভিন্ন আন্দোলনের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হচ্ছে। সেই ক্যামেরায় কারও চেহারা দেখা গেলে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। মোবাইলের মধ্যে কোন আন্দোলনের ভিডিও ফুটেজ থাকলেও তাকে গ্রেফতারের আওতায় আনা হচ্ছে।
২৭ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে ২১ জুলাই দেওয়া আদালতের রায়ের পর সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করে তা প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ২৭ জুলাই অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন তিন দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় তারা। এসব দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান তারা।
দাবিগুলো হলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়, মামলা প্রত্যাহার করা এবং গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আন্দোলনকারীরা জানায়, ‘আন্দোলনের মূল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে প্রচার করছে সরকার। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল কমিশন গঠন করে এই সংকটের সমাধান করা, সেটি করা হয়নি।


