নদী পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির শেষ নেই

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

নদী পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির শেষ নেই
শীতলক্ষ্যা নদীর খেয়া ঘাট গুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল ফেরীঘাট থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আসলেও মানুষ চলাচলে কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। এতে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর এক নং সেন্ট্রাল ফেরীঘাটে কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও উদাসীনতায় নদী পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে কয়েক দিন যাবত টানা বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রী ছাউনি থাকলেও মানুষ দাড়াতে পারছে।
পুরো ছাউনি জুড়ে পানি পড়ে। মানুষ দৌড়ে এসে বা গাড়ি থেকে নেমে যাত্রী ছাউনিতে দাড়িতে ভিজে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছে বেশী। ছাউনি, পল্টন ও জেটি সংস্কারে প্রতি বছর বরাদ্ধ থাকলেও তা কাজ না করে বা নাম মাত্র কাজ করে পুরোটাই সংশ্লিষ্টরা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দরকে ভাগ করে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদী পারাপারে খেয়া ঘাট গুলোর অন্যতম হচ্ছে বন্দর এক নং সেন্ট্রাল ফেরীঘাট। একই এলাকায় লঞ্চ টার্মিনাল, বাস স্ট্যান্ড, রেল ষ্টেশন ও বড় বড় কয়েকটি বাজার থাকায় এ ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেশী হয়ে থাকে। এখন এ ঘাট দিয়ে নদী পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এ ঘাটটি চলতি অর্থ বছরে টোল আদায়ের জন্য ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। রোদ, বৃষ্টি ঝড়ের সময় যাত্রীদের দাড়ানোর জন্য নদীর দু’পাড়েই যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে।
পাকা পিলারের উপরে টিন দিয়ে ছাউনি দুইটি নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর ভাঙ্গা, নষ্ট বা ছিন্দ্র হওয়া টিন পরিবর্তন সহ সংস্কার করা কথা থাকলেও ২০২১ সালের পর আর সংস্কার করা হয়নি বলে জানা গেছে। পুরো ছাউনির টিন মরিচা ধরা, ভাঙ্গা, ছিদ্র হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাউনি জুড়ে পানি পড়ে। আর সম্প্রতি সময়ে গত কয়েকদিন যাবত প্রভল বর্ষনে কলের মত পানি পড়তে দেখা গেছে। ছাউনির কোথায়ও দাড়ানোর মত সুযোগ থাকে না।
এটা নদীর পশ্চিম পাড়ের যাত্রী ছাউনি। আর পূর্ব পাড়ের যাত্রী ছাউনি ভাঙ্গা থাকলেও পুরোটা দোকানীদের অবৈধ দখলে থাকে। এমন কি ছাউনি থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত জেটি দু’টির দু’পাশ অবৈধ ভাবে দখল করে বসানো হয়েছে দোকান পাট। একটির দুই পাশে মুরগীর দোকান থাকায় পয়:নিস্কাশন আর বর্জ্যে দুগন্ধে বমি আসার উপক্রম হয়ে পরে। আবার মুরগী কাটার রক্ত ছিটে মানুষের জামা কাপর নষ্ট হচ্ছে।
যা নিয়ে প্রতিনিয়তই অবৈধ দোকানিদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। অপর জেটির পাশে থাকা বাকরখানি দোকান থেকে আটা ময়দা উড়ে এসে যাত্রীদের জামা কাপর নষ্ট হয়। কোন কোন সময় চুলা থেকে আগুনের ফুলকি এসে যাত্রীদের জামা কাপড় নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়তই অবৈধ দোকানিদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা হয় বলে অভিযোগে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বৃষ্টির সময় মানুষের একটু দাড়ানোর সুযোগও নেই। ছাউনি জুড়ে পানি পড়ছে। জেটির এ পাশ দিয়ে আসার সময় জামাকাপরে রক্তের ছিটা আসে। আর ওপাশ দিয়ে আসার সময় আগুনের ফুলকি এসে জামাকাপর নষ্ট হচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই।
গার্মেন্টস শ্রমিক রাহেলা বেগম অভিযোগ করে জানান, নৌকা থেকে নেমে একটু দাড়াইছি, বৃষ্টিতে পুরা ভিজে গেলাম। জেটি দিয়েও ভাল ভাবে আসতে পারি না। আমরাত টাকা দেই এ টাকা কি হয় ?।
অপর শ্রমিক দিপালী জানান, নদী পারাপারে দুর্দশা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে আমাদের। আমরা নিরুপায়। দেশে কোন লোক নেই, কোন কর্মকর্তা নেই। থাকলে তারাত দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
এ ব্যাপারে ইজারাদার দিদার খন্দকার বলেন, আমরা যাত্রী ছাউনি সংস্কার ও জেটির পাশের দোকান গুলো তুলে দেয়ার জন্য বার বার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর এর বন্দর ও পরিবহন বিভাগ উপ-পরিচালক মো. মোবারক হোসেনের সাথে মোঠো ফোনে যোগাযোগ করলে জেটির দুই পাশের অবৈধ স্থানপনা বিষয়ে তিনি বলেন, জনগণের সার্থে খুব শিঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এরই মধ্যে সভা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাত্রী ছাউনি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেখার জন্য প্রকৌশন বিভাগ রয়েছে। তারপরও আমি বিষয়টি খুঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর এর বন্দর ও পরিবহন বিভাগ যুগ্ম-পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠো ফোনে কয়েকদিন কয়েকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।