ফতুল্লা মডেল থানায় ছয় মাসে ২৮৯ মামলা, খুন ১৫টি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
ফতুল্লা মডেল থানায় ছয় মাসে ২৮৯ মামলা, খুন ১৫টি
নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলোর একটি হলো ফতুল্লা মডেল থানা। শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা থানাধীন পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই থানা এলাকাকে দেশের অন্যতম ব্যস্ততম জনবহুল অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়। অসংখ্য গার্মেন্টস, শিল্প কারখানা ও কলকারখানা ঘিরে এখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার শ্রমিক কাজের জন্য ছুটে আসেন। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি এখানে ভাসমান মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ এবং ভাসমান মানুষের আধিক্যের কারণে অপরাধ প্রবণতাও অন্যান্য থানার চেয়ে অনেকটা বেড়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
থানা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ফতুল্লা থানায় মোট ২৮৯টি মামলা রুজু হয়েছে। মামলার ধরন ও সংখ্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই এলাকার অপরাধ প্রবণতা বহুমুখী এবং বেশ বৈচিত্র্যময়। মাদক মামলা সর্বোচ্চ : সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। গত ছয় মাসে মোট ৬৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে মাদক নিয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের বড় একটি অংশসহ ভাসমান মানুষের মধ্যে মাদক সেবন ও ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাদকাসক্ত হয়ে অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নারী নির্যাতন মামলা দ্বিতীয় স্থানে : দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায়। এ সংখ্যা ৪৮টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়ণ, দারিদ্র্য, পারিবারিক অশান্তি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। চুরি, খুন ও ডাকাতি মামলার চিত্র : চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধও এই এলাকায় ঘটছে নিয়মিত। পরিসংখ্যান বলছে, চুরির মামলা হয়েছে ১৬টি, খুন হয়েছে ১৫টি এবং ডাকাতি হয়েছে ২টি। ডাকাতির মামলা সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও চুরি ও খুনের মামলার সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি করছে।
গত ছয় মাসে অস্ত্র আইনে ৬টি মামলা এবং দস্যুতা সংক্রান্ত ৫টি মামলা হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, অপরাধচক্রগুলো মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবহার ও ছিনতাই-দস্যুতায় জড়িত। অন্যান্য মামলার পরিসংখ্যান : উপরিউক্ত মামলার বাইরেও ১৩৩টি বিভিন্ন ধরনের মামলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মারামারি, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সড়ক দুর্ঘটনা, কিশোর গ্যাং কার্যক্রমসহ নানা অপরাধ। মোট মামলার সারসংক্ষেপ করলে দেখা যায় এই ছয়মাসে মাদক মামলা হয়েছে ৬৩টি,নারী নির্যাতন মামলা ৪৮টি, চুরি মামলা ১৬টি, খুন এর মামলা ১৫টি, অস্ত্র আইনে মামলা ৬টি, দস্যুতা মামলায় ৫টি ও ডাকাতি ২টি।এছাড়াও অন্যান্য মামলা ১৩৩টি। সর্বমোট মামলা ২৮৯টি। ফতুল্লা এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, দিন দিন মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় ভাসমান মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, আর এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। অনেকে অভিযোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা প্রতিনিয়ত টহল ও অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে মাদক ও কিশোর গ্যাং দমনে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তবে শিল্পাঞ্চল ও জনবহুল এলাকা হওয়ায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, শুধু পুলিশি তৎপরতা বাড়ালেই অপরাধ কমানো সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, মাদকবিরোধী প্রচারণা জোরদার করা, তরুণদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা এবং ভাসমান শ্রমিকদের জন্য পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেওয়া জরুরি।


