Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

বাধা উপেক্ষা করে পালন হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

বাধা উপেক্ষা করে পালন হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি

ফিরে দেখা : ২০২৪’র ৩২ জুলাই বাধা উপেক্ষা করে পালন হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি

Swapno

ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩১ জুলাইয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আসে ১ আগস্ট। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে নিজ দেশের ফ্যসিবাদ সরকারের পৈশাচিক ও আক্রোশমূলক মনোভাবের কারণে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলনকারীরা। তাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।


আন্দোলনকারীরা তখন জানায়, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই মাস চলতেই থাকবে। ফলে তারা ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই, ২ আগস্টকে ৩৩ জুলাই হিসেবে গণনা শুরু করেন। জুলাই মাস জুড়ের বিশেষ করে ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ভয়ংকর দিন-রাতগুলোর স্মৃতিচারণ করার উদ্দেশ্যে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ নামক কর্মসূচি পালন করা হয় ৩২ জুলাই। এই কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বাধা প্রদানসহ লাঠিপেটা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।


এই দিন অনেক নাটকীয় ঘটনার পর এবং অনেক আলোচনা-সমালোচনার মুখে ছেড়ে দেওয়া হয় ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে। অন্যদিকে ৩২ জুলাই বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়।


২০২৪ সালের ৩২ জুলাই (ক্যালেন্ডারের পাতায় যা ১ আগস্ট) শহীদ ও আহতদের নিয়ে স্মৃতিচারণের লক্ষ্যে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচী পালন করা হয়। আগের দিন ৩১ জুলাই সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যা, গণপ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচীর মধ্যে এই ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।


এই কর্মসূচি পালনকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ গ্রেফতার ও লাঠিপেটার মতো ঘটনা ঘটে। ৩২ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে এসব কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কোথাও কোথাও শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।


৩২ জুলাই বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ করা, ব্যাংক ও অন্যান্য হিসাব অবরুদ্ধসহ সব সম্পদ জব্দ বা আটক করা, সদস্যদের দেশ ত্যাগে বাধানিষেদ আরোপ করা, দলীয় প্রচারপত্র, পোস্টার, ব্যানার, ইলেকট্রনিক্স, ডিজিটাল বা অন্যান্য উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা, জামায়াত শিবিরের অথবা তাদের পক্ষে বা সমর্থনে যে কোন প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়।

নানা আলোচনা সমালোচনার পর ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্ত হওয়ার সমন্বয়করা হলেন, নূসরাত তাবাস্সুম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার। দুপুরের দিকে তাদের একটি মাউক্রোবাসযোগে বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।


দুপুরের আগে তাদের পরিবারের সাথে ডিবি কার্যালয় থেকে যোগাগো করা হয় বলে তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। ছেড়ে দেওয়ার আগে তারা ৩২ ঘন্টা অনশনে ছিল বলেও জানা যায়। এর আগে ২৬ জুলাই নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। পরের দিন ২৭ জুলাই সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ। ২৮ জুলাই মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে নূসরাত তাবাস্সুমকে তুলে নেওয়া হয়।


৩২ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ৯ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে’ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করেন।


এইদিন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করা হয়।


কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি জানায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি, হামলা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করে হত্যার বিচার দাবিসহ প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন