নারায়ণগঞ্জে লুট হওয়া মোট ১৫১ অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১১০টি
সাইমুন ইসলাম
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর দেশের অন্যান্য জেলার মতো নারায়ণগঞ্জেও থানা ও পুলিশ লাইনস থেকে অস্ত্র ও গুলি লুটের ঘটনা ঘটেছে। এখনও এসব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার সম্পূর্ণরূপে সম্ভব না হওযায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ রয়েছে।। জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের দুইটি থানা ও পুলিশ লাইন থেকে সর্বমোট ১৫১টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র লুট হয় আড়াইহাজার থানা থেকে যার পরিমান ১৩৭টি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে লুট হয় ৫টি এবং জেলা পুলিশ লাইন থেকে ৯টি অস্ত্র লুট হয়।
লুট হওয়া এসব অস্ত্রের মধ্যে এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে মোট ১১০টি অস্ত্র। থানাভিত্তিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,
আড়াইহাজার থানায় ১৩৭টি লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১০৮টি, এখনো নিখোঁজ ২৯টি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৫টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ২টি, নিখোঁজ ৩টি। পুলিশ লাইন থেকে লুট হওয়া ৯টির মধ্যে কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনো উদ্ধার হয়নি সর্বমোট ৪১টি অস্ত্র।
লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিলো, ৭ পয়েন্ট ৬২ (চায়না) রাইফেল ৮টি, ৭ পয়েন্ট ৬২ (চায়না) এসএমজি ১টি, ৭ পয়েন্ট ৬২ (চায়না) এলএমজি ১টি, ৭ পয়েন্ট ৬২ (চায়না) পিস্তল ৪টি, ৯ এমএম পিস্তল ৭টি, ১২ বোর শর্টগান ১৬টি এবং ৩৮ এমএম গ্যাসগান ৪টি।
গুলির হিসাব পুলিশের হিসাবনুযায়ী, লুট হওয়া মোট গুলির সংখ্যা ৯ হাজার ২৫টি। এরমধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৫০৭টি গুলি। এখনো ৭ হাজার ৫১৮টি গুলি উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়নি।
এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১,৪৮৭টি গুলির মধ্যে উদ্ধার ৪৮টি, উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৪৩৯টি গুলি। আড়াইহাজার থানায় ৬ হাজার ১১৯টি গুলির মধ্যে মধ্যে উদ্ধার ১ হাজার ৩১৯টি উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখন উদ্ধার সম্ভব হয়নি ৪ হাজার ৮০০টি গুলি।
পুলিশ লাইন থেকে লুট হওয়া ১ হাজার ৪১৯টি গুলির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১৪০টি, এখনো উদ্ধার বাকি ১ হাজার ২৭৯টি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী যুগের চিন্তাকে জানান, লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি গত এক বছরে কোথাও ব্যবহার বা প্রদর্শনের তথ্য পাওয়া যায়নি। অস্ত্র হাত বদলের সম্ভাবনা কম বলে তিনি মনে করেন। তার ভাষায় যারা লুট করেছে তারা সম্ভবত কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে পুলিশ, র্যাব ও যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, গত এক বছরে ১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৪০ রাউন্ড গুলিসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে।
লুট হওয়া অস্ত্র পুরোপুরি উদ্ধার সম্ভবপর না হওয়া প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘এক বছরে উল্লেখ করার মতো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের দাবি, অতি দ্রুত অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হোক। অপরাধী যে দলের হোক, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার, গণহত্যার দৃশ্যমান বিচারের পরই আমরা নির্বাচন চাই। কারণ, এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। বিশেষ করে রাইফেল ক্লাবের অস্ত্র, ১৯ জুলাই প্রদর্শিত অস্ত্রসহ কোনো অস্ত্রই উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
গত ২৬ জুলাই ুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গণঅভ্যুত্থানের সময়ে লুট হওয়া অস্ত্রের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা সব অস্ত্রগুলো এখনো উদ্ধার করতে পারিনি। অস্ত্রগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। নির্বাচনের আগে আরও অনেক অস্ত্র উদ্ধার হবে। নির্বাচন যাতে ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য আমরা চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির দিন ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা। লুট হয় পুলিশের কয়েক হাজার অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এখন সাধারণ মানুষের হাত থেকে এসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যাচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


