Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

টানবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাতে বসে মদের আসর

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

টানবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাতে বসে মদের আসর

টানবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাতে বসে মদের আসর

Swapno



# প্রতিদিন এই মদের আসরের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কনস্টেবল কর্নজিৎ সিংহ
# সেন ও লিকু থেকে ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর ও মুন্সির নামে ৩৫ হাজার টাকা মাসোহারা দেওয়া হয়
# বিষয়টি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী



সংবাদটি বিষ্ময়কর! শহরের কোলে অবস্থিত টানবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাতে বসে মদের আসর। খোদ পুলিশ সদস্যদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন ঘটনা। নারায়ণগঞ্জ শহরের সব চেয়ে আলোচিত ও পরিচিত এলাকা হচ্ছে টানবাজার। এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। একসময় যৌনপল্লি হিসেবে এই এলাকাটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলো। কিন্তু ১৯৯৯ সালে টানবাজার থেকে সেই যৌনপল্লিটি উচ্ছেদ করেন সরকার।


কিন্তু যৌনপল্লি উচ্ছেদ হলেও মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন এখনও সয়লাব সেই টানবাজার এলাকাটিতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই এলাকার প্রতিটি অলি-গলিতে বিক্রি হয় গাঁজা, মদ, বিয়ারসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য। টানবাজার এলাকার খেয়াঘাটের আশে-পাশ থেকে শুরু করে সুইপার পট্টি, র‌্যালীবাগান, মিনা বাজার, ডাইলপট্টি সহ বিভিন্ন গলিতে প্রতিদিন বসে মাদকের হাট। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদক সেবনকারীরা এখানে আসে মাদক সেবন করতে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অতি নিকটে এলাকাটি থাকার পরও মাদকসেবনকারী বা মাদকব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে পারছেন না পুলিশ প্রশাসন।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানবাজার এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের শেল্টারদাতা হিসেবে রয়েছে  খোদ পুলিশেরই কয়েকজন সদস্য। প্রতিদিন মাদকব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন সেই সকল পুলিশ সদস্যরা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ১০০ মিটারের কাছেই রয়েছেন টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। মূলত টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কাজ হচ্ছে সেই এলাকার মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু টানবাজারের পুলিশ ফাঁড়ির সকল সদস্যই ঘুমিয়ে দিনকাল পার করেন। সূত্র জানিয়েছে, টানবাজর পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সেন ও লিকু নামে দুইটি মদের দোকান।


মূলত সেই মদের দোকানগুলোতে একমাত্র মদ সেবন করার কথা লাইসেন্সকারীদের। কিন্তু মদের দোকানগুলো লাইসেন্স ছাড়ায় প্রতিদিন শত শত লিটার মদ বিক্রি করে থাকেন। সদর থানা বা টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির নাকের ডগায় মদের দোকানগুলো থাকলে কোন ব্যবস্থা নেন না পুলিশ সদস্যরা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিমাসে মদের দোকানগুলো থেকে মোটা অংকের মাসোহারা তোলেন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন সদস্য জানান, টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা’র নামে প্রতি মাসে সেন ও রিকু নামে দুটি মদের দোকান থেকে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা মাসহারা নেওয়া হয়।  সেই দু’টি মদের দোকান থেকে টানবাজার ফাঁড়ির মুন্সি মাহামুদুল হাসান নেন ১৫,০০০ (পনের হাজার) টাকা। এছাড়াও প্রতিদিন ডিউটি ফের্সের খরচ নামে নেওয়া হয় ৩০০ টাকা। কিন্তু সেই টাকা ইন্সপেক্টর ও মুন্সি ছাড়া অন্য কোন পুলিশ সদস্য পান না।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে,  টানবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে বড় কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে মদের আসর বসান কনস্টেবল শ্রী কর্নজিৎ সিংহ। বাহির থেকে নারায়ণ নামে একজন মাদক সেবনকারীর মাধ্যমে মদ পান করেন কনস্টেবল শ্রী কর্নজিৎ সিংহ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় কর্নজিৎ সিংহের শেল্টারে নারায়ণ ফাঁড়ির ভেতর ও বাহিরে নদীরপাড় বা আশে-পাশেস্থানে মদপানের আসর বসানো হয়।


এবিষয়ে টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমার ফাঁড়িতে কোন মদের আসর বসে না, পুলিশ সদস্য মদ খাবে, সেটা হতে পারে না। এই বিষয়টি আমি দেখবো।’


এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী যুগের চিন্তাকে জানান, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন